মসজিদে জামাত বন্ধের ঘোষণা দিয়ে মুয়াজ্জিনের কান্না
৬ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৪৪
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে আরও বেশি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। এ পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়াতে মুসল্লিদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। রাজধানীর অনেক এলাকাতেই মসজিদ থেকে মাইকিং করে সে ঘোষণার কথা জানিয়ে দিয়েছেন মুয়াজ্জিনরা। তারা ঘোষণায় জানিয়েছেন, জামাত আদায়ের জন্য মুসল্লিরা যেন মসজিদে না যান।
সোমবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর বাড্ডা-শাহজাদপুর এলাকায় আসরের আজানের পর মসজিদ থেকে মাইকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে নজিরবিহীন এমন ঘোষণা দিয়ে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মুয়াজ্জিন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিষয়টি মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিনিয়ত মসজিদের মাইকে আজান ছাড়াও শোক সংবাদ, পানি সংকট অথবা শিশুদের টিকা সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হতো। কিন্তু আজকের ঘোষণাটি একেবারে ভিন্ন। এদিন আসরের আজানের পর আশপাশের সবগুলো মসজিদের মাইক থেকে মুসল্লিদের মসজিদে না যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়।
আগে থেকেই নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যেতে নিরুৎসাহিত করা হলেও অনেকেই মসজিদেই নামাজ আদায় করেছেন। এদিনও আসরের আজান শুনে যখন কেউ কেউ মসজিদে যাবেন বলে ভাবছিলেন, তখনই মসজিদ থেকে দেওয়া হয়েছে এ ঘোষণা। বাড্ডা-শাহজাদপুর এলাকার অধিবাসীরা বলছেন, নিজেদের জীবদ্দশায় এমন অভিজ্ঞতা কারও নেই। এমনটি হতে পারে, তা কল্পনাতেও ছিল না তাদের।
মসজিদের ঘোষণায় বলা হয়, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মসজিদে জামাত বন্ধ থাকবে। সব মুসল্লিদের অনুরোধ করা যাচ্ছে, আপনারা যার যার বাসায় নামাজ আদায় করে নেবেন। পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া পর্যন্ত মসজিদে জামাত বন্ধ থাকবে।
https://youtu.be/DQvZe4DNkSI
উত্তর বাড্ডার সিদ্দিকীয়া জামে মজদিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা আরিফ বিল্লাহ জামাত বন্ধের ঘোষণা দিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর করোনা থেকে মুক্তি চেয়ে সবার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
একই কাজ করতে হয়েছে শাহজাদপুর ঈদগাহ মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা নুরুল ইসলামকেও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমি আমার জীবনে কোনোদিন এমন ঘোষণা দেওয়া তো দূর কথা, শুনিইনি। কখনো ভাবিনি, এমন ঘোষণা দিতে হবে।
১৪ বছর ধরে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করা নুরুল ইসলাম আরও বলেন, মসজিদে গেলেই কান্না পাচ্ছে। যেখানে আজান হলে মসজিদ মুসল্লিতে ভরে যেত, সেখানে মুসল্লিরা আসবেন না, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। আজান দিয়ে মুসল্লিদের মসজিদে ডাকছি, আবার ঘোষণা দিচ্ছি তারা যেন না আসেন। এ এক কঠিন পরিস্থিতি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিন।
তবে এ পরিস্থিতি মেনেও নিচ্ছেন এই মুয়াজ্জিন। তিনি বলেন, পরিস্থিতিতি বিবেচনায় মক্কা-মদিনায় পর্যন্ত মসজিদে জামাত বন্ধ। এখানেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের কষ্ট হলেও বাস্তবতা বিবেচনায় বিষয়টি মেনে নিতে হবে। মুসল্লিদেরও বিষয়টি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মসজিদে না গিয়ে মুসল্লিদের নামাজ ঘরে পড়ার নির্দেশ দিয়ে সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ভয়ানক করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদের ক্ষেত্রে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা ছাড়া অন্য সব মুসল্লিকে সরকারের পক্ষ থেকে নিজ নিজ বাসায় নামাজ আদায় করতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, মসজিদে জামাত চালু রাখার প্রয়োজনে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ অনধিক পাঁচ জন এবং জুমার জামাতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন। বাইরের মুসল্লি মসজিদে জামাতে অংশ নিতে পারবেন না। জুমার নামাজের পরিবর্তে বাসায় শুধু জোহরের নামাজ পড়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে জরুরি ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এ ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও নিজ নিজ ঘরে উপাসনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিজ্ঞপ্তি আরও জানানো হয়েছে, সারাদেশে কোথাও ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ মাহফিল, তাফসির মাহফিলের আয়োজন করা যাবে না। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই নির্দেশ লঙ্ঘন করলে প্রশাসন আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।