Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মশাবাহিত রোগের আতঙ্ক, দরকার সতর্কতা


২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৮:০৫

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাধারণত জুন মাস থেকে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়। বর্ষা মৌসুমেই বিভিন্ন ধরনের মশা রাজধানীসহ সারাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে থাকে। তবে রাজধানী ঢাকাতে এবার সে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে। ইতোমধ্যেই আশংকাজনক হারে মশার বৃদ্ধিতে ঢাকাবাসী রয়েছেন মশা ও মশাবাহিত রোগের আতঙ্কে।

অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে যে মশাগুলোর জন্ম হচ্ছে সেগুলো কিউলেক্স মশা। এ মশার কারণে তেমন কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি না থাকলেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

রাজধানী ঢাকার একাধিক এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু রাতের বেলায় নয়— দিনের বেলাতেও মশার কয়েল, স্প্রে, মশা মারার ব্যাট ব্যবহার করতে হচ্ছে। শিশুদের রাখতে হচ্ছে মশারির ভেতরে।

আর কেবল বাসা-বাড়িতেই নয়, গত বৃহস্পতিবার শাহজালাল বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের ফ্লাইট বিলম্ব হয় মশার কারণে।

উত্তরা ৭ নম্বরে সেক্টরে ‘উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে’র বিপরীত দিকে নিজের বাড়িতে থাকেন জেসমিন পাপড়ি। পুরো এলাকাতে মশার উৎপাত বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাত বছর ধরে উত্তরাতে থাকি। কিন্তু এবারের মতো মশা কখনো দেখিনি। স্প্রে, কয়েল, ব্যাট দিয়েও কাজ হয় না। রাতে মশারির ভেতরে মশার কারণে ঘুমানো যায় না। একইসঙ্গে বাসার সামনে ড্রেনের কাজ চলছে, ড্রেনটা খোলা বলে সেখানে মশার জন্ম হওয়াতে বোধ হয় আরও বেশি উৎপাত সহ্য করতে হচ্ছে।’

একই অবস্থার কথা জানালেন রাজধানীর গ্রিনরোডের আল-আমীন রোডের বাসিন্দা হাসান আজাদ। তিনি বলেন, ‘গত একমাসে মশার উৎপাত যে কী পরিমাণ বেড়েছে তার প্রমাণ মেলে প্রতি সপ্তাহে আমার একটি করে স্প্রে শেষ হওয়াতে। উৎপাত আরও বেড়েছে গত এক সপ্তাহে।’

বিজ্ঞাপন

মশার উৎপাতের কথা বললেন মগবাজারের ডাক্তারগলির লাবণী রহমান, মিরপুর দশের হোসনে আরা বিনুসহ আরও অনেকেই।

লাবণী রহমান বলেন, ‘প্রায় দুইমাস ধরে ডাক্তারগলির ভেতরের রাস্তার কাজ চলছে। রাস্তার কাজ চলাতে সুয়ারেজ লাইন খোলা। সেখান থেকেই মশার জন্ম হচ্ছে। একইসঙ্গে গত দুইদিনের বৃষ্টিতে বেড়েছে মশার পরিমাণ। কোনোভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মশা থেকে আবার কোন রোগের জন্ম হয় সেই ভাবনাতেই আছি।’

লাবণী জানালেন তার শংকার কথা, ‘ছোট-ছোট তিনটি সন্তান আমাদের। ফলে মশাবাহিত রোগের বিষয়ে আতঙ্কটা আরও বেশি।’

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যেসব মশা দেখা যাচ্ছে, সেগুলো কিউলেক্স মশা। এ মশা তেমন কোনো মারাত্মক রোগ ছড়ায় না, কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর সারাবাংলাকে এ বিষয়ে বলেন, “মশা রীতিমতো জনভোগান্তি বৃদ্ধি করে চলেছে। কিন্তু এর মধ্যে বেশিরভাগ কিউলেক্স মশা। এ মশায় তেমন কোনো মারাত্মক রোগ ছড়ায় না কেবল ফাইলেরিয়া ছাড়া। কিন্তু সেগুলোও ঢাকার বাইরে।’

‘কিউলেক্স মশা দিয়ে ঢাকায় মারাত্মক রোগ ছড়ানোর সুযোগ কম’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে মশা নিয়ন্ত্রণটা এখন খুব জরুরি হয়ে গেছে, মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশার প্রচণ্ড সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বৃষ্টি শুরু হওয়াতে। গত দুইদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন শুরু হতে পারে। কারণ, এডিস মশার জন্ম হয় পরিষ্কার পানিতে। এখন বৃষ্টি হওয়াতে পরিষ্কার পানি জমে তাতে এডিশের জন্মানোর সম্ভাবনা রয়ে যায়। যদিও এত অল্প বৃষ্টিতে সেই সম্ভাবনা কমই।

বিজ্ঞাপন

তবে আইইডিসিআরের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, ‘এডিস মশার ভেতরে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর ভাইরাস যায় তখন সে ডিম দিলে সে ডিমের মধ্যে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু থেকে যায়। অনুকূল পরিবেশ পায় তখন চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর ভাইরাস নিয়েই নতুন মশার জন্ম হয়। এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, একই সঙ্গে কিউলেক্স নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

এ জন্য মানুষকে সচেতন হবারও পরামর্শ দেন তিনি। এএসএম আলমগীর বলেন, ‘এডিস মূলত ঘরের মশা। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে যেন বাসা-বাড়ি, গ্যারেজ, ফুলের টপ, ডাবের খোসায় বৃষ্টি জমে না থাকে।’

অপরদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো মশা মারতে পারি না, যারা মারবে তাদেরকে সচেতন করতে পারি। এখন যে মশাগুলো রয়েছে সেগুলো কিউলেক্স মশা। ঢাকার কোথায় কী পরিমাণ কিউলেক্স রয়েছে সে বিষয়ে একটি জরিপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনকেও বলা হয়েছে।’

সবাইকে সাধ্যমতো সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়ে ডা. সানিয়া তহমিনা আরও বলেন, ‘কিউলেক্স থেকে চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গুর মতো কোনো অসুখের সম্ভাবনা নেই; যদিও সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।’

সারাবাংলা/জেএ/আইজেকে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর