সবজির বাজার স্থিতিশীল, বেড়েছে চালের দাম
৩০ মার্চ ২০২০ ১৮:৪৪
ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ কমেছে। আর সরকারি ছুটির কারণে অনেকেই বাড়িতে চলে যাওয়ায় এবং যারা ঢাকায় রয়েছে তারা খুব একটা বাজারে না যাওয়ায় কমেছে এর চাহিদাও। ফলে দামও রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। তবে সরবরাহের সঙ্গে চাহিদা কমলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল।
সবজির সরবরাহ কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনা আতঙ্কের কারণে পরিবহন চালকরা সবজি নিয়ে ঢাকায় আসতে চাচ্ছেন না। আবার কোথাও কোথাও পণ্য পরিবহনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে সরবরাহ কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির সরবরাহ যে হারে কমেছে চাহিদা কমেছে তার চেয়ে বেশি। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সবজির দাম আরও কম হতো। আর চালের দামের বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনা আতঙ্কের পর থেকেই বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে এর দাম।
বগুড়া থেকে কারওয়ানবাজারে সবজি নিয়ে আসা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বগুড়ায় এখন সবজির দাম অনেক কম। তবে একসঙ্গে বেশি সবজি আনা যাচ্ছে না। কারণ, কিছু কিছু জায়গায় সবজি পরিবহনে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। তাই আমরা কম সবজি আনছি।’
তিনি বলেন, ‘সবজি কম আনলেও দাম সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পরিবহনের জন্য আগের থেকে তুলনামূলক বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে সবজি কম দামে কিনতে পারলেও লাভ তেমন হচ্ছে না।এখন যে হারে সবজি আসছে অন্য সময় এমন হারে আসলে দাম কয়েকগুণ বেড়ে যেত। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের না হওয়ার কারণে সবজির বিক্রি কমে গেছে। যে কারণে দাম বাড়েনি।’
মানিকনগর থেকে সবিজ নিয়ে আসা একটি পরিবহনের চালক হামজার আলী বলেন, ‘আমাদের ওদিক থেকে সবজি পরিবহনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। গাড়িতে সবজি দেখলেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে অন্য সময়ের তুলনায় এখন সবজি অনেক কম আসছে।’
সবজি কম আসার কারণ হিসেবে এই চালক বলেন, ‘ঘর থেকে এখন মানুষ কম বের হচ্ছে। কিন্তু কিছু সবজি আছে যেগুলো বেশি দিন জমিতে রাখা যায় না। কৃষকরা দাম না পেলেও বাধ্য হয়ে এসব সবজি তুলে বাজারে নিয়ে আসছেন। এরপরও অনেকের জমিতে সবজি নষ্ট হচ্ছে।’
সোমবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা ৪০-৫০ টাকা, বরবটি ৪০-৫০, শশা ২০-৩০, পেঁপে ৩০-৪০, পাকা টমেটো ২০-৪০, শিম ৪০-৫০, গাজর ২০-৩০, মুলা ১০-২০, বেগুন ২০-৪০, পটল ৪০-৫০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে এসব সবজির দাম আরও বেশি ছিল।
সবজির পাশাপাশি পেঁয়াজ, আলু ও কাঁচামরিচের দামও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে। করোনা আতঙ্কে ৮০ টাকায় উঠে যাওয়া পেঁয়াজের কেজি এখন ৩০-৪০ টাকায় নেমে এসেছে। ২৮ টাকায় বিক্রি হওয়া গোল আলুর কেজি এখন ২০ টাকা। ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচের কেজি এখন ৪০-৫০ টাকা।
কারওয়ানবাজারের একটি আড়তে কাজ করা সবুজ বলেন, ‘এখানে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আছি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকদিন ধরে সবজি অনেক কম আসছে। এরপরও প্রতিদিনই সবজি অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। আগে কখনও এমন পরিস্থিতি দেখিনি।
কম দামে সবজি কিনতে পারায় ক্রেতাদের মাঝেও স্বস্তি দেখা দিয়েছে। উত্তরার বিডিআর বাজার থেকে নিয়মিত সবজিসহ অন্যান্য পণ্য কেনেন বাশার। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস আতঙ্কে সবাই যে হারে কেনাকাটা করেছিল, তাতে মনে হচ্ছিল বন্ধের মধ্যে সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু এখন বাজারে এসে দেখছি সবজির দামে বাড়েনি। উল্টো কমেছে। এটা খুব ভালো লাগছে।’
এদিকে উত্তরার খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে নাজিরশাল। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে এই দুই ধরনের চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া সরু চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে মোটা চলেরও। পাইজাম ও লতা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, যা করোনা আতঙ্কের আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৮ টাকা। স্বর্ণ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, যা আগে ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা।