Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খালেদা জিয়াকে পুলিশি নিরাপত্তা দিন— আইজিপিকে রিজভী


২ এপ্রিল ২০২০ ১৪:১৭

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) অনুরোধ জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে অনলাইনে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ অনুরোধ জানান।

রিজভী বলেন, ‘দীর্ঘ ২৬ মাস কারাগারে বন্দি রাখার পর খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি গুলশানে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার জন্য তার একান্ত সচিব এবিএম সাত্তার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবরে আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

‘বিএনপির পক্ষ থেকে আমি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশের আইজিপিকে অনুরোধ করছি। খালেদা জিয়াকে দ্রুত পুলিশি নিরাপত্তা দিন’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পুরো বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। দুর্যোগের কাছে মানুষের অর্থ, অস্ত্র, ক্ষমতা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। সামান্য উঁচু-নিচুর ব্যবধানেও যেখানে মানুষ মানুষকে প্রতিপক্ষ-প্রতিযোগী ভাবতো, আজ মৃত্যুর ভয় সবাইকে জড়োসড়ো করে ফেলেছে। জাতি, ধর্ম-বর্ণের বিভেদহীন দূত হিসেবে প্রতিদিন শত শত মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে নতুন নতুন মানুষের দুয়ারে হাজির হচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা। লাখ লাখ মানুষের সংক্রমণ আর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু বিশ্বকে আজ এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে ১৭৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমণ মৃদু মাত্রায় রয়েছে বলে দাবি করেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকার বলছে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে। পশ্চিমা মিডিয়া বলছে, আগামী দুই সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের গণমাধ্যমও এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘মৃত্যু হানা দিচ্ছে দেশে দেশে। করোনা যদি এখনই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, বাংলাদেশে তা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বিদেশি কূটনীতিকেরা দলে দলে ঢাকা ছাড়ছেন।’

সরকারের নীতির কারণেই দেশের করোনা পরিস্থিতির আসল চিত্র ফুটে উঠছে না অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘ভেতরে ভেতরে সংক্রমণ হতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। গত ২৪ ঘন্টায় জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আর সরকারি হিসাবে মারা গেছে একজন। এক্ষেত্রে পরীক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, হঠাৎই বাড়তে পারে ভয়াবহতা। সেক্ষেত্রে লকডাউন চালিয়ে যাওয়া, আরও বেশি বেশি টেস্ট করে পজেটিভ রোগী খুঁজে আইসোলেশনে পাঠানো জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা মনে করি-সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ বিপদ ঠেকানো সম্ভব নয়। তথ্য গোপন করে এই মহামারি এড়ানো যাবে না। তাই সঠিক তথ্য দিয়ে এই রোগের ভয়াবহতা বুঝিয়েই জনগণকে কোয়ারেনটাইন মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ, সুরক্ষা ও প্রতিকারে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দিয়ে মানুষের আস্থা তৈরি করা উচিত।’

সরকারের তথ্য গোপন পলিসির সমালোচনা করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত কয়েকদিনে বিএনপির ১২ নেতাকর্মী ও চিকিৎসক গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে রোগের পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে দেশে পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিংবা সরকারি পরিসংখ্যানের আপডেট এখন কেউ আর বিশ্বাস করছে না।’

‘এই সংকটময় সময়ও বিএনপির নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে আসেনি’—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা গণতন্ত্রকে জাদুঘরে পাঠিয়েছেন বলেই সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরাকে অপতৎপরতা হিসেবে অভিহিত করছেন। গণতান্ত্রিক মানস নেই বলেই সমালোচনা শুনলে আপনারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এই মহাদুর্যোগে যখন মানুষ জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে, তখন আপনার বক্তব্য বিভাজন ও বিভেদেরই প্রতিফলন।’

রিজভী বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধ বা মোকাবিলায় বাংলাদেশ যদি এতটাই সক্ষম, তাহলে ইউরোপিয়ান, আমেরিকান ও জাপানিরা দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন কেনো? আপনি কোয়ারেনটাইনে থেকে বিএনপির সমালোচনা ছাড়া কি কিছুই বোঝেন না? যখন করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন আমরাই রাজপথে নেমেছি, সারাদেশে সচেতনতা শুরু করেছি। দুঃসময়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শ্রেণি-পেশার সংগঠন অর্থাৎ সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করার আহবান জানিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে এখন সকলের একজোট হওয়ার সময়। আমাদের দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সারাদেশে যে যেভাবে পারছেন, দলের নির্দেশ অনুযায়ী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।’

আইজিপি খালেদা জিয়া পুলিশি নিরাপত্তা রুহুল কবীর রিজভী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর