Friday 06 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, সরবরাহ বাড়লেও সবজিতে স্বস্তি নেই

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০০ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৬

চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ৫ টাকা করে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে আলু, পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে। দুই সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর মুরগির ডিমের দামও বাড়তির দিকে, তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে।

এদিকে সরবরাহ প্রচুর হলেও অধিকাংশ সবজির দাম এখনো ক্রেতার জন্য স্বস্তি আনতে পারেনি। পেঁপেসহ হাতেগোনা দুয়েকটি সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে। বাদবাকি অধিকাংশ সবজির কেজিই ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে কয়েকটির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমলেও নাগালের মধ্যে আসেনি বলেই অভিযোগ ক্রেতাদের।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দরের এ চিত্র পাওয়া গেছে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের সবজির আড়তে বৃহস্পতিবার পাইকারিতে দেশি আলু বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা দরে। খুচরায় আলুর দাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। অথচ গত সপ্তাহেও খুচরায় আলুর দাম ৭০ টাকার নিচে ছিল।

বাজারে মুন্সীগঞ্জর আলু ৬৫ টাকা, লাল ও সাদা গোল আলু ৭০ টাকা, আর বগুড়ার লাল আলুর দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। একেবারে সদ্য ক্ষেত থেকে তোলা শীতকালীন লাল আলু ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বাজারে চাহিদা বেশি— এমন ভারতীয় পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ খুচরায় ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, বৃহস্পতিবার তার দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এ ছাড়া কেজিতে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেড়ে মিশরের পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

চট্টগ্রামের বাজারে টমেটোর দাম এখনো প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত হলেও এবং দাম কিছুটা কমলেও এখনো তা নাগালের বাইরে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

রিয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ শফিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আলু পাইকারিতেই ৬৫-৬৬ টাকা, আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১১০-১১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া যোগ করেন। কোনোভাবেই ১২০ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রি সম্ভব না।’

বিজ্ঞাপন

ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম ডজনে অন্তত দুই টাকা বেড়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায়। নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ের রাজীব স্টোরে বৃহস্পতিবার ডিম প্রতি ডজন ১৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতা জানালেন, গত দুই সপ্তাহ ডিম প্রতি ডজন ১৫০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু গত দুই দিন ধরে পাইকারিতে প্রতি ১০০ ডিমে অন্তত ২০ টাকা দাম বেড়েছে। এ কারণে খুচরাতেও ডজনে ২ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

আলু-পেঁয়াজ-ডিমের বাড়তি প্রবণতার বিপরীতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। বাজারে বড় আকারের ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা ও মাঝারি আকারের ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

সোনালি মুরগির দাম আবার বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার এ মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৩৪৫ থেকে ৩৫০ টাকায়, যা তিন দিন আগও বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। এ ছাড়া পাকিস্তানি কক মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৯৫০ টাকা ও হাড়সহ ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

চট্টগ্রামের বাজারে মাছের দামও আগের মতোই স্থিতিশীল। ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম না বাড়লেও তা তাদের নাগালের বাইরেই। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

রিয়াজউদ্দিন বাজারে শীতকালীন সবজির মধ্যে শুধু ফুলকপি-বাঁধাকপির দাম কিছুটা কমতির দিকে দেখা গেছে। ফুলকপি মানভেদে প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ১২০ টাকার মতো ছিল। আর বাঁধাকপি মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে দাম অন্তত ১০ টাকা কমেছে ফুলকপির। তকে মূলার দাম গত সপ্তাহের মতো মানভেদে কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে আছে।

এ ছাড়া শীতকালীন সবজির মধ্যে টমেটো মানভেদে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, ধনে পাতা ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লাল শাক, মূলা শাক, পুঁই শাক ও মিষ্টি কুমড়া শাক প্রতি আঁটি ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

অন্যান্য সবজির মধ্যে পেঁপে মানভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টিকুমড়া কেজিপ্রতি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাউ, ঝিঙা, পটল, বরবটি, করলা চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কচুরমুখী, বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে। কাঁকরোলের দাম বেড়ে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে।

হালিশহর থেকে রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসা ক্রেতা নাহার বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবজির মধ্যে প্রত্যেকটার দাম যখন ২০-৪০ টাকার মধ্যে আসবে তখন বলতে পারব যে আমরা কিনতে পারছি। অর্থাৎ দাম আমাদের নাগালের মধ্যে। ৮০ টাকা, ১০০ টাকা, ১৫০ টাকায় সবজি কেনার মুরোদ কয়জনের আছে!’

মাছের দাম গত সপ্তাহের মতোই দেখা গেছে। বাজারে মাঝারি সাইজের তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে। আর ২৫০ গ্রাম ওজনের চাষের রুই, কাতলা, মৃগেল, কার্পিও, কালবাউশ ও কার্পজাতীয় মাছ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ২০০ থেকে ২২০ টাকা ছিল। আড়াই থেকে দুই কেজি ওজনের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

চালের দামের খুব একটা হেরফের হয়নি গত সপ্তাহের তুলনায়। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

এ ছাড়া ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৮০০ থেকে ২৩০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা, কাজলী মাছ ১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা ও লইট্যা মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এদিকে চালসহ শুকনো পণ্যের দামেও গত সপ্তাহের তুলনায় হেরফের হয়নি। বৃহস্পতিবার কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা ২০৭০ টাকা, বেতি আতপ ৩২৩০ থেকে ৩২৮০ টাকা, হাফসিদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা, চিনিগুঁড়া ১৫০ টাকা, পাইজাম আতপ ১৭৭০ থেকে ১৭৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই কেজি প্যাকেট আটা ১২৫ টাকা ও ময়দা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের মধ্যে দেশি রসুন ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ৩২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ছোট মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৫৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা ও ছোলা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

বাজারদর সবজির বাজার সাপ্তাহিক বাজারদর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর