সাধারণ ছুটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়তে পারে, ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর
৩১ মার্চ ২০২০ ১০:৪১
ঢাকা: করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। তবে বিশ্বব্যাপী এখনো এই ঝুঁকি থেকে যাওয়ায় এই ছুটির মেয়াদ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে সূচনা বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়তে থাকে, এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আমরা সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছি। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই ছুটি ঘোষণা করা আছে। কিন্তু সারাবিশ্ব এখনো এই ভাইরাসের ঝুঁকিতে আছে। আমরাও বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন নই। তাই এই ঝুঁকি এড়াত আমাদের সেই ছুটি অল্প কিছুদিন বাড়াতে হতে পারে।
আরও পড়ুন- বৈশাখে লোক সমাগম নয়, ডিজিটালি অনুষ্ঠানের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
এসময় প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্তে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন ইঙ্গিত দেন, আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সেই ছুটি বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ওই দিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় কার্যকরভাবে সাধারণ ছুটি পরবর্তী সাপ্তাহিক ছুটির শেষ দিন শনিবার (১১ এপ্রিল) পর্যন্ত বলবৎ হবে। অর্থাৎ সাধারণ ছুটির মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়তে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নববর্ষ উদযাপন ও সাধারণ ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে নির্দেশনা চান। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলেই দিলাম, ৯ তারিখ (৯ এপ্রিল) পর্যন্ত এক্সটেনশন করতে হবে। তবে এটা সীমিত আকারে থাকবে। কিছু কিছু মানুষের চলাফেলার সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ সব জায়গায় যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সেভাবে নেই, তাই মানুষকে একেবারে ঘরে আটকানো যাবে না। তবে যানবাহন চলাচলের বিষয়টি সীমিত রাখতে হবে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ৪ এপ্রিলের আগে আরও চার দিন হাতে সময় আছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন থেকে না বললে মানুষ প্রস্তুতি নিতে পারবে না। স্রোতের মতো মানুষ চলে আসবে। তারপর আবার সিচুয়েশন কী হবে, বলতে পারি না। তাই ছুটি ঘোষণা দিতে হবে। তবে আমরা সম্পূর্ণ আটকাব না। কিছু জায়গা ওপেন করে দেবো। যেগুলো খুব এসেনশিয়াল জায়গা, চালু থাকবে। স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি সব বন্ধ থাকবে। অফিস যে যেখানে ঘরে বসে করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কিছু ইন্ডাস্ট্রি চালু রাখতে হবে, যেগুলো আমাদের খুব প্রয়োজন। কারণ উৎপাদনও তো অব্যাহত রাখতে হবে। কাজেই ইন্ডাস্ট্রিগুলো চালু করে দেওয়া যেতে পারে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা আটকে রাখতে হবে। আর সে কারণেই পরিবহন শ্রমিক, কুলি, মজুর এদেরকে ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মূলত সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ বা সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থাপনাকেই মূল কৌশল মনে করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একে অন্যের থেকে দূরত্বে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। সেটা মেনেই সরকার গত ২৩ মার্চ সারাদেশে ১০ দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে সাধারণ ছুটির সময় যেন খেটে খাওয়া মানুষের, শ্রমজীবী মানুষের কোনো সমস্যা না হয়, তাদের কাছে যেন সহায়তা পৌঁছানো হয়, সে নির্দেশনাও জেলা প্রশাসকদের দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সাধারণ ছুটি থাকলেও যেন মানুষের কোনো কষ্ট না হয়। আরেকটি বিষয়, দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আমি আশা করব, সবাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখবেন।
গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এছাড়া সচিবালয় প্রান্তে যুক্ত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও এর অধীন বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন সচিবালয় প্রান্তে।
আরও পড়ুন-
‘সচেতন হয়েছি বলেই আমাদের অবস্থা খুব খারাপ নয়’
পিপিই’র সংকট নেই, প্রয়োজন বুঝে ব্যবহারের নির্দেশনা
‘করোনাকালে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় নয়’