অকালমৃত্যুর হার বেশি স্বর্ণকারদের, মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ
১১ মার্চ ২০২০ ০১:২৮
ঢাকা: বাংলাদেশে স্বর্ণকারদের অকাল মৃত্যুর হার বেশি। যেখানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর, সেখানে স্বর্ণকার হিসেবে যারা কাজ করেন তাদের তাদের গড় আয়ু মাত্র ৫৯ বছর। তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ, যার মধ্যে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ ও স্ট্রোক অন্তর্ভুক্ত। মারা যাওয়া স্বর্ণকারদের রোগের ইতিহাস থেকে জানা যায়, তাদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ কার্ডিওভাসকুলার ও ২০ শতাংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশে স্বর্ণকারদের মৃত্যুর কারণ নিয়ে করা এক গবেষণার ফলাফলে এই তথ্য দেখা যায়।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) বিএসএমএমইউ’র শহীদ ডা. মিল্টন হলে এই গবেষণার ফলাফল জানানো হয়। এই গবেষণা পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয়টির পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ।
ভারবাল অটোপসি পদ্ধতিতে করা এ গবেষণাটির প্রধান গবেষক ছিলেন ডিপিএইচআই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান। সহযোগী প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম।
ঢাকার মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, লালবাগ ও তাঁতী বাজার, মানিকগঞ্জের শিভালয় উপজেলা ও টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার স্বর্ণকারদের নিয়ে এ গবেষণা করা হয়।
গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া।
কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষণা কর্মকে সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনও গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বর্ণকারদের নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁদের কাজের পরিবেশ, দীর্ঘক্ষণ কাজ করা, জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাস ইত্যাদি বিষয় অন্তভুর্ক্ত করা জরুরি। আপনাদের গবেষণা স্বর্ণকারদের মৃত্যু নিয়ে অনেক তথ্য দিয়েছে। একইসঙ্গে অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছে। আমি আশা করবো ভবিষ্যতে আরও পূর্ণাঙ্গ ফলাফল আপনারা নিয়ে আসবেন।
বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো গবেষণা। স্বর্ণকারদের নিয়ে এটি একটি ভালো গবেষণা।
এসময় তিনি স্বর্ণকারদের পরিবেশগত, পারিবারিক, আর্থিক অবস্থার বিষয়েও গবেষণায় তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ ও বিএসএমএমইউ’র কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, স্বর্ণকারদের পেশাটি ও তাঁদের জীবনযাত্রাসহ খাদ্যাভাস হৃদরোগ ছাড়াও বক্ষব্যধির বিভিন্ন ধরণের রোগের সাথে যোগসূত্র রয়েছে। স্বর্ণকাররা পেশা ও ধূমপানের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ রেসট্রিকটিভ ও অবস্ট্রাকটিভ লাং ডিজিজেস বা বাধাজনিত শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়। এগুলো প্রতিরোধের জন্য ধূমপান পরিহার, মদ্যপান থেকে বিরত থাকা ও কাজের সময় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি।
অনুষ্টানে প্রধান গবেষক সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ খালেকুজ্জামান বলেন, স্বর্ণকারদের অকাল মৃত্যুর কারণ তাঁদের খাদ্যাভাস ও জীবনযাত্রা কিনা, অকাল মৃত্যুর কারণের সাথে স্বর্ণকারদের কাজের পরিবেশ, তাঁদের পেশা, দীর্ঘক্ষণ কাজ করার কতটা যোগসূত্র রয়েছে সেটা পরবর্তী আরো গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, মৃত স্বর্ণকারদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ কার্ডিওভাস্কুলার বা সিভিডি রোগে ভুগছিলেন। ২০ শতাংশ ছিলেন ক্যান্সার আক্রান্ত। তাদের গড় আয়ু ৫৯ বছর। ৭৫ শতাংশ স্বর্ণকার দুই বা ততোধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ, ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৩৫ শতাংশ হৃদরোগ এবং ২০ শতাংশ কিডনি রোগে ভুগছিলেন।
সম্প্রতি মারা যাওয়া এসব স্বর্ণকারের ৭০ শতাংশ নিয়মিত ধূমপান করতেন এবং ২০ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক গ্রহণ করতেন আর ৫০ শতাংশের মদ্যপানের অভ্যাস ছিল। এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি অসংক্রামক রোগগুলো যাচাইয়ে নিয়মিত স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম আয়োজনের সুপারিশ করেন গবেষকেরা।
অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন ডিপিএইচআই বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ শরিফুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডা. মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিডিডিআর,বির এমেরিটাস গবেষক ডা. মো. ইউনুস।