Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারত-পাকিস্তানে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা


৫ এপ্রিল ২০২০ ২৩:২২

শুরুতে নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বললেও কোভিড-১৯ বা করোনা পরিস্থিতি দ্রুতই ভয়াল হচ্ছে ভারত-পাকিস্তানে। ভারতে এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টাতে আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি। আর পাকিস্তানে সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার। আর প্রাণ গেছে ৪৫ জনের।

এনডিটিভি ও পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রাণ হারিয়েছে ১৩ জন। গত মাসে দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজ তাবলীগ জামায়াতের এক ধর্মীয় সমাবশ হওয়ার পরেই দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দেশটির মোট আক্রান্তের ৩০ শতাংশই আলোচিত ওই আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের মাধ্যমে ১৭টি রাজ্য ও ইউনিয়নে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। ওই সমাবেশকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা (হটস্পট) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে ভারতজুড়ে চলছে ২১ দিনের লকডাউন। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। কিন্তু এর মধ্যেও করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে করোনা মোকাবেলায় এতোদিন পাকিস্তান প্রশংসা পেলেও পরিস্থিতি আর তাদের পক্ষে নেই। শুধু গতকালই পাকিস্তানে মারা গেছে ১৩ জন। আর আক্রান্ত চারশো’র বেশি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে মাঠে নামতে হয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। করোনাপরিস্থিতি নিয়ে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি সবাইকে ‘বোকা’ হয়ে না থেকে সচেতন হবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সারাবিশ্ব যখন আক্রান্ত তখন পাকিস্তানিদের আক্রান্ত করবে না- এমনটা বিশ্বাস করা বোকামি। ইমরান আরো বলেন, ভয়ঙকর এই ভাইরাস কাউকেই ছাড় দেবে না। তাই সচেতন হোন, পূর্বসতর্কতা অবলম্বন করুন। নইলে অনেক পাকিস্তানির প্রাণ যাবে।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে এই মহামারি শুরু হলেও এখন ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাসের দাপট বেড়েই চলেছে। নতুন তিনটি দেশ মিলিয়ে করোনাভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ২০৫টি দেশে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৮০১ জন। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৮৬ হাজার মানুষ।

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, গত একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতের সংখ্যা ১৩৩১ জন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ৪৫৫ জনে। এছাড়াও ফ্রান্সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে মারা গেছেন ৯৮৭ জন। যা মৃত্যুর দ্বিতীয় রেকর্ড। এছাড়াও স্পেনে ৭৪৯, ইতালিতে ৬৮১ এবং যুক্তরাজ্যে ৭০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে করোনার উৎপত্তি স্থল চীনে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে মাত্র ৬ জন। গতবছরের ১০ ডিসেম্বর প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রোগটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনে দেশটি।

ডিসেম্বরে থেকে শুরু করে গত চারমাসে করোনাভাইরাসের মৃত্যু হার বেড়ে বর্তমানে ২১ শতাংশ। মৃতদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও হালে মধ্যবয়সী এবং যুবক এবং শিশু মৃত্যু হারও বাড়ছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় রোববার বিকেল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজারে। মোট মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার মানুষের। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার জন। বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী আছেন প্রায় নয় লাখ। এদের মধ্যে ৪৫ হাজার রোগীর অবস্থা আশংকাজনক।

আক্রান্তের সংখ্যায় সবার ওপরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১২ হাজার জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪৫৫ জনের। মৃত্যুর দিক দিয়ে সবার ওপরে রয়েছে ইতালি। দেশটি যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ইতালিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ২৫ হাজার জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৩৬২ জনের। এরপরই রয়েছে স্পেন। সেখানে এখন পর্যন্ত মৃত ১২ হাজার ৪১৮ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৩১ হাজার।

বিশ্বে মহামারীতে পরিণত হওয়া করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়া রোগের মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।

করোনা করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর