৯ দিনে চুরি ২ হাজার ২৬৪ বস্তা চাল: রিজভী
১২ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৪৪
ঢাকা: গত ৯ দিনে সারা দেশে ২ হাজার ২৬৪ বস্তা ত্রাণের চাল চুরির তথ্য দিয়েছে বিএনপি! বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত খবর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণমাধ্যকর্মীদের কাছ থেকে এ তথ্য জোগাড় করা হয়েছে— এমনটিই দাবি দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর।
রোববার (১২ এপ্রিল) ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে তিনি এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
রিজভী বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যমতে গত ৯ দিনে পাথরঘাটা উপজেলায় ৫৫০ বস্তা, বগুড়ায় ১০০ বস্তা, নাটোরে ১৩ বস্তা, জয়পুরহাটে ৭ বস্তা, যশোরে ৮০ বস্তা, যশোরের মণিরামপুরে ৫৫৫ বস্তা, ঝিকরগাছায় ১ বস্তা, নওগাঁয় ৩৩৮ বস্তা, বাগেরহাটে ১৮ বস্তা, পটুয়াখালীতে ১০ বস্তা, ঝালকাঠিতে ৫০ বস্তা, সিলেটে ১২৫ বস্তা, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ১৬ বস্তা, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৮৮ বস্তা, গাবতলী উপজেলায় ১০০ বস্তা ও শিবগঞ্জে ১৩ বস্তা চাল চুরির তথ্য পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সমগ্র দেশে কয়েক কোটি হতদরিদ্র এবং বেকার মানুষ অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে। করোনার বিস্তার রোধে সবাই ঘরবন্দি হয়ে থাকায় দিনমজুর, ক্ষুদ্র কৃষক, শ্রমিকসহ গরিব মানুষের একটি বড় অংশ কর্মহীন।তাদের এই কষ্ট লাঘবের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্পমূল্যে চাল এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
‘কিন্তু করোনাভাইরাসের মতো এত বড় মহামারির মধ্যেও ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজরা ত্রাণ ও স্বল্পমূল্যের চাল আত্মসাৎ করছে’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সরকারি হিসাবে দেশের খাদ্য গুদাম গুলোতে সাড়ে ১৭ লাখ টন চাল মজুদ আছে। এই পরিমাণ চাল দিয়ে ৩/৪ কোটি মানুষকে ৬ মাস অনায়াসে খাওয়ানো সম্ভব। অথচ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় পড়ে থাকছে।’
সরকার যে পরিমাণ চাল বিতরণ করছে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয় অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসাবে যোগ হয়েছে চাল চুরির মহা উৎসব। পত্র-পত্রিকায় প্রতিদিন যে পরিমাণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে, তার চেয়ে চাল চোরের সংখ্যা বেশি। জীবনবিনাশী করোনাভাইরাসের আক্রমণ ও আওয়ামী লীগের চাল চুরি চলছে সমান তালে।’
চাল চুরির ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই বেশি জড়িত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে পত্রিকার পাতা জুড়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের চাল চুরির খবর প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ফলে লুটেরা গোষ্ঠী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের লাগাম এখনই টেনে ধরুন। না হলে জনগণ রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’
রিজভী বলেন, ‘সরকারের দুঃশাসনের কুফল দেখতে পাচ্ছে সমগ্র জাতি। মরণঘাতী করোনা ভাইরাস যখন প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজকে থমকে দিয়েছে তখন বাংলাদেশে চলছে দরিদ্র মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার মচ্ছব। বিদ্যুতের উন্নয়নে দেশ নাকি আলোয় ঝলমল করছে। অথচ বিদ্যুতের অভাবে করোনার কিট উৎপাদন করতে পারছে না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।’
বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের সাধ্যমতো জনগণের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর মতো পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বসে নেই। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এবং ড্যাব’র উদ্যোগে গত শুক্রবার থেকে দেশের ৮৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে জন্য পরসোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেছে। এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
রিজভী বলেন, ‘সময়মত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার মাশুল হিসেবে করোনা তৃতীয় ধাপ অতিক্রম করছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। সামনে সর্বোচ্চ সতর্ক না হলে চতুর্থ ধাপে পৌঁছালে সেটা আর সামাল দেওয়া যাবে না। অকল্পনীয় পরিণতি বরণ করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে গতকাল আবারও বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরস আধানম গোব্রিয়াসেস।’