কেমন গেল ১০ দিনের ‘সাধারণ ছুটি’র প্রথম দিন
২৬ মার্চ ২০২০ ২২:৫৮
ঢাকা: ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ছুটির দিন। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সবই বন্ধই থাকে। তবে এদিন সকাল থেকেই দেশজুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। এ দিনের জাতীয় উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এর বাইরে দেশজুড়ে শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, শহিদ বেদীগুলো সেজে ওঠে স্বাধীনতার রঙে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ার আর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্টেডিয়াম আর মাঠগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে কচি-কাঁচাদের মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ আর প্যারেডে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে এসে এই প্রথমবার সেই দিবসটিতে নেই কোনো উৎসবের উচ্ছ্বাস।
সামাজিকতার বন্ধন যে উৎসবকে করে তোলে মহিমান্বিত, সেই দিনটিই কি না পালন নিশ্চিত করতে হচ্ছে ‘সামাজিক দূরত্ব’! স্বাধীনতার অর্থ মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে বেড়ানোর উন্মুক্ততা, সেই স্বাধীনতা দিবসেই কি না প্রকারান্তরে নিশ্চিত করতে হচ্ছে গৃহবন্দিত্ব!
না, স্বাধীনতার অর্থ পাল্টে যায়নি। হারিয়ে যায়নি স্বাধীনতার জৌলুসও। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেবল স্বাধীনতার চর্চার ধরনটা বদলে গেল এ বছর। কেবল বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই যে উৎসব এখন আতঙ্কের আরেক নাম। ‘বিচ্ছিন্নতার চর্চা’ই যে বর্তমানের ‘আক্রান্ত’ বিশ্বের একমাত্র সমাধানের পথ। আচমকা এমন বদল ঘটানোর পেছনের কারণটা আর কিছুই নয়, গত মাস তিনেকের বিশ্বের সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ— ‘করোনাভাইরাস’।
গত বছরের শেষ দিনটিতে চীন থেকে শুরু। এরপর মার্চ আসতে আসতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় একশ দেশে। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ায় আশঙ্কা ছিল মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়েও। মার্চ আসতে আসতেই স্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে, এবারের স্বাধীনতা দিবস, কিংবা এরও আগের জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকছে না জৌলুস। ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ায় সব আশঙ্কাই সত্য হয়। মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সীমিত করা হয়, মূল অনুষ্ঠান ধারণ করে প্রচার করা হয় টেলিভিশন চ্যানেলে। স্বাধীনতা দিবসের সব অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে বাড়তে থাকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে ২৩ মার্চ ঘোষণা হলো— ২৬ মার্চ থেকে গোটা দেশই থাকবে ১০ দিনের সাধারণ ছুটিতে।
সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় স্পষ্ট নির্দেশনাও দিয়ে দেওয়া হয়, এই ছুটির সময়টিতে আমরা কী করব। জানানো হয়, জরুরি সেবা বাদ দিলে আর কোনোকিছুই চালু থাকবে না। ওষুধ, খাবার আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া বাকি সব দোকান বন্ধ থাকবে। সবাইকে যতটাসম্ভব বাসাতেই থাকতে হবে। নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়াসহ যেকোনা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় সমাগম নিরুৎসাহিত করা হয়। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করার কথাও জানানো হয়।
কেমন গেল সেই সাধারণ ছুটির প্রথম দিনটি? রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সারাবাংলার প্রতিবেদকদের পাশাপাশি সারাদেশের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার অনেকখানি চিত্র।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সারাবাংলার প্রতিবেদকরা জানাচ্ছেন, কোথাও কোনো জনসমাগম চোখে পড়েনি বললেই চলে। বাজারে ছিল না ভিড়। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা রামপুরা, হাতিরঝিল, গুলশান, নিউমার্কেট, শাহবাগ, ফার্মগেট, মহাখালী ছিল প্রায় জনমানবশূন্য। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশজুড়ে বসে যাওয়া চায়ের ‘টং দোকান’গুলোর দেখা নেই। চোখে পড়েনি গণপরিবহনও। ফাঁকা সড়কজুড়ে ছিল দুয়েকটি রিকশা আর সিএনজি অটোরিকশা। আর ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। পথে বেরোনো দুয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতেই জানান, ঈদের ছুটিতেও দেখা যায় না এমন চিত্র। নেহায়েত পেট চালাতে হবে, তাই বের হয়েছেন তারা।
চট্টগ্রাম থেকে সারাবাংলার বিশেষ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, ৭০ লাখ মানুষের শহর ছিল অনেকটাই নিস্তব্ধ। অনেকেই শহর ছেড়েছেন, অনেকেই শহরে ঘরবন্দি। জীবিকার তাগিদে বের হতে হয়েছে কাউকে কাউকে। নিস্তব্ধ শহরের মূল সড়কগুলোতে ছিল পুলিশ-সেনাবাহিনীর টহল। তবে অলিগলিতে কোথাও কোথাও কিশোর-তরুণদের আড্ডাও দেখা গেছে। পাড়ায়-পাড়ায় মসজিদ, উপাসনালয়ে লাগানো মাইকে ছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) করোনা সতর্কতার বার্তা প্রচার।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকান ছিল বন্ধ। রাস্তায় মানুষজনের ভিড়ও বলতে গেলে ছিল না। তবে কারণ ছাড়াই যারা ঘর থেকে বেরিয়েছেন, তাদের ঘরে ফেরাতে পুলিশের অ্যাকশনও ছিল চোখে পড়ার মতো। এর বাইরে গণপরিবহন ছিল বন্ধ।
যশোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সারাদিন যশোরের বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশন ছিল জনশূন্য। সেইসঙ্গে সড়কে মানুষের চলচাল একেবারে ছিল না বললেই চলে। জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হয়েছিলেন, তাদের ভরসা করতে হয়েছে রিকশা আর ইজিবাইকের ওপর। এর জন্য অবশ্য তাদের বাড়তি ভাড়াও গুণতে হয়েছে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রশাসনের নির্দেশ মেনে বুধবার থেকেই জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা শহর ও হাট-বাজারে কাঁচবাজার, ওষুধের দোকান ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবারও প্রায় সারাদিনিই রাস্তা-ঘাট ছিল ফাঁকা। যানবাহন চলাচল ছিল সীমিত।
মোংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকানই সারাদিন বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী ১০ দিন ধরেই তারা দোকান বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত মান্নান জানিয়েছেন, দোকান মালিকরা নিজেরা বৈঠক করেই দোকান বন্ধ রেখেছেন। তবে মোংলা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস স্বাভাবিক ছিল।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হলে মৃদু অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হবেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তাই বাইরে মানুষজনের তেমন আনাগোনা ছিল না বলেই জানিয়েছেন সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তিনি জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আর ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকানই ছিল বন্ধ।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্তের পর থেকেই বলতে গেলে ফাঁকা হয়ে গেছে পার্বত্য জনপদের ব্যস্ততম শহর রাঙ্গামাটি। সকাল থেকেই শহরের বনরূপা বাজার, রিজার্ভবাজার ও তবলছড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কেবল কাঁচাবাজার, মুদি ও সবজির দোকান ছাড়া অন্য কোনো দোকানপাট খোলা নেই। বুধবার অনেকেই মুদি দোকান খুললেও বৃহস্পতিবার মুদি দোকান খোলেননি অনেক দোকানি। পুরো এলাকা বলতে গেলে ছিল জনমানবশূন্য।
এছাড়া রাজশাহী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, নওগাঁ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মাগুরা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকেও এসেছে প্রায় একই ধরনের চিত্র।
তবে একটু ভিন্নরকম চিত্রও ছিল। অনেক জেলাতেই কোয়ারেনটাইনের শর্ত না মানায় জরিমানা করা হয়েছে অনেককেই। নতুন করেও অনেককে কোয়ারেনটাইনে রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যারা কোয়ারেনটাইনের মেয়াদ অতিক্রম করেছেন, তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসনের সহায়তায় সেনাবাহিনী
সাধারণ ছুটির সময়গুলোতে নাগরিকদের মধ্যে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সহায়ক হিসেবে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। সে অনুযায়ী ২৬ মার্চ থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। সারাদেশে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে উপকূলীয় ছয় জেলার ১৯ উপজেলায় নৌবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন মাঠে। জেলার নড়িয়া উজেলায় ইতালী প্রবাসীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেখানে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব।
কুড়িগ্রামেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরের পৌর বাজার, শহিদ মিনার চত্বর, জিয়া বাজার, পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়াসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হ্যান্ড মাইকে জনগণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয় তাদের পক্ষ থেকে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে তিন-চার জনকে একসঙ্গে জড়ো হতে দেখলে তাদের সরিয়ে দিয়েছেন তারা। পুলিশ সদস্যরাও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী সহায়তা করছে প্রশাসনকে। এ কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে জেলার সব উপজেলার পরিচালনা করা হবে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর টহল শুরু হয়। সকালে পটুয়াখালীর লেবুখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাস থেকে দু’টি গাড়িতে করে ঝালকাঠিতে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর একটি দল। জেলা শহরের বাজার রোড, লঞ্চঘাট, ব্যাকমোড়, কলেজ মোড়, সাধনের মোড়, চাঁদকাঠী মোড়সহ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে টহল দেন সেনা সদস্যরা।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার তদারকি করছেন। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। হাট-বাজার থেকে শুরু সব জায়গায় যাতে একের অধিক মানুষ এক সঙ্গে যেন থাকতে না পারে সে বিষয়ে কাজ করছে প্রশাসন।
জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটছে সারাদেশে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সারাদেশে সরকারিভাবেই সড়কে ছিটানো হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে। রাজধানীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে দুই বেলা এই স্প্রে ছিটানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব সড়কে। এছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন এলাকায় ছিটানো হয়েছে এমন স্প্রে। এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অনেক এলাকাতেও। এছাড়া সারাদেশেও বিভিন্ন জেলা শহরসহ উপজেলাগুলোতে ছিল একই কার্যক্রম।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা পুলিশের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের বিভিন্ন সড়কে জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করা হয়েছে। শহরের পুলিশ লাইন থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়কে এই স্প্রে করা হয়। একইসঙ্গে সচেতনতামূলক নানা প্রচারিভাযানও চালানো হয়।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরের পৌর বাজার, শহিদ মিনার চত্বর, জিয়া বাজার, পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়াসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেনাসদস্যদের তত্ত্বাবধানে।
দিনাজপুর শহরেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটিয়েছেন সেনাসদস্যরা। হাকিমপুর উপজেলার স্থলবন্দর হিলিতে এই কার্যক্রম পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম জানান, সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় হিলিকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। সে কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের মাধ্যমে জীবণুনাশক স্প্রে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পৌর সদরের বিভিন্ন সড়কসহ পাড়া-মহল্লাতেও জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে। সকালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির, পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকসহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
নাটোরে আধুনিক সদর হাসপাতালে জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নাটোর জেলা ইউনিট। এছাড়া নাটোরে নাটোরে জেলা আওয়ামী লীগ ও রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে মাস্ক ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
বিপরীত চিত্র মহাসড়কে, নৌরুটে
সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় বারবারই বলে দেওয়া হয়েছে, এটি স্বাভাবিক সময়ের মতো সাধারণ ছুটি নয়। এই ছুটির মূল উদ্দেশ্য মানুষকে ঘরে রাখা। খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে বাইরে বের না হওয়া। সাধারণ ছুটির এ উদ্দেশ্য শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে, এমনটি বলা যায় না। কারণ সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর রাজধানী থেকে গ্রামমুখী মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল বৃহস্পতিবারেও।
সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মানুষ অন্যান্য উৎসবের মতোই ঢাকা ছাড়ছে। ঘোষণা অনুযায়ী সড়ক পথ বন্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবারও সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে ছিল তীব্র যানজট। এদিন সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ যানজট দেখা গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঘরে ফেরা মানুষগুলো।
একই চিত্র ছিল নৌরুটগুলোতে। মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যথেষ্ট যাত্রীর চাপ ছিল। বিশেষ করে চাপ বেশি ছিল শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটে। শিমুলিয়া ফেরি ঘাট, লঞ্চ ঘাট ও সী-বোট ঘাটে দেখা যায়, মাছ ধরার অসংখ্য অবৈধ ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছে। এসময় অবৈধ ট্রলার চালানোর অভিযোগে মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা পাঁচ জনকে আটকও করে।
বৃহস্পতিবার আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও পাঁচ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪৪ জন। এর মধ্যে পাঁচ জন মারা গেছেন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১১ জন।
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা আগের দিনগুলোর মতো এদিনও বারবার বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। একইসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে সামাজিক দূরত্ব।
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির দিনগুলোকে তাই স্বাভাবিক ছুটি হিসেবে না নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশেষায়িত ছুটি হিসেবে বিবেচনা করলে সেটিই স্বাধীনতা দিবসেও আপাত অবরুদ্ধ থাকাটা সুফল হিসেবে ফিরে আসবে।
সারাবাংলা/টিআর