করোনা সতর্কতায় আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী
১৯ মার্চ ২০২০ ১৭:৩৫
ঢাকা: সারাবিশ্বের মতো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এখন বাংলাদেশেও আতঙ্ক তৈরি করেছে। এরইমধ্যে ১৪ জনের মতো করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করেছে আইইডিসিআর। তাদের মধ্যে একজন মারাও গেছেন। করোনা প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মেনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীতেও করোনা সতর্কতা মেনে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।
বুধবার (১৮ মার্চ) বিকেলে আন্তঃবাহিনী পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সরকার যেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে, আমরাও তাই প্রতিপালন করছি। সরকারের একটা পার্ট আমরা। নিজেরা স্ব স্ব জায়গা থেকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সিএমএইচে কোনো রোগী এলে সে বিষয়ে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া আছে। তা ছাড়া করোনা প্রতিরোধে সরকার যে কোনো নির্দেশনা দিলে তা পালন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিজের অবস্থান থেকে মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ নানা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া বাহিনীগুলোর স্ব স্ব স্বাস্থ্য টিম কাজ করে যাচ্ছে। পরিস্থিতি যাই হোক আমাদের কাজ করে যেতে হবে।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পরিচালক (প্লানিং অ্যান্ড অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ আশিকুর রহমানের কাছে করোনা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। সবাইকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। সবাই নির্দেশনা মেনেই কাজ করছে।’
বাহিনী হিসেবে সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছাকাছি থেকে দায়িত্ব পালন করে থাকেন আনসার সদস্যরা। তারা পুলিশের সঙ্গে থেকে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রজেক্ট সমূহে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন আনসার সদস্যরাও। তবে করোনা প্রতিরোধে তারাও সচেতন হয়েছেন। মুখে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন না এ মুহূর্তে। রাজধানীতে বেশ কয়েকজন আনসার সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
করোনা প্রতিরোধে সদর দফতরের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা বা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানতে আনসার ভিডিপি সদর দফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদকে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
করোনা প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে পুলিশ বাহিনীতে। স্ব স্ব স্থানে থেকে নিজেই নিজের প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন পুলিশ সদস্যরা। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। দিনে কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছেন। মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন। বিনা কারণে বাইরে বের না হয়ে ঘরেই অবস্থান করছেন।
ডিএমপির পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) মাহবুব আলম বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা করোনা মোকাবিলায় নিরাপদে থাকতে বলেছেন। যেহেতু দায়িত্ব বন্ধ করা যাবে না সেহেতু দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় নিজেই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মুখে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছেন।’
করোনা প্রতিরোধে গৃহীত ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া শাখার পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় পুলিশ সদর দফতরে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। প্রয়োজনে কেউ প্রবেশ করলে জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুলিশের সব ইউনিটকে সবসময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে বলা হয়েছে। কেউ অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।’
করোনা প্রতিরোধে ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের কী নির্দেশনা দিয়েছেন জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সবাইকে নিজ নিজ নিরাপদ রাখার কথা বলা হয়েছে। পুলিশ একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী। যত নির্দেশনা থাকুক না কেন বড় নির্দেশনা হচ্ছে সরকারের আদেশ বাস্তবায়ন করা। জনগনের নিরাপত্তা দেওয়া। সবার মতো পুলিশ সদস্যরা যদি বাইরে বের না হয়, রাস্তায় রাতদিন নিরাপত্তা না দেয়, তাহলে নিরাপত্তার আশঙ্কা থেকেই যায়। অপরাধীরা অপরাধ কর্ম শুরু করবে, সে জন্য পুলিশ যতটা পারবে দায়িত্বে থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখবে। মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একে অপরের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে।’
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম শাহজাদা বলেন, ‘বিমানবন্দরেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির জায়গা। কারণ দেশে করোনাভাইরাসের আবির্ভাবই হয়েছে এ পথ দিয়ে। প্রবাসীরা এ পথ দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কতটা ঝুকি নিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। বিমানবন্দরে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের সকলেই মাস্ক পরেন, হ্যান্ড গ্লোবস ব্যবহার করছেন, পরিধেয় পোশাক নিয়মিত পরিষ্কার করছেন, জীবাণুনাশক ব্যবহার করছেন, বারবার হাত ধৌত করছেন এবং তাপমাত্রাও মাপা হচ্ছে।’