করোনায় রেমিটেন্সে বড় ধাক্কা
৩ এপ্রিল ২০২০ ০০:৪৩
ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রভাবে নিম্নমুখী ধারায় ফিরেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১২৮ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম।
গত বছরের একই সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ১৪৫ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়াও গত মার্চে দেশে রেমিটেন্স আসার পরিমাণ আগের ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর আগে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল। ওই সময়ের পর মার্চ মাসে দেশে সবচেয়ে কম রেমিটেন্স আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-১৯ থেকে মার্চ-২০) প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার। এটি বাংলাদেশি টাকায় (১ ডলার, ৮৫ টাকা ধরে) ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-১৮ থেক মার্চ-১৯) রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ১৮৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।
সূত্র জানায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত, পুঁজিবাজার, রাজস্ব আয়, রফতানি প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতির সব সূচক উল্টোপথে হাঁটলেও রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখি ধারা অব্যাহত ছিল।
অর্থনীতিতে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। এদিকে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত আড়াই বছর পর আবারও ১ মার্চ তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই রিজার্ভ দিয়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু করোনার কারণে মার্চ মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কমতে শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের প্রথম থেকেই বাড়ছে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১৫৯ দশমিক ৭২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠায়। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ১৩১ দশমিক ৭৭, মার্চে ১৪৫ দশমিক ৮৬, এপ্রিলে ১৪৩ দশমিক ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স আসে।
এরপর মে মাসে আবার রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স আসে ১৭৪ দশমিক ৮১ কোটি মার্কিন ডলার। এরপর গত জুনে ১৩৬ দশমিক ৮২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠায়।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই-১৯ এ রেমিটেন্স আসে ১৫৯ দশমিক ৭৬ কোটি মার্কিন ডলার। এরপর গত আগস্টে ১৪৪ দশমিক ৪৭ কোটি মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৪৭ দশমিক ৬৯ কোটি মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ১৬৩ দশমিক ৯৬ কোটি এবং নভেম্বরে ১৫৫ দশমিক ৫২ কোটি, ডিসেম্বর মাসে ১৬৮ দশমিক ৭০ ডলার, এ বছর জানুয়ারি মাসে ১৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪৫ দশমিক ২০ কোটি ডলার এবং মার্চে ১২৮ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।
বছরভিত্তিক রেমিট্যান্স : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্জিকা বছর হিসাবে, ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। ২০১৮ সালে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার।
অন্যদিকে অর্থবছর হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার।
উল্লেখ্য বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো যথাক্রমে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, যুক্তরাজ্য, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন।
করোনাভাইরাস করোনার প্রভাব টপ নিউজ প্রবাসী বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স