নার্ভাস ছিলেন মুশফিক
১৫ মার্চ ২০২০ ১৯:৪১
একে তো মৌসুমের প্রথম ম্যাচ, তার ওপর আবাহনীর মতো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দলে খেলা ও তার নেতৃত্ব দেওয়া। পরের এই দুটো অভিজ্ঞতাই মুশফিকুর রহিমের জন্য প্রথম। তাছাড়া যখন ক্রিজে এসেছেন ২৭ রানে নেই তিন সতীর্থ। তিনি নামার পরে আরও দুজন চলে গেলেন একেবারে মামুলি রানের সংগ্রহে। বোঝাই যাচ্ছে কতটা চাপ ঘিরে ধরেছিল আবাহনী ও তার দলপতিকে। তবে তাতে অবশ্য তিনি একবিন্দুও বিচলিত হননি। বরং ইস্পাতসম দৃঢ় মনোবলে উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রেখে ১২৪ বলে ১২৭ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলে দলকে পাইয়ে দিলেন ২৮৯ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। যা দিনান্তে দলটিকে ৮১ রানের উদ্ভাসিত জয়ানন্দে ভাসিয়েছে। তবে কাজটি সহজ ছিল না বলে জানালেন মুশি। কেন না তিনি ছিলেন ভীষণ নার্ভাস।
তার সেই নার্ভাসনেস এতটাই চরমে ছিল যে প্রথম রানটি তুলতে বল খেলেছেন ২৪টি! এক দিকে চাপ অন্য দিকে নার্ভাসনেস। দুইয়ের যোগফলে যেখানে তার উইকেটে থাকা নিয়েই ছিল সংশয় সেখানে চাপকে দূরে সরিয়ে মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই তুল নিলেন সেঞ্চুরি। কি করে সম্ভব হল? বিজয়ীয় হাসিমাখা মুখে মিস্টার ডিপেন্ডেবল জানালেন, চাপকে উপভোগ করেন বলেই এত কঠিন কাজটিও অবলীলায় করে ফেলেছেন।
রোববার (১৫ মার্চ) মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ২০২০-২০২১ মৌসুমের প্রথম ম্যাচ শেষে সংবাদ মাধ্যমের সামনে নিজেই কথাগুলো জানালেন।
বিদগ্ধ মুশি বললেন, ‘একটু নার্ভাস ছিলাম। কারণ এটা প্রথম ম্যাচ। আর আবাহনী সবসময় চ্যাম্পিয়ন দল করে। সবসময় আমি এই চাপগুলো উপভোগ করি। এখান থেকে আপনি যখন উতরে যাবেন আপনাকে সবসময় সবার থেকে দুই ধাপ এগিয়ে দেবে। শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটেই না, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও যেন দলে আমার অবদান সবসময় বেশি থাকে সেই চেষ্টা করি। অধিনায়ক হিসেবে সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চাই।’
এদিন মিরপুর শের-ই বাংলায় টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মোটেও ভাল করতে পারেনি টিম আবাহনী। রনি হোসেন, জয়নুল ইসলামদেরর আক্রমণাত্মকে বোলিংয়ে ৬৭ রানে টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চলে যায় পুরোপুরি ব্যাক ফুটে। ঠিক তখন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, মুশি। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে সঙ্গে নিয়ে খেলেন ১৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন এক ইনিংস। এতে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে দলকে পৌঁছে দেন ২২০ রানের কোটায়। এর মধ্যে নিজে তুলে নেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের ১৩তম শতক। শতকটি হাঁকাতে তিনি বল খেলেছেন ১১১টি।
তবে এখানেই থামেননি দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং রথ ছুটিয়েছেন আরও বড় সংগ্রহের দিকে। ইনিংসের শেষ বলটি পর্যন্ত উইকেটে থাকলে হয়তো সেটা অসম্ভবও ছিল না। কিন্তু হয়নি। জহুরুল ইসলামের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন রনি হোসেনের হাতে। তবে ক্রিজ ছেড়ে যাওয়ার আগে নামের পাশে যোগ করেছেন ১২৭ রান। যা সংগ্রহে তিনি চার মেরেছেন ১১টি ও ৬ চারটি। ১০২.৪১ স্ট্রাইক রেটে তিনি এ রান তুলেছেন।
ম্যাচ উইনিং এই ইনিংসটির পেছনে মোসাদ্দেক হোসেন সৈতকের সঙ্গে জুটিটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানালেন আবাহনী কাপ্তান।
‘সবচে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মোসাদ্দেকের সঙ্গে আমার জুটি। সাইফউদ্দিন ভালো ব্যাটিং করেছে। এই উইকেটের প্রথম দিকে শুরুটা সহজ ছিল না। তবে যা হয়েছে ভালো। আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে মোসাদ্দেক, পরে সাইফ উদ্দিন।’
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে এবারই প্রথম আবাহনীর জার্সি গায়ে নেমেছিলেন মুশফিকুর রহিম। নেমেই করলেন বাজিমাত। ১২৪ বলে মিস্টার ডিপেন্ডেবল খেললেন ১২৭ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। তাতে ইনিংসের শুরুর দৈন্য দশা কাটিয়ে আবাহনী পেল ৭/২৮৯ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। জয়ের জন্য ২৯০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পারটেক্স স্পোটিং ক্লাব গুটিয়ে গেল ২০৮ রানে, আট বল বাকি থকতেই। ৮১ রানের দুর্দান্ত জয়ে ২০২০-২০২১ মৌসুমের শুরু করল আবাহনী।