Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে খোলা ৩৭৭ কারখানা, কাজ করছেন লাখো শ্রমিক


৫ এপ্রিল ২০২০ ১৯:২৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে উৎপাদন চালু আছে ৩৭৭টি শিল্প কারখানার। এসব কারখানায় কাজ করছেন লাখেরও বেশি শ্রমিক। কারখানাগুলোর পক্ষ থেকে কর্মরতদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও শিল্প পুলিশ বলছে, মুখে মাস্ক এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ছাড়া অধিকাংশ কারখানায় অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।

দেশজুড়ে ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও কারখানাগুলো খোলা থাকায় কর্মরত শ্রমিক ও তাদের পরিবারে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শুরুতেই জানিয়েছিলেন, সমুদ্রবন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকায় চট্টগ্রাম করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীও শনাক্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলায় সচল শিল্প কারখানা আছে ১ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে সাধারণ ছুটিতে কারখানা চালু আছে ৩৭৭টি। রোববার(৫ এপ্রিল) এসব কারখানা পুরোদমে চালু ছিল। ৩৭৭টি কারখানার মধ্যে ১৮৭টি তৈরি পোশাক কারখানা এবং বাকি ১৯০টি রড-সিমেন্টসহ বিভিন্ন খাতের।

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম ইপিজেডে মোট কারখানা আছে ১৫৮টি। রোববার সচল ছিল ৮০টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা ৬৯টি এবং বাকি ১১টি অন্যান্য খাতের। রোববার সকালে চট্টগ্রাম ইপিজেডের মূল ফটক দিয়ে প্রায় ৯০ হাজার শ্রমিক প্রবেশ করেছেন। প্রবেশের সময় তাদের জীবাণুনাশক স্প্রে করা কিংবা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে দেখেননি স্থানীয়রা।

তবে চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, ২-১ দিনের মধ্যে তাদের সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। শুধুমাত্র শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য কারখানাগুলো খোলা রাখা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ইপিজেডের অদূরে কর্ণফুলী ইপিজেডে ১৫টি কারখানা রোববার চালু ছিল। সেখানে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক সকালে প্রবেশ করেছেন। কর্ণফুলী ইপিজেডের কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক কারখানা।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে কর্ণফুলী ইপিজেডের সব কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি শিল্প এলাকায় চালু আছে ৪৮টি কারখানা।

শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. নাজিমুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিইপিজেডসহ জেলায় বেশকিছু এলাকায় কিছু গার্মেন্টস খোলা আছে। বেশিরভাগ বন্ধ। গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে একসঙ্গে অনেক শ্রমিক ঢোকেন এবং বের হন। সিইপিজেডে আজ (রোববার) একসঙ্গে হুড়োহুড়ি না করে লাইন ধরে দূরত্ব মেনে ঢোকানোর চেষ্টা হয়েছে।’

সূত্রমতে, পোশাক কারখানার বাইরে চট্টগ্রাম জেলায় বিভিন্ন খাতের আরও ৫১৮টি সচল কারখানা আছে। এরমধ্যে ১৯০টি রোববার খোলা ছিল। এসব কারখানার মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলায় আছে ১১৮টি। চালুছিল ৭১টি। বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় ৮২টি শিল্প কারখানার মধ্যে ৪২টিতে পুরোদমে কাজ হয়েছে। প্রত্যেকটি কারখানায় বাহ্যত সুরক্ষার উদ্যোগ আছে। কিন্তু কারখানার ভেতরে সেগুলো সীমিত আকারে।

অধিকাংশ কারখানায় সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুরক্ষা বলতে শুধু মুখে মাস্ক লাগানো এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। এর বাইরে সুরক্ষার কিছুই নেই। সামাজিক দূরত্ব কোথাও দেখিনি। কারখানাগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।’

শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. নাজিমুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘অধিকাংশ কারখানার মেইন গেইটের বাইরে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা আছে। শ্রমিকদেরও নির্দিষ্ট দূরত্বে সারি বেঁধে প্রবেশ করানো হচ্ছে। কারখানার ভেতর দেখার এখতিয়ার আমাদের নেই।’

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের (বিএসআরএম) পাঁচটি কারখানায় কাজ করছেন অন্তঃত চার হাজার শ্রমিক। বিএসআরএম’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার যেভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে বলেছে, আমরা সেভাবেই করেছি। মাস্ক দিয়েছি, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি, সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করা হচ্ছে। শ্রমিকদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর আমাদের কারখানায় অটোমেটিক মিলে উৎপাদন হয়, কাউকে হাত লাগাতে হয় না। সুতরাং ঝুঁকির কোনো বিষয় নেই।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানাও চলছে পুরোদমে। একই এলাকায় খ্যাতনামা শিল্পগ্রুপগুলোরঅধিকাংশই তাদের কারখানা চালু রেখেছে।

রড উৎপাদনকারী এক কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। লকডাউন চলছে। অথচ আমাদের অফিস খোলা রাখা হয়েছে। আমাদের পরিবার আতঙ্কিত অবস্থায় আছে। শ্রমিকরাও নিয়মিত এসে তাদের আতঙ্কের কথা আমাদের জানাচ্ছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে ঝুঁকি নিয়েও আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।’

করোনাভাইরাস কারখানা খোলা চট্ট্রগাম পোশাক কারখানা লাখো শ্রমিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর