চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাসায় ফল নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বিদেশফেরতরা হোম কোয়ারেনটাইনের নির্দেশনা সঠিকভাবে মানছেন কি না, সেটা তদারক করতে এবং তাদের মনোবল চাঙা রাখতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এই কৌশল নিয়েছে।
সোমবার (২৩ মার্চ) দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিদের বাসায় ফল পাঠানো এই কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। শুরুর দিনে নগরীর ১৬ থানা এলাকায় ৮০ জনের কাছে বিভিন্ন রকমের ফল পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিদের মনে আমরা কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা চাই, উনারা সহজভাবে সরকারের নির্দেশনা প্রতিপালন করুক। উনারা যাতে কোনোভাবেই মনোবল না হারান, সেজন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, কোয়ারেনটাইনে যারা আছেন তাদের প্রকৃত হিসাবটাও তো আমাদের জানা দরকার। তাদের বিষয়ে আমাদের তো জানা থাকার দরকার আছে। এই ফল পাঠানোর মধ্য দিয়ে সেই কাজটাও করা হবে। একইভাবে উনারাও জানবেন যে উনাদের বিষয়টা পুলিশ নজরে রাখছে। তাহলে ওনারাও আর কোয়ারেনটাইন ছেড়ে যাবেন না।’
ফল উপহার পাঠানো নিয়ে সোমবার সকাল থেকে থানাগুলোতে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। দুপুরে নগরীর কোতোয়ালী থানায় গিয়ে দেখা গেছে, ডালায় ফল সাজানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পুলিশ সদস্যরা। ডালায় কমলা ও মাল্টা সাজানো হচ্ছে। সুরক্ষা পোশাক গায়ে জড়িয়ে সেই ফলের ডালি নিয়ে কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিদের বাড়িতে ছুটছেন পুলিশ সদস্যরা।
আর এই কার্যক্রম সার্বিকভাবে তদারক করছেন সিএমপির চার জোনের চার উপ-কমিশনার। বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাড়িতে যাবার আগে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পুলিশ সদস্যদের তাদের সুরক্ষা নিয়ে ব্রিফিং দিয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ কমলা ও মাল্টা পাঠানো হয়েছে হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিদের কাছে। পুলিশ সদস্যরা তাদের বাসায় যাবার ক্ষেত্রে তাদের কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন- তারা সরাসরি হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিকে এসব ফল দিতে পারবেন না। প্রথমে পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা উপকরণ ব্যবহার করে ওই বাসায় ঢুকবে। ঢোকার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবে। স্বজনদের হাতে ফলের ডালি দেবেন এবং ওই ব্যক্তি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করে আনবেন।’
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটাকে আমরা একটা মানবিক সেবা হিসেবে নিয়েছি। কোনোভাবেই আমরা হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হোক বা বিব্রত হোক, সেটা চাই না। মানবিক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা তাদের বোঝাতে চাই যে, আমরা সুন্দরভাবে সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালন করে এই দুর্যোগ ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব।’
সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমদিন আমরা ৮০ জনের বাসায় ফল পাঠিয়েছি। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী মিয়ার তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় বর্তমানে বিদেশফেরত ৯৭৩ জন হোম কোয়ারেনটাইনে আছে। তবে জেলা প্রশাসনের হিসেবে, প্রায় দেড় হাজার বিদেশফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারেনটাইনে আছেন।