করোনাভাইরাস: স্বাস্থ্য সনদ নিয়ে বিপাকে কুয়েতগামী যাত্রীরা
৫ মার্চ ২০২০ ১৭:৪০
ঢাকা: ফেনী থেকে ঢাকায় কুয়েত দূতাবাসে এসেছিলেন রবিউল ইসলাম। সোমবার (৯ মার্চ) দুপুরে তার কুয়েতে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু কুয়েত দূতাবাস থেকে গত ৩ মার্চ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ৮ মার্চের পরে যারা কুয়েত যাবেন, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সনদ নিয়ে যেতে হবে যে তারা করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত নন। ৮ মার্চের পর ওই সনদ ছাড়া কোনো বাংলাদেশিকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আরও ৯টি দেশের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
কুয়েত দূতাবাসের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সনদ কিভাবে পাওয়া যাবে, তা জানতে ফোন করেন নিকটাত্মীয় একজন চিকিৎসককে। তিনি জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) যেতে বলেন রবিউলকে। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) দুপুরে রবিউলকে দেখা গেল আইইডিসিআরে অপেক্ষা করছেন।
একই জায়গায় অপেক্ষমাণ দেখা গেল শরীয়তপুরের শেখ রফিককে। তারও ৯ তারিখের ফ্লাইটে কুয়েতে যাওয়ার কথা। বৃহস্পতিবার সকালে কুয়েত দূতাবাসে গেলে সেখান থেকে তাকে একটি ফরম দিয়ে আইইডিসিআরের ফোন নম্বর ও ঠিকানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়।
এমন নির্দেশনা পেয়েই দেশে ছুটি কাটাতে আসা কুয়েক প্রবাসীরা ভিড় জমিয়েছেন আইইডিসিআরে। তবে আইইডিসিআর বলছে, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। কারও স্বাস্থ্য সনদ দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। তারা কেবল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে।
শেখ রফিক সারাবাংলাকে বলেন, কুয়েত দূতাবাসে যোগাযোগ করলে তারা আইইডিসিআরের ঠিকানা দিয়ে এখানে আসতে বলেছে সনদের জন্য। বৃহস্পতিবার সকালেই তাই এসেছি এখানে স্বাস্থ্যসনদের জন্য। কিন্তু এখান থেকে বলছে, তারা (আইইডিসিআর) এ বিষয়ে কিছুই জানে না। কুয়েত দূতাবাসও তাদের কিছু জানায়নি। আমরা এখন কোথায় যাব? এখন টিকেট পাল্টাতে গেলে তো অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কুয়েতের যাত্রীদের সনদ দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, রোগতাত্ত্বিক নয়। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই কুয়েত দূতাবাস থেকে লোকজনকে পাঠানো হচ্ছে।
করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার একমাত্র উপায় হলো রক্ত অথবা লালার পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষা করা। বাংলাদেশে এই পরীক্ষার একমাত্র সুযোগ আছে আইইডিসিআরে।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, আমাদের এখানে লোকজন আসছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ার বিষয়ে সনদ নিতে, অনেকে ফোন করেও জানতে চাইছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, দূতাবাস এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগও করেনি। আর আামাদের দায়িত্ব হচ্ছে সার্ভেইল্যান্স করা এবং করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা। যার মধ্যে কোনো লক্ষণই নেই, তার জন্য এই পরীক্ষা করার কোনো প্রয়োজনই নেই। ওটা শুধু দাফতরিক বিষয়।
বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরা কুয়েত দূতাবাসের সঙ্গেও কথা বলছি। তারা আমাদের জানিয়েছে, তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে এ বিষয়ে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়তো আমাদের মন্ত্রণালয়কে বলবে। আমাদের মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।