Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাবেয়া-রোকাইয়ার বিষয়টি জটিল জেনেই এগুচ্ছি: মেডিকেল বোর্ড


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:৫৬

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জোড়া মাথার দুই শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার বিষয়টি শুরু থেকেই অত্যন্ত জটিল। ওর বাবা-মাকেও সব কথা বলা হয়েছে। আপনাদেরকেও (সংবাদকর্মী) আমরা সব বলছি। সবার কাছে সবকিছু প্রকাশ করেই ওদের চিকিৎসার পথে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমরা সবাই মিলে আমাদের সর্বোচ্চটুকু দেব বলে অঙ্গীকার করছি। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার প্রথম ধাপ এনজিওগ্রাম শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসায় গঠিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।

পাবনার চাটমোহরের অমৃতকুণ্ডু গ্রামে জন্ম নেওয়া জোড়ার মাথার শিশু রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসায় ২১ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দুই শিশুর এনজিওগ্রাম করা হয়। এনজিওগ্রাম শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাদের চিকিৎসার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।

ওই শিশুর চিকিৎসার ভার বহন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ওই দুই শিশুর চিকিৎসা শুরু করতে সাহস পাচ্ছি। তাদের অজ্ঞান করা খুব কঠিন কাজ ছিল কিন্তু অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে তার দল খুব সফলভাবে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছে। আজকে আমরা মূল চিকিৎসার প্রথম ধাপ অতিক্রম করলাম। তার মানে এই না পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করেছি, আমাদের যেতে হবে বহুদূর-চিকিৎসা মাত্র শুরু হলো।

বিজ্ঞাপন

ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘আজকে দেখেছি শিশু দুটির মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে। দুইটা জোড়া মাথা একসঙ্গে লাগানো, তাদের মাথার রক্ত চলাচলটা আমাদের আলাদা করতে হবে। তা না হলে এটি কোনোদিনও পৃথক করা যাবে না।’

পুরো চিকিৎসা শেষ হতে বছর খানেক সময় লাগবে বলে জানান সামন্ত লাল সেন।

মেডিকেল বোর্ডের অপর সদস্য এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এ প্রক্রিয়াতে অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগের চিকিৎসকরা একসঙ্গে টিম হয়ে কাজ করছে।’

‘ওদের ব্রেইন এক হয়ে আছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ‘দুই শিশুর চিকিৎসার পরবর্তী ধাপগুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও বিপজ্জনক।’

“মাথার শিরা ধাপে ধাপে বন্ধ করব, স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচলের রাস্তা পরীক্ষা করে দেখব বিকল্প শিরা রয়েছে কি না। প্রথমে তাদের রক্তনালী পৃথক করার পর ‘স্ট্রাকচারাল সেপারেশন’ অর্থ্যাৎ মাথা পৃথক করার কাজ করা হবে। আমরা শিরা বন্ধ করে দেখতে চাই, তাতে শিশু দুটি কমর্ফোটেবল থাকে কি না- এ জন্য আমরা সময় নেব” বলেন মেডিকেল বোর্ডের এ সদস্য।

‘আজ এনজিওগ্রামের পর আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে সবাই মিলে পর্যবেক্ষণ করেছি, কারণ এ ধরনের প্যাথলজি আমরা সচরাচর দেখি না’ মন্তব্য করেন ডা. শফিকুল ইসলাম।

রাবেয়া-রোকাইয়ার অস্ত্রোপচারের জন্য হাঙ্গেরি থেকে এসেছে্ন অ্যান্ডোভাসকুলার সার্জন স্টিফেন হুডোক। তিনি বলেন,  ‘এটা অনেক কঠিন এক ডায়াগনোসিস। আমরা আগামীকাল চিকিৎসার দ্বিতীয় ধাপে যাব।’

‘চিকিৎসকরা কতটুকু আশাবাদী’ এমন প্রশ্নে বার্ন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, ‘এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে আগে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো তাতে মৃত্যু হার ছিল ৮০ শতাংশের মতো। কিন্তু বর্তমানে দুইটি পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। একটি হলো ‘স্ট্রাকচারাল সেপারেশন’ অপরটি ‘ফাংশনাল সেপারেশন।’

বিজ্ঞাপন

স্ট্রাকচারাল সেপারেশন কনসেপ্টের মাধ্যমে এ ধরনের শিশুদের ভালো ফল আসা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাবেয়া-রোকাইয়ার বেলায় আমাদের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

যদি তাদের মাথা আংশিক জোড়া থাকত তাহলে চিকিৎসার বিষয়টি অনেক সহজ হতো। কিন্তু ওদের মাথা পুরোটাই জোড়া লাগানো। সুতরাং ওদের বিষয়টি ‘কমপ্লেক্স অ্যান্ড কমপ্লিকেটেড’ বলেন ডা. আবুল কালাম।

হাঙ্গেরি থেকে আসা অপর নিউরো সার্জন অ্যান্ড্রাস চোকাই বলেন, ‘ওদের চিকিৎসার প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপজ্জনক। খুব সম্ভবত, আগামী কালের ধাপটি হবে সংকটপূর্ণ। সৃষ্টিকর্তার কাছে এখন শিশু দুটির জন্য প্রার্থনা করতে হবে।’

গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু দুটিকে নিয়ে আসেন তাদের বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা তাসলিমা খাতুন। তার আগে বেশ কয়েকবার তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আসেন।

২১ ফেব্রুয়ারি আবারও রাবেয়া-রোকাইয়াকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসেন দুই শিশুর বাবা মা।

শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার বয়স ১ বছর ৭ মাস।

সারাবাংলা/জেএ/একে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর