Saturday 26 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চোখের মন্দির


৯ মার্চ ২০২০ ০০:০৫ | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২০ ১৭:৪৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরা আলাপ করছিলাম, আমাদের দেশে ভালো ছাত্ররা অনেকেই চিকিৎসক হতে চান না। অনাগ্রহের কারণ জানতে চাইলে অনেক চিকিৎসকই বলেন, চিকিৎসা পেশার মধ্য দিয়ে দেশসেবার কাজে যুক্ত থাকার যে সুযোগ এক সময় ছিল, সেই পরিবেশ আর নেই। কিন্তু ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করে, চিকিৎসকদের প্রতি রোগীদের অগাধ ভালোবাসা দেখে, রাষ্ট্রের বড় কর্তাদের শ্রদ্ধা দেখে মনে হলো— না, অনেক অবক্ষয়ের মাঝেও চিকিৎসা পেশা তার মর্যাদা হারায়নি, মানুষের কাছে তার আবেদন ম্লান হয়নি।

চিকিৎসা পেশায় বাজার অর্থনীতির যুগে একটা একটা নির্মম পেশাদারিত্ব ঢুকে পড়েছে ঠিকই, তবে এখনো অনেক চিকিৎসকই ঠিকঠাক মানুষের জন্য কাজ করছেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- বিমানবন্দর থেকে প্রান্তিক এলাকা— করোনায় সতর্ক গোটা ভারত

‘দ্য টেম্পল অব দ্য আই’ বা চোখের মন্দির— চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ের এমন পরিচয়ই বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরলেন সেখানকার চিকিৎসকরা। কেন মন্দির, তার উত্তর দিলেন তারা। এই বাজার অর্থনীতির যুগে সবকিছু লাভ-ক্ষতির হিসেবে দেখা হয় বলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর পরিবারের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অশান্তি নিত্যনৈমিত্তিক। এর অন্যতম কারণ চিকিৎসক তথা চিকিৎসার সংশ্লিষ্ট মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রোগীর আস্থার অভাব। সেই আস্থার জায়গাটি নির্মাণ করেছেন ডাক্তার বদ্রিনাথ তার এই হাসপাতালে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়ালেখা শেষ করে এসে তামিলনাড়ু রাজ্যের সাধারণ মানুষের কথা ভেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন এই হাসপাতাল, যেটি এখন এশিয়ার অন্যতম সেরা চক্ষু হাসপাতাল ও চক্ষু রোগের গবেষণা কেন্দ্র।

চেন্নাইতে শুরু হয়ে এখন ভারতের আটটি অঞ্চলে ছড়িয়েছে এর শাখা। প্রশ্নের উত্তরে ডাক্তার পার্থ প্রতীম মজুমদার বাংলায় উচ্চারণ করে জানালেন, ‘এখনই কোনো পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ার। যদিও বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫৬ হাজার রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, যাদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশি এখানে অপারেশন করিয়ে থাকেন।’

শঙ্কর নেত্রালয়ের পরিচালক গিরিশ শিভা রাও ও চিকিৎসক পার্থ প্রতীম মজুমদার

এই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার আগেই চট্টগ্রাম থেকে আসা একজনের সঙ্গে একজনের দেখা হলো, যিনি তার কিশোর ভাইকে নিয়ে এসেছেন। এই কিশোর ফুটবল খেলতে গিয়ে দুই চোখে আঘাত পেয়েছে। চট্টগ্রামের যে চিকিৎসক তাকে বলেছিলেন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ, সেখানে এখানকার চিকিৎসকরা পুরো ভালো হয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। আর তিনি সবচেয়ে সুখী এখানকার চিকিৎসক আর নার্সদের ব্যবহারে। তার এক কথা— চট্টগ্রামে নিজেকে যখন অসহায় লাগছিল ডাক্তারের ব্যবহারে, তখন এখানে এসে মনে হলো, ‘আমিও মানুষ’।

ডাক্তার পার্থকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, চিকিৎসকের ওপর আস্থা কমছে কেন আমাদের মতো দেশগুলোতে? তিনি উত্তরে জানালেন, এটা সামাজিক অবক্ষয়। আর হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার গিরিশ শিভা রাও বললেন, তারা আসলে তথাকথিত চিকিৎসা করান না। তার ভাষায়, শঙ্কর নেত্রালয় রোগীর আর্থিক সামর্থ্য, রোগের ইতিহাস, রোগীর পছন্দের মতো বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেয়। কোনো কিছুই চাপিয়ে দেয় না। সবার জন্য সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা— এই ব্রত নিয়েই সমাজের নানা ব্যাক্তি আর প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এগিয়ে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশের চক্ষু চিকিৎসক ও এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে জানিয়ে পার্থ জানালেন, চিকিৎসা সেবায় প্রযুক্তি এখন বড় ভূমিকা রাখছে। ভিডিওতে দেখলাম, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সঙ্গে সহযোগিতায় উদ্ভাবিত হয়েছে দু’টি বাসের সমন্বয়ে আধুনিক গতিশীল চক্ষু হাসপাতাল, যা বিশেষজ্ঞ চিকিসক নিয়ে নিজেই উপস্থিত হয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা থেকে বহু দূরে বাস করা প্রান্তিক মানুষের কাছে।

শঙ্কর নেত্রালয় এমন একটি হাসপাতাল, যেখানে চিকিৎসা মানে শুধু সার্জারি বা কাটাকুটি নয়। তার চেয়ে অনেক বেশি হলো চিকিৎসার প্রতি রোগীর আস্থা আর সাহস। চিকিৎসকের আসল কাজটা হলো রোগীর আপন হয়ে ওঠা।

চোখের অপারেশন চোখের সেবা শঙ্কর নেত্রালয়