‘করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার মত যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে’
৮ মার্চ ২০২০ ০৪:৪৩
ঢাকা: জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার মত যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
শনিবার (৭ মার্চ) করোনাভাইরাস এর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ডা.মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে কিটের অপ্রতুলতা বিষয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে আমাদের কাছে এই মুহূর্তে দুই হাজারেরও বেশি কিট আছে। যে পরিমাণ কিট আছে তার চাইতে আমরা কম নমুনা পরীক্ষা করেছি। তবে কিট আনা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি শেষ হয়ে গেলে আবার আসবে। পাশাপাশি এ কথাও জানা থাকা দরকার কিটের অপ্রতুলতা বা অভাব কিন্তু বিশ্বব্যাপী। কারণ ভাইরাসের ধরন জেনে কিট তৈরি করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের যেমন কিট দিচ্ছে, আমরাও বিভিন্ন মাধ্যমে কিট সংগ্রহ করছি।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে আইইডিসিআরের সক্ষমতার কথা জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বলেন, এই বিষয়ে কোনো রকম অনিশ্চয়তার কোনো সুযোগ নাই। আমরা যে ভাইরাস নিয়ে কাজ করছি তা অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এই পরীক্ষা যেকোনো ধরণের ল্যাবরেটরিতে করা সম্ভব না। এটার জন্য একটি বায়ো সেফটি লেভেল আছে। যে লেভেলে না গেলে এই পরীক্ষাটি করা যাবে না।
তিনি বলেন, এরকম বায়ো সেফটি ল্যাবরেটরি সরকারি-বেসরকারি যেসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে আছে তাদের সাথে আমরা যোগাযোগ করে রেখেছি। যদি কোনো কারণে সহযোগিতা নেওয়ার প্রয়োজন হয় আমরা তাদের কাছ থেকে নেব। আমাদের যে মেশিন এবং কিট রয়েছে তাতে একদিনে অনেকগুলো নমুনা সংরক্ষণ করতে পারব।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুতি বিষয়ে ডা.ফ্লোরা বলেন, যদি অনেক রোগী হয় আমাদের যে মেশিন রয়েছে তাতে একটা মেশিনেই এক সঙ্গে ৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। এই পরীক্ষাটা করতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। বিভিন্ন ধরনের এরকম মেশিন রয়েছে ৮টি। তবে এই মুহূর্তে আমরা এই পরীক্ষাটি অন্য কোথাও করাতে দিতে পারব না। কারণ রোগী শনাক্ত হওয়ার পরে রোগীকে ফলো করা, কোয়ারেন্টিনে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই একটা জায়গা থেকে আমরা পরীক্ষা করছি। প্রতিটা রোগীর প্রতিটা কনট্যাক্ট যেন আমরা খুঁজে বের করতে পারি। স্থানীয় সংক্রমণ ঠেকাতে কনট্যাক্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ডা.মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে ইতোমধ্যেই আইসোলেশন ইউনিটের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। আমাদের কাছে সেইসব হাসপাতাল থেকে আইসোলেশন ইউনিটের ছবি পাঠাচ্ছে। ছবি দেখে কিভাবে আরও উন্নত করা যায় সে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া সিভিল সার্জন কর্মকর্তাও পরিদর্শন করে উপযুক্ত আইসোলেশন ইউনিটের ব্যবস্থা করছেন।
তিনি বলেন, বাড়িতে আইসোলেশন নিশ্চিত করতে পারলে মৃদু আক্রান্তদের বাড়িতে বসেই চিকিৎসা সম্ভব। সেজন্য আমরা সাবধান হব, কিন্তু আতঙ্কিত হব না। বিদেশ থেকে কেউ এলেই যে তার মধ্যে সংক্রমণ রয়েছে তা ঠিক নয়, কিন্তু সাবধানতা নিতে হবে। তাই বিদেশ থেকে এলে নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার এবং গাড়ির জানালা খুলে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধের অংশ হিসেবে গণপরিবহন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, বিদেশ থেকে কেউ এলেই যে তার মধ্যে সংক্রমণ রয়েছে তা ঠিক নয়, কিন্তু সাবধানতা নিতে হবে। তাই বিদেশ থেকে এলে নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার এবং গাড়ির জানালা খুলে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে কেউ এলে পরিবারের সবাইকে বিমানবন্দরে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যত কম মানুষ সেই গাড়িতে থাকবেন ততই ভালো।
আক্রান্ত দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৫৫ হাজারেরও বেশি রোগী। শুধুমাত্র মৃত্যুর সংখ্যার দিকে তাকিয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। মৃত্যুর সংখ্যার চাইতে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বা যাচ্ছেন। ওই দিকটা থেকে আসলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, যে ৮৯টি দেশে রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে লোকাল টান্সমিশন বা স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ হয়েছে ৪৩টি দেশে। এই ৪৩টি দেশের মধ্যে ৩৩টিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী পাওয়া গেছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ভুটান, ক্যামেরুন, সার্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
তিনি বলেন, ইটালিতে আমাদের নাগরিক যিনি আইসিইউতে আছেন তিনি ছাড়া বাকিদের অন্য কোনো রোগ ছিল না। যিনি আইসিইউতে আছেন তার আগে থেকেই শ্বাসতন্ত্রের রোগ ছিল। করোনাভাইরাসে চীনসহ এ পর্যন্ত আক্রান্ত দেশের সংখ্যা ৮৯টি। ভুটান, ক্যামেরুন, সার্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা নতুন করে আক্রান্ত দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৯৮ হাজার ১৯২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৮৭৩ জন নতুন রোগী যুক্ত হয়েছে। করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৯৯ জন।
তবে করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে এবং গুজবে কান না দিয়ে আইইডিসিআরের তথ্যে ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, গতকাল তিন জনসহ মোট ১১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের কারও শরীরে এখন পর্যন্ত কোভিড ১৯-এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. আমীনুল হাসান।
সারাবাংলা/এসবি