Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজধানীতে বেড়েছে মাদকাসক্তদের আনাগোনা, ১০০ টাকার জন্য রানা খুন!


৯ এপ্রিল ২০২০ ২০:৫৯

ঢাকা: রাজধানীর মগবাজার আউটার সার্কুলার রোডে মঙ্গলবার ভোরে খুন হয় ‘রানা দাদা’ নামের পঞ্চশোর্ধ্ব বয়সী এক মাদকাসক্ত। তার গলায় গুরুতর জখম ছিল। রক্তাক্ত ছিল সমস্ত শরীর। সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিপন (২১) নামের আরেক মাদকাসক্ত খুনের সঙ্গে জড়িত। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) ডিএমপির রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ মোহাম্মদ শামীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রমনা মডেল থানা-পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ৮ ঘণ্টার মধ্যেই রিপনকে গ্রেফতার করে। গত বুধবার (৮ এপ্রিল) তাকে আদালতে পাঠালে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয় রিপন। জবানবন্দিতে রিপন স্বীকার করেছে যে, নেশা এবং ১০০ টাকা নিয়েই মূলত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে সে।’

বিজ্ঞাপন

রিপন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, রানা ও রিপন দুজনই মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে ভাসমান অবস্থায় থাকত। ঢাকায় তাদের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। রিপনের কাছে রানা ১০০ টাকা পেত। ঘটনার দিন রাত সাড়ে তিনটার দিকে রানা পাওনা টাকা চাইলে রিপন টাকা দিতে পারবে না বলে জানায়। এতে রিপনকে গালাগালি করে রানা। এক পর্যায়ে রিপনকে ইট দিয়ে আঘাত করে সে। এরপর রিপন ক্ষিপ্ত হয়ে পাশে পড়ে থাকা টিউব লাইট দিয়ে রানার ঘাড়ে আঘাত করে। এতে গলার চামড়া কেটে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এ সময় পালিয়ে হাতিরঝিলে এক ভাঙারির দোকানে আশ্রয় নেয় রিপন।

মগবাজারে রানা হত্যার বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে পুলিশ জানায়, রানার দীর্ঘ দিনের প্রতিবেশী রিপন (২১)। তারা দুজনই মাদকাসক্ত। মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে একসঙ্গে ঘুমাত, একসঙ্গে নেশা করত। তারা দুজনই ভাঙারি টোকাই। রানার কাছ থেকে বেশ কিছুদিন আগে ১০০ টাকা ধার নেয় রিপন। মঙ্গলবার ভোররাতে নেশার টানে রিপনের কাছে পাওনা টাকা চায় রানা। এ নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরই এক পর্যায়ে রাস্তার পাশে থাকা টিউব লাইট দিয়ে রানার গলায় আঘাত করে রিপন। এতে গুরুতর আহত হয় রানা। প্রচণ্ড রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে। ভোরে টহল পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসকেরা ভোর ৪টা ২০ মিনিটের দিকে মৃত ঘোষণা করে রানাকে। এরপর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে রিপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

রিপনের বিষয়ে সহকারী কমিশনার শামীম বলেন, ‘রিপনের মা আছে। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তিনি জানিয়েছেন মানুষের বাসায় কাজ করে খান। ১৮ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। ছেলের সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি ছেলের পরিচয় দেন না। ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করেছিলেন। মাদ্রাসায় ভর্তিও করেছিলেন। কিন্তু সে মানুষ হয়নি, নেশা করে বেড়ায়।’

সহকারী পুলিশ কমিশনার শামীম আরও বলেন, ‘ঢাকার সড়ক ও ফ্লাইওভারের নিচে বাস করা ভাসমান মানুষের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত। এরা একটা সিগারেটের জন্যও মানুষ খুন করতে পারে। কিছুদিন আগে এসব মাদকাসক্তদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট সংকটের সময় এরা ফের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে।’

পারভেজ নামের আরেক ভাসমান ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছে, রিপন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করে বলছিল রানাকে পোঁচ মেরেছি। রিপন রক্তাক্ত অবস্থায় দুই থেকে তিন মিনিট হাঁটার পরই রাস্তার পাশে ফুটপাতে পড়ে যায়। রিপন রাস্তার যেখান দিয়ে হেঁটে গেছে সেই স্থানগুলোতে রক্তের ছাপ পেয়েছে পুলিশ।

রমনা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মাহফুজ জানান, এসআই মো. মুহিবুল্লাহ্ রাত্রকালীন নিয়মিত ডিউটির সময়ে মঙ্গলবার ভোর পৌনে চারটায় মগবাজারের ২১৭/এ আউটার সার্কুলার রোডে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় একজনকে পায়। তিনি দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ভোর ৪টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রমনা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ মার্চ রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীর হাজীরবাগে মাদকাসক্ত সজীবের (১৭) ছুরিকাঘাতে নিহত হন তার মা সুরাইয়া আক্তার (৪৫)। প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাযহারুল ইসলাম বলেন, ‘গৃহকর্মীর কাজ করে ছেলেকে মানুষ করছিলেন সুরাইয়া। তবে সজীব মাদকাসক্ত ছিল। ঘটনার রাতে নেশার জন্য মায়ের কাছে টাকা চায় সে। টাকা না দেওয়ায় অনেকক্ষণ ঝগড়া করার পর বাসার সামনের রাস্তায় সুরাইয়াকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনায় ওই দিনই সজীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।’

আনাগোনা খুন ফ্লাইওভার মগবাজার মাদকাসক্ত রাজধানী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর