শিশুদের জন্য বাবাকে নিয়ে চিঠি শেখ হাসিনার
১৭ মার্চ ২০২০ ০৮:৫৮
ঢাকা: শেখ মুজিবুর রহমান। একটি নামই তো শুধু নয়, একটি ইতিহাস। বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার নাম যে এটি। সেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আজ। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম যে ‘খোকা’র, আজ তার জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন মুজিববর্ষের সূচনা।
যে শেখ মুজিব জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশের, সেই শেখ মুজিব ছিলেন শিশুদেরও প্রিয় আপনজন। আর তাই তো তার জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। সেই শিশু দিবসে জাতির পিতার যে কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠি লিখেছেন শিশুদের উদ্দেশে। লিখেছেন বাবার কথা, দেশের কথা।
মুজিববর্ষের সূচনাদিন আজ মঙ্গলবার সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশু শিক্ষার্থীদের এই চিঠি একযোগে পাঠ করার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সে কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে আবেগঘন সেই চিঠি পৌঁছে গেছে স্কুলে স্কুলে, শিক্ষার্থীদের হাতে।
চিঠিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতি কী লিখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা? এককথায় বলতে গেলে তুলে ধরেছেন তার পিতাকে, জাতির পিতাকে, জাতির পিতার আদর্শকে। সেই চিঠি হুবহু তুলে ধরা হলো সারাবাংলা’র পাঠকদের জন্য—
ছোট্ট সোনামণি,
আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিও। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম ও ভাইবোনদের স্নেহ পৌঁছে দিও। পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো।
আজ ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের এদিনে বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা।
দুঃখী মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। বারবার কারাবরণ করেছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করতো। অধিকারহারা দুঃখী মানুসের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন— তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।
২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশ এই জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছে। সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
প্রিয় বন্ধু,
ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে জাতির পিতাকে। তাঁর নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের সন্ধানে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তাঁরই ত্যাগের মহিমায়।
সোনামণি,
জাতির পিতার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়। পিতা ঘুমিয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ায় সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তিনি শান্তিতে ঘুমান। তাঁর বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
আমরা জেগে রইবো তার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে মানুষ— প্রজন্মের পর প্রজন্ম— তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। জাতির পিতার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।
তোমরা মন দিয়ে পড়ালেখা করবে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবে।
জয় বাংলার জয়, জয় মুজিবের জয়, জয় বঙ্গবন্ধুর জয়।
ইতি
তোমারই
শেখ হাসিনা