হত্যার পর খালে ফেলে দেওয়া হয় লাশ, ৯ বছর পর জড়িতরা গ্রেফতার
৬ মার্চ ২০২০ ০১:০০
ঢাকা: চাঞ্চল্যকর সুজন (২৪) খুন হওয়ার ঘটনার ৯ বছর পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃতরা হলো- সুজনের সাবেক স্ত্রী আছমা আক্তার ইভা (৩২), ইভার দুই ভাই মো. আরিফুল হক আরিফ (৩৪) ও মো. রানা ওরফে বাবু (২৪)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) বিকেলে সারাবাংলাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. বশির আহমেদ। গত ১ মার্চ তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের মার্চ মাসে সুজন (২৬) নামে এক যুবককে হত্যা করে খালে ফেলে লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ৬ দিন পর খালে অর্ধগলিত অবস্থায় লাশ ভেসে উঠলে সেটি পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে প্রেরণ করে। সেই সঙ্গে থানায় একটি মামলা দায়ের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ সে যাত্রায় সফল না হওয়ায় মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিল পিবিআই। ’
‘গত ২৯ ফেব্রুয়ারি চাঞ্চল্যকর সুজন হত্যা মামলার সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে সুজনের সাবেক স্ত্রী আছমা আক্তার ইভাকে (৩২) দুপুর সাড়ে ১২টার সময় কুমিল্লার লাকসাম থানার মধ্য ইছাপুর গ্রামে তার বর্তমান শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ইভার দেওয়া তথ্যে তার দুই ভাই মো. আরিফুল হক (৩৪) ও মো. রানা ওরফে বাবুকে (২৪) ১ মার্চ রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়’, বলেন তিনি।
মামলার বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের এসপি বশির আহমেদ জানান, ২০১১ সালের ১৪ মার্চ সুজনের বাবা মাটির ঠিকাদারি ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মান্নান বিকাল ৪টার দিকে জানতে পারেন তার মেজ ছেলে সুজন (২৬) বন্ধু কুটির (২৫) সাথে বাসা থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সুজন বাসায় না ফিরলে আব্দুল মান্নান এর স্ত্রী হাফসা বেগম ছেলের মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পান। রাতে খোঁজ করে কোন সন্ধান না পেয়ে সকালে তার ছেলের বন্ধু কুটির বাসায় যান। কুটি জানায় ওইদিন মাগরিবের আযানের পর সুজনকে সবুজবাগ থানাধীন রাজারবাগ রেখে আসছে। তারপর হতে তিনি তার নিখোঁজ ছেলের খোঁজ করতে থাকেন। পরে গত ১৮ মার্চ দুপুর ২ টার সময় বিভিন্ন লোকজনের মুখে শুনেন সবুজবাগ থানাধীন দক্ষিণ রাজারবাগ বাগপাড়া শেষমাথা খালের ময়লা পানিতে কচুরী পানার সাথে ভাসমান অবস্থায় একটি অজ্ঞাত গলিত ও গলায় ফাঁস লাগানো লাশ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে সবুজবাগ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
সংবাদ পেয়ে আব্দুল মান্নান ও তার পরিবারের লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে উক্ত দেহের বর্ণনা দেখে লাশটি তার ছেলের নিশ্চিত হয়ে সনাক্ত করেন। তার ছেলে সুজন গ্রিলের মিস্ত্রির কাজ করতো। ২০০৮ সালে সুজন ইভাকে বিয়ে করে এবং ২০০৯ সালে তার স্ত্রী সুজনকে তালাক দেয়। তালাক দিলেও ইভার বাড়ির আশে পাশে যাওয়া আসা করতো ভিকটিম সুজন। ইভার প্রেমিক ফাইজুলসহ (২৫) ইভার ভাই আরিফ সুজনকে ঘটনাক্রমে দু’একবার মারপিটও করেছিল। ওই ঘটনার জের ধরে তার ছেলেকে হত্যা করা হতে পারে সন্দেহ করেন তিনি।
পরে আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং -৫৬। ওই মামলাটি প্রথমে সবুজবাগ থানা পুলিশ ও পরবর্তীতে ডিবি দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তদন্তে ঘটনার প্রকৃত রহস্য ও ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত পলাতক আসামি ইভা তার ভাই আরিফ ও বাবুকে পুর্নাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নিহত সুজনের বাবা নারাজির আবেদন করেন। পরে আদালত পিবিআইকে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআইয়ের বিশ্বস্ত গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হই আমরা। পরে মামলাটির তদন্ত তদারককারী অফিসার পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদার নেতৃত্ত্বে একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে সুজন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া আসামিদের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এসপি বশির আহমেদ।