ডিএসসিসি মার্কেটে পার্কিং স্পেসে দোকান, খালি নেই কোনো জায়গা
৬ মার্চ ২০২০ ১০:২৭
ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৮টি মার্কেটের পার্কিংয়ের জায়গা এখন দখলদারদের কবলে। এসব পার্কিং স্পেসে দোকান বরাদ্দ দেওয়ায় সেসব ব্যবহার হচ্ছে বাণিজ্যিক কাজে। ফলে মার্কেটের কাজে আনা গাড়িগুলোকে রাখতে হয় সড়কের ওপরে। এতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে ওই এলাকার সড়কগুলো। স্বাভাবিকভাবেই মার্কেটগুলো ঘিরে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। বিপাকে পড়ছেন গাড়ি নিয়ে আসা ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট, ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেট-১, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২, পল্টন শপিং কমপ্লেক্স, আহসান মঞ্জিল সুপারমার্কেটে, ঢাকা ট্রেড সেন্টারে, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্সে-১ এবং কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স-২-এর পার্কিং স্পেসে গাড়ি রাখার জন্য কোনো জায়গা খালি নেই। প্রতিটির পার্কিং স্পেসেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দোকান। শুধু পার্কিং স্পেস নয়, দখল করা হয়েছে মার্কেটে চলাচলের সিঁড়ি, গণশৌচাগারসহ সব জায়গা।
কুমিল্লা থেকে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে এসেছিলেন মো. মাঈনুদ্দিন। এলাকায় তার দোকানের জন্য মালামাল কিনে থাকেন এই মার্কেট থেকে। মাঈনুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, একটা মার্কেটে পার্কিং স্পেস তো দূরের কথা, সিঁড়ি দিয়েও হাঁটার অবস্থা নাই। সিঁড়ির ধাপে ধাপে মালামাল রাখা হয়েছে। দু’জন লোকও একসঙ্গে হাঁটা যায় না।
‘ট্রাকে করে এ মার্কেট থেকে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ বাজারে মাল নিমু। কিন্তু গাড়ি রাখতে হইছে মূল রাস্তায়। এইটার জন্য পুলিশ মামলা দিতে চাইছিল ট্রাকওয়ালারে। পরে আমি গিয়া পুলিশরে অনুরোধ করে বলছি, আধাঘণ্টার মধ্যে মাল ভরে চলে যামু। তাই আর মামলা দেয়নি,’— যোগ করেন মাঈনুদ্দিন।
তারই কথার সূত্র ধরে ওই মার্কেটে বিড়ি-সিগারেটের ফেরিওয়ালা রফিক বলেন, আগে মার্কেটের নিচে গাড়ি রাখার জায়গা ছিল। সেগুলোতেও এখন দোকান বসাইছে।
একই অবস্থা আহসান মঞ্জিল মার্কেট, কাপ্তানবাজার মার্কেট, পল্টন মার্কেট ও ফুলবাড়িয়া মার্কেটেও। সবগুলো মার্কেটের পার্কিং স্পেস, সিঁড়ি ও পাবলিক টয়লেটের জায়গাসহ খালি জায়গাগুলো দখল হয়ে আছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে এসব মার্কেটের একাধিক দোকানদার জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী অঙ্গ-সংগঠন যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও হকার্স লীগের নেতাকর্মীরাই মার্কেটের পার্কিং স্পেস দখলে জড়িত রয়েছেন। তারা সিটি করপোরেশনের অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে গত ৭ থেকে ১০ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন এসব জায়গা। পার্কিং স্পেসে ছোট ছোট দোকান বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
দোকানদাররা বলছেন, এ বিষয়ে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। গত ৫ বছরে একাধিকবার অবৈধ দখলে থাকা এসব স্পেস উদ্ধারের উদ্যোগ নিলেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযানে গিয়েও ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে। আবার আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়েও বের হয়ে গেছেন অনেকেই।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, মার্কেটের পার্কিং স্পেসের অবৈধ দোকান উচ্ছেদের জন্য ২০১৬ সালে ডিএসসিসির তৎকালীন প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ হোসাইনকে প্রধান এবং তৎকালীন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল ও আইন কর্মকর্তা আরিফ হোসেনকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আটটি মার্কেটের পার্কিং স্পেসে দুই হাজার ৩৫০টি দোকান চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেট-১-এ ৬৮, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২-এ ৫৩১, পল্টন শপিং কমপ্লেক্সে ১৯, আহসান মঞ্জিল (নবাববাড়ি) সুপারমার্কেটে ১৪৯, সুন্দরবন স্কয়ার সুপারমার্কেটে ২৩০, ঢাকা ট্রেড সেন্টারে ৩৪১, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্সে-১-এ ৩৫০ ও কমপ্লেক্স-২-এ ৩৬৬টি অবৈধ দোকান রয়েছে। দোকানগুলো উচ্ছেদের সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। সেই সিদ্ধান্ত পাসও হয়। কিন্তু ‘রহস্যজনক’ কারণে দোকানগুলো আর উচ্ছেদ হয়নি। উল্টো দোকানগুলোর বৈধতা পেতে দখলদাররা আদালত থেকে উচ্ছেদের স্থগিতাদেশ আনেন।
জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা একাধিকবার চেয়েছিলাম দখল হওয়া জায়গাগুলো উচ্ছেদের মাধ্যমে উদ্ধার করতে। কিন্তু সেখানে দোকান বসানো ব্যবসায়ীরা আদালতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। ফলে এ বিষয়ে এখন আদালতের রায়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।
এ প্রশ্নের জবাবে মেয়র খোকন বলেন, যদি করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা এসবের সঙ্গে জড়িত থাকেন, অবশ্যই তাকেও আইনের আওতায় আসতে হবে। যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই অন্যায় করে কেউ পার পাবে বলে মনে হয় না।
সাঈদ খোকনের মতো একই ধরনের কথা বলেন ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ সরদার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, পার্কিংয়ের জায়গা বেদখলের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই আপাতত আমরা আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছি। আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।