করোনায় বেসামাল বিমান খাত, চার্জ মওকুফ চায় এয়ারলাইন্সগুলো
২৩ মার্চ ২০২০ ০৮:৪৮
ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও একের পর এক বন্ধ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, খোলা আছে কেবল চারটি রুট। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রিজেন্ট এয়ারওয়েজ তো তাদের কার্যক্রম তিন মাসের জন্য বন্ধই ঘোষণা করেছে। এককথায় বিমান খাতে নেমে এসেছে ধস। এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো মনে করছে, বিমান খাতকে বাঁচাতে হলে সরকারকে বিমানের সব চার্জ মওকুফ করতে হবে। একইসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।
এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, দেশি-বিদেশি মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে ২৮টি বিমান সংস্থা প্রতি সপ্তাহে আন্তর্জতিক ৬০৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। বর্তমানে এ সংখ্যা নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়। আগে শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই গড়ে ২০ হাজারের বেশি মানুষের আগমন ঘটত। সেখানে এখন শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রীর দেখা মেলাই ভার।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের বিমান কোম্পানিগুলো মনে করছে, এই খাতকে বাঁচাতে হলে এই মুহূর্তে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা সরকারের সহযোগিতা ছাড়া বিমান খাতের বর্তমান অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। সেজন্য বিমানের পার্কিং চার্জ, সিকিউরিটি চার্জ, বিমানবন্দরের ভেতরে স্থাপনার চার্জ, সিভিল এভিয়েশন চার্জসহ ফুয়েলের ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে। তাহলে বিমানগুলো কোনোমতে মাথা গুঁজে বেঁচে থাকতে পারবে।
তারা আরও বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আগের অবস্থায় ফিরতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিমান খাতে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। কেননা ব্যাংকগুলো যদি স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়, তাহলে বিমানখাত ধ্বংস হবে না। তা না হলে বিমান খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বিদেশি সংস্থাগুলোর হাতে চলে যাবে দেশের বিমান খাত।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, একটি এয়ারলাইন্স পরিচালনা করতে অনেক খরচ। আমরা এখন যাত্রী পাচ্ছি না। খুব খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এমন সময় সরকার এগিয়ে না এলে দেশের প্রাইভেট বিমান খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদেরকে অন্তত বিমানের যেসব চার্জ আছে, সেগুলো মওকুফ করতে হবে। তাহলে আমরা কিছুটা হলেও বাঁচতে পারব। কেননা আমাদের যাত্রী না থাকলে আমরা বিমান চালাব কিভাবে? বিমানের চার্জ দেবো কিভাবে? তাই সরকারের উচিত আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে ভারত বিমান খাতকে ১৩শ কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়ার চিন্তা করছে। সেখানে আমাদেরও এগিয়ে আসা উচিত।
একই কথা বলছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। রোববার (২২ মার্চ) রাতে তিন মাসের জন্য কার্যক্রম বন্ধ করা এই এয়ারলাইন্সের সিইও ইমরান আসিফ বলেন, বিশ্বব্যাপী বিমান খাত হুমকির মুখে। আমাদের তো তিন মাসের জন্য কার্যক্রম বন্ধই ঘোষণা করতে হলো। এখন সরকার এগিয়ে না এলে আমরা বাঁচতে পারব না।
এ বিষয়ে বিমান বিশেষজ্ঞ ও ভ্রমণ বিষয়ক নিউজ পোর্টাল বাংলাদেশ মনিটর’র সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, সারা দুনিয়ায় ট্যুরিজম ও এয়ারলাইন্সগুলো হুমকির মুখে। এই শিল্পের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবিকা জড়িয়ে আছে। তাই এয়ারলাইন্সগুলো কোনো কারণে যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, দেশের এয়ারলাইন্সগুলো মাসে প্রায় সাতশ কোটি টাকার বাজার নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ এই বাজার বছরে প্রায় আট হাজার ৪০০ কোটি টাকার। ফলে সরকার এগিয়ে না এলে এই খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনকি বিদেশিদের কাছে আমাদের বিমান খাত চলে যেতে পারে। তাই আমি মনে করি, সরকারের উচিত এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে বসা। তাদের কিছু চার্জ রয়েছে, সেগুলো কিছুটা হলেও যদি মওকুফ করা হয়, তারা কিছুটা ব্রিদিং স্পেস পাবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, সরকার যদি এখনই এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে বসে ব্যবস্থা নেয়, তাহলে বিমান খাত হয়তো ধ্বংস হবে না। সরকারকে এখন থেকেই বিমান বাঁচাতে পরিকল্পনা নিতে হবে। বিমানের বিভিন্ন চার্জ আছে, সেগুলো প্রয়োজনে মওকুফ করতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন আবার চালু করতে হবে। বিমানকে বাঁচাতে সরকার ভর্তুকি দেওয়ার চিন্তাও করতে পারে। কেননা বিমান আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক খাত। এখান থেকে আমরা রাজস্বও পেয়ে থাকি। কাজেই সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে। নইলে এই খাতকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।