চসিক: আ.লীগ নেতারা বলছেন ‘সরে যান’, বিদ্রোহীরা বলছেন ‘না’
১৯ মার্চ ২০২০ ২০:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে ‘শেষ চেষ্টা’ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে দফায় দফায় বৈঠক করেও তাদের অধিকাংশকেই রাজি করানো যাচ্ছে না। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিদ্রোহীরা দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে যেতে রাজি হয়েছেন।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা অজুহাতে মাঠে সক্রিয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের অধিকাংশই নানা অজুহাতে বৈঠকে অনুপস্থিত থাকছেন অথবা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের মতো।
গত তিনদিন ধরে কয়েকদফা বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিদ্রোহীদের আবারও ডাকেন।
বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চুও ছিলেন।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কাউন্সিলর পদে যারা দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের বাইরেও কিছু প্রার্থী আছে। সে বিষয়ে আজকে বৈঠক করেছি। তারা একমত পোষণ করেছে যে, তারা আর প্রচারণা করবেন না। দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন এবং তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাবেন। প্রায় সবাই একমত হয়েছেন।‘
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘যেহেতু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় নেই, দল ও সভানেত্রীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে ওনারা নিজেরা প্রচার প্রচারণা থেকে বিরত থাকবেন এবং আমাদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাবেন। আর আমাদের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণাতে উনারা সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন।’
মেয়র বলেন, ‘এরইমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘাত হয়েছে, মামলা-পাল্টা মামলা হয়েছে। আহত হয়েছেন এমনকি গতকাল একজন নিহতও হয়েছেন। এই শঙ্কা থেকেই আমরা তাদের নিয়ে বসেছিলাম। যদি শঙ্কা না থাকতো তাহলে হয়ত এটি অন্যভাবেও হতে পারতো।’
কতজন বিদ্রোহী নির্বাচন না করার বিষয়ে একমত হয়েছেন, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতারা কোনো উত্তর দেননি।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমরা বলতে চাই তাদের সবার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আছে। তারা নিশ্চয় নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইবেন না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে কেউ কোনো ছাড় দেব না। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আশা করি সবাই দলের প্রার্থীর পক্ষে থাকবেন এবং নিজের প্রচারণা সংকুচিত করবেন। কেউ যদি সেটি না মানেন, তাহলে কিভাবে মানাতে হয় সেটা জানা আছে।’
সংবাদ সম্মেলনের পর অন্তত ১২ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে সারাবাংলার কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন নাম প্রকাশে রাজি হননি। অধিকাংশই জানিয়েছেন, তারা বৈঠকে যাননি। সবাই নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে না যাওয়ার কথা বলেছেন।
আলকরণ ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী তারেক সোলায়মান সেলিম বলেন, ‘আমার পায়ে সমস্যা, হাঁটতে পারছি না। সেজন্য বৈঠকে যাইনি। আমি নির্বাচন করব। যতই চাপ আসুক, নামব না।’
পাথরঘাটা ওয়ার্ডের অনুপ বিশ্বাস বলেন, ‘আমাকে ডেকেছিল, আমি যাইনি। অ্যারেস্ট করলে করবে, কিন্তু আমি নির্বাচন করব। এই মুহুর্তে সরে গেলে মানুষের কাছে বেইজ্জত হয়ে যাব। আমি তো আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই, আওয়ামী লীগের ধারেকাছেও নেই। আমাকে নিয়ে টানাটানি করছে কেন বুঝতে পারছি না।’
এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির চৌধুরী বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে আছি। এমনিতেই প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করে ঘরে বসে আছি। বৈঠকে যাইনি। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও কিনিনি। আমার বসে যাবার কোনো সুযোগ নেই।’
ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের প্রার্থী যুবলীগ নেতা হাসান মুরাদ বিপ্লব সন্ধ্যা ৭টার দিকেও গণসংযোগে ছিলেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি বৈঠকে গিয়েছিলাম মোশাররফ ভাইকে সালাম দেওয়ার জন্য। আমি নির্বাচন করবই। পেছনে যাবার কোনো সুযোগ নেই।’
রামপুর ওয়ার্ডের এস এম এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘ফোন করেছিল। শরীরটা খুব খারাপ। সেজন্য যাইনি। আমাকে কেউ ইলেকশন থেকে সরে যেতে বলেনি। আমি ইলেকশন করবই।’
সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আনজুমান আরা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পা মচকে গেছে। ফুলে গেছে। সেজন্য বৈঠকে যেতে পারিনি। আর আমার তো সরে যাবার সুযোগ নেই। জনগণ আমার নির্বাচন করে ফেলবে। আমি প্রচারণা বন্ধ করে দিলে তারা চালাবে। আমি ভোটকেন্দ্রে না গেলেও তারা ভোট দিয়ে আমাকে জিতিয়ে আনবে।’
সংরক্ষিত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রাধা রাণী দেবী বলেন, ‘আমি শেষ পর্যন্ত দেখব। মাঠে আমার অবস্থান ভাল। আমার সরে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়নের বাইরে প্রায় অর্ধশত প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, যাদের বিদ্রোহী বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ১২ জন বর্তমান কাউন্সিলরও নির্বাচন করছেন।