কারাগারে করোনা আতঙ্ক, জামিন পেতে পারেন ৩ হাজার বন্দি
৩ এপ্রিল ২০২০ ১১:৫৫
ঢাকা: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সারাবিশ্বের মানুষকে আতঙ্কে রেখেছে। সেই সঙ্গে কারাগারে থাকা বন্দিদের মধ্যেও বিরাজ করছে করোনা আতঙ্ক। তার ওপর ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশিসংখ্যক বন্দি থাকার বিষয়টি আরও বেশি সমস্যায় ফেলে দিয়েছে কারা কর্মকর্তাদের। তাই বন্দিদের করোনা আতঙ্ক কাটাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ বিশেষ জামিনের উদ্যোগ নিয়েছে। লঘু অপরাধে দীর্ঘদিন ধরে হাজত বাস করছেন, প্রথম ধাপে এমন বন্দিদের জামিন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কারা কর্মকর্তারা। এর আওতায় তিন হাজারেরও বেশি বন্দি জামিন পেতে পারেন।
বুধবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেনের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে একটি চিঠির মাধ্যমে লঘু অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের তালিকা দ্রুত শেষ করে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে তালিকা তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী সপ্তাহে সেই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
কেন এ বিশেষ উদ্যোগ— জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্দিদের করোনা আতঙ্ক কাটাতেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। যাদের অপরাধ লঘু এবং যারা ৬ মাস ধরে সাজা ছাড়াই কারাগারে হাজত বাস করছেন, তারা রয়েছেন এই তালিকায়। ছিনতাইয়ের চেষ্টা, চুরি, হত্যাচেষ্টা ও প্রতারণা— এসব অপরাধে অপরাধীদের তালিকা করা হয়েছে। কোনোভাবেই গুরুতর অপরাধীদের (হত্যা, মাদক, ধর্ষণ ও ছিনতাইয়ের আসামি) তালিকায় বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। দেশের ৬৮ কারাগারেই এই তালিকার কাজ চলছে।
কতসংখ্যক বন্দি জামিন পেতে পারেন— এ প্রশ্নের জবাবে আবরার হোসেন বলেন, সারাদেশে তিন হাজারের বেশি হবে বন্দি। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে এক হাজারের ওপরে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে নারী ও পুরুষ মিলে দুই শতাধিক। আর বাকি বন্দিরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন।
কারাগারে বন্দিদের পরিমাণ কমানো প্রসঙ্গে কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, দ্বিতীয় ধাপে ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী যেসব দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এরই মধ্যে ২০ বছরের বেশি সাজা ভোগ করেছেন ও কর্মক্ষম নন, সেসব আসামিকে সরকারের আদেশে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত চিঠি দিয়ে আসছি। এসব আসামিকেও জামিনে মুক্তি দিতে সরকারের নির্দেশে স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে।
কারা সূত্র জানায়, দেশে মোট কারাগারের সংখ্যা ৬৮টি। সব কারাগার মিলিয়ে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪১ হাজার ৩১৪ জন। এর বিপরীতে এখন দেশের কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজারেরও বেশি। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি রয়েছেন কারাগারগুলোতে। এ অবস্থায় সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত বন্দিদের আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। নতুন আসা বন্দিদেরও শুরু থেকেই আলাদা সেলে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এরপরও কোনোভাবেই বন্দিদের মাঝে করোনা আতঙ্ক কমছে না।
তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর বার বার একে অন্যের থেকে যে সামাজিক দূরত্ব রাখার নির্দেশনা দিচ্ছে, কারাগারে বন্দিদের মধ্যে তা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি থাকলেও জনবল সীমিত হওয়ায় তাদের সেবা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের হিমশিম খাওয়ার বিষয়টি তো রয়েছেই। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বন্দি কমানোকেই তাই আপাতত একমাত্র উপায় হিসেবে মনে করছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারা সূত্র জানিয়েছে, রায়ে যাদের সাজা সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারে এবং বিচারাধীন অবস্থাতেও যাদের কারাগারে ছয় মাস কেটে গেছে— এমন আসামিদের জামিন দেওয়া হবে প্রথম ধপে। চুরি, মারামরি, ছিনতাই বা পকেটমার ও যৌতুক নিরোধের কিছু ধারায় আটক অপরাধীরা রয়েছেন এই বন্দির তালিকায়। জামিনযোগ্য ধারা হিসেবে ৩২৩, ৩২৪, ৩৭৯, ৩৮০,৩৮১ ৫১১, ৫০৬, ৪২০, ৪০৬, ৪৫৭ ধারাসহ কিছু ধারা রয়েছে, এসব ধারায় যাদের নামে মামলা রয়েছে, তারা তালিকাভুক্ত হবেন প্রথম দফায় মুক্তির জন্য।
কারা অধিদফতর থেকে জানা যায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এ ধরনের অপরাধে গ্রেফতার হয়ে বন্দির সংখ্যা ১ হাজার ১৪৮ জন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এ সংখ্যা ১১৮। তবে দেশের জেলা কারাগারগুলোতে এ ধরনের বন্দির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, কারা অধিদতরের নির্দেশে তুলনামূলক লঘু অপরাধে অভিযুক্ত আসামির তালিকা করেছি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এই সংখ্যা মোট ১ হাজার ১৪৮ জন। এমনিতেই এই কারাগারে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দি রয়েছেন। এরপরও করোনার এ প্রাদুর্ভাবের সময় সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে আমরা নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি। প্রয়োজনের তুলনায় স্টাফ কম থাকায় বন্দি ব্যবস্থাপনায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। বন্দি সংখ্যা কমে গেলে আরও ভালোভাবে তদারকি সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, অনেকদিন ধরেই কারাগারে বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এই সংখ্যা কমাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়মানুযায়ী কারাগারে থাকা লঘু অপরাধে অভিযুক্ত আসামিদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কারা কর্তৃপক্ষকে। চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হয়ে এলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের ছেড়ে দেওয়া হলে কারাগারে চাপ কমবে নিঃসন্দেহে। তবে জামিন হবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
কারা কর্তৃপক্ষ কারাগার ছোট আসামি জামিনে মুক্তি জামিনের উদ্যোগ বন্দি মুক্তির উদ্যোগ বন্দিদের মুক্তি লঘু অপরাধ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়