গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমান, সম্পদ ও সচ্ছলতা বেড়েছে বলে তারা দুর্যোগপূর্ব সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্যোগ ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ এই সেমিনারের আয়োজন করে।
আগে আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বন্দরকেন্দ্রীক ছিল উল্লেখ করে আতিউর রহমান বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম হওয়া উচিত এলাকাভিত্তিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা বিষয় খেয়াল করেছি, এতগুলো আশ্রয়কেন্দ্র করার পরও মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। এর একটা কারণ হলো, তাদের জীবনমান বেড়েছে, সচ্ছলতা-সম্পদ প্রভৃতি বেড়েছে। তাই তারা সেগুলো ছেড়ে যেতে চায় না। এই চ্যালেঞ্জটি আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস কিংবা এই ধরনের কিছু স্ট্রাকচার দাঁড় করানোর প্রয়োজন আছে, যাতে করে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা যায়।’
বঙ্গবন্ধুর দুর্যোগভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সত্যিকার অর্থেই একজন রূপান্তরবাদী নেতা ছিলেন। যাদের তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তিনি তাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতেন। ৭০-এর নির্বাচনের আগে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়। বঙ্গবন্ধু তখনই নিজের নির্বাচনি প্রচারণা ফেলে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা চলে আসেন এবং ছুটে যান বিপন্ন মানুষের কাছে।’
সেমিনারে ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুই ধরনের দুর্যোগ নিয়েই কাজ করেছিলেন। বিশেষত একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নয় মাসের যে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, তাকে আমরা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলতে পারি। ওই দুর্যোগ মোকাবেলায় যে মহামানব অগ্রগণ্য ছিলেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
প্রকৃতিক দুর্যোগ প্রসঙ্গে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে বঙ্গবন্ধুর কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু এগিয়ে আসেন। ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নেন। তিনি অবিরামভাবে কাজ করেছেন। কখনো মুসলীম লীগের অফিসে, কখনো মাঠেঘাটে খোলা আকাশে ঘুমিয়ে তিনি কাজ করেন।’
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয় জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস শোভাযাত্রা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান।
এছাড়া সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মহসিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন আবু মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেনসহ অনেকে।