অবশেষে চীন থেকে এলো গণস্বাস্থ্যের রিএজেন্ট
৫ এপ্রিল ২০২০ ২২:১৫
ঢাকা: কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতিতে ব্যবহারের জন্য অবশেষে চীন থেকে এলো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের রিএজেন্ট। রোবববার (৫ এপ্রিল) সকালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় এসে পৌঁছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী রোববার (৫ এপ্রিল) রাতে সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বাংলাদেশ ওষুধ প্রশসানের কাছ থেকে গত ১৮ মার্চ রিএজেন্ট আমদানির অনুমোদন পাওয়ার পরই ইংল্যান্ডের দ্যা ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির (THE NATIVE ANTIGEN COMPANY) কাছ দশ প্রকারের ১০০ কেজি রিএজেন্ট আমাদানির জন্য এলসি খোলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এরপর দ্রুততার সঙ্গে রিএজেন্টগুলো সরবরাহের জন্য ইংল্যান্ডের ওই কোম্পানিকে তাগিদ দেয়।
বিষয়টি গুরুত্ব উপলব্দি করে দ্যা ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির (THE NATIVE ANTIGEN COMPANY) গত ২৫ মার্চের মধ্যে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় প্রথম দফায় একবার তারিখ পরিবর্তন করেন ইংল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানটি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তারা জানায়, ৩০ মার্চের মধ্যেই রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেবে তারা। কার্গো বিমানে আকাশপথে আসবে রিএজেন্টগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ৩০ মার্চ রিএজেন্টগুলো হাতে পাওয়া যাবে— এমন হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পুরো প্রস্তুতি নেন। বাংলাদেশের বাজারে থাকা প্রোডাক্টগুলো সংগ্রহের জন্য হোম কোয়ারেনটাইনে যাওয়া ব্যবসায়ীদের বাসা থেকে বের করে আনেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাবরেটরিতে কর্মরত এক্সপার্ট, সাধারণ কর্মী— সবার ছুটি বাতিল করে দিনরাত চলছে কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতির ফর্মুলা আপডেটের কাজ। ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে চলছে কর্মযজ্ঞ। আর অভিভাবক হিসেবে সবাইকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
কিন্তু ৩০ মার্চ বিকেলে ইংল্যান্ডের দ্যা ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির (THE NATIVE ANTIGEN COMPANY) কাছ থেকে খবর আসে, আকাশপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় রিএজেন্টগুলো তারা পাঠাতে পারেনি। তারা চেস্টা করছে, যেকোনো উপায়ে দ্রুত রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছাতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দ্যা ন্যাটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির (THE NATIVE ANTIGEN COMPANY) চেষ্টা করে যাচ্ছিল নিয়মিত কার্গো বিমানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের রিএজেন্টগুলো পাঠাতে। শেষ পর্যন্ত সেটি যদি সম্ভব না হওয়ায় সোমবারের মধ্যে (৬ এপ্রিল) বিশ্বভিত্তিক ডাক পরিষেবা ‘ফিডেক্স এক্সপ্রেস’ (FedEx Express)- এর প্রাইভেট কার্গো বিমানে করে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পাঠাবার ব্যবস্থা নেয় ইংল্যান্ডের ওই কোম্পানি।
এরই মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থাও ভাবতে থাকেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল সীমিত আকারে চালু থাকায় তারা দৃষ্টি ফেরান চীনের দিকে। এ ব্যাপারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে সহযোগিতার জন্য হাত বাড়ান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. আবদুল মোমেন ও চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। এই দুই ব্যক্তির সহযোগিতায় খুব দ্রুততার সঙ্গেই বাংলাদেশে এসে পৌঁছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের রিএজেন্টগুলো।
তবে চীন থেকে আসা এই রিএজেন্টে মাত্র ১০ হাজার স্যাম্পল তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা তো ইংল্যান্ড থেকে রিএজেন্ট আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় সেটি আসতে দেরি হচ্ছে। তাই চীন থেকে সামান্য কিছু রিএজেন্ট নিয়ে এসেছি। এ ব্যাপারে আমাদের পরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ব্যাপক সহযোগিতা করেছেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এতে দ্রুত রিএজেন্ট বাংলাদেশে আসত না।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সকালে বিমানবন্দরে রিএজেন্ট আসার পর এনবিআরের চেয়ারম্যান নিজে গিয়ে মালগুলো দ্রুত খালাস করে দিয়েছেন। আমরা বেলা ১২টার মধ্যে সেগুলো হাতে পেয়েছি। এখন আমাদের প্রয়োজন পাঁচজন রোগীর পাঁচ শিশি রক্ত। আমরা আশা করছি, আগামী ১১ তারিখের মধ্যে সরকারকে স্যাম্পল দিতে পারব।’
ইংল্যান্ড থেকে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আগে অর্ডার দেওয়া ১০০ কেজি রিএজেন্ট চলে আসবে বলেও জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট ‘কেভিড-১৯’ নামক প্রাণঘাতী রোগ নিয়ে গোটাবিশ্ব যখন দিশেহারা, ঠিক তখন একটি ‘ভালো খবর’ দেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা জানান, সহজ পদ্ধতি ও সুলভ মুল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তারা।
ইংল্যান্ড গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র চীন ড. বিজন কুমার শীল ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী রিএজেন্ট