Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনশুমারিতেও করোনার ধাক্কা


১৫ এপ্রিল ২০২০ ১২:১২

ঢাকা: করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। অর্থনীতিতে এসেছে স্থবিরতা। এই ভাইরাসের ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবচেয়ে বড় কাজ জনশুমারিতেও। ১০ বছরের বিরতিতে চলতে থাকা এই কার্যক্রমের পরবর্তী ধাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের শুরুতেই। সে লক্ষ্যেই চলছিল ব্যুরোর প্রস্তুতিমূলক কাজ। করোনার কারণে থেমে গেছে তার সব উদ্যোগই। সূত্র বলছে, অঘোষিত লকডাউন  দীর্ঘায়িত হলে শেষ পর্যন্ত মূল শুমারিও পিছিয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্র বলছে, ২০২১ সালের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি সারাদেশের মানুষ  ও বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসীদের গণনার সময় ধরে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছিল বিবিএস। সে লক্ষ্যে ২ এপ্রিল থেকে  দেশব্যাপী লিস্টিং কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল। করোনার কারণে সে কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি।

জানতে চাইলে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, বাস্তব অবস্থার কারণে মাঠ পর্যায়ে শুমারির সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এসব কাজ  আপতত বন্ধ রেখেছি। তবে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হলে সেক্ষেত্রে বেশি বেশি কাজ করে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হবে।

শুমারি পিছিয়ে যেতে পারে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, মূল শুমারি কার্যক্রম শুরু হতে এখনো কয়েকমাস দেরি আছে। তাই এখনই বলা যচ্ছে না যে শুমারি পেছাতে হবে কি না। সবকিছু নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। চলমান অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে সে আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সূত্র জানায়, জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু করেছে বিবিএস। আর ২০২১ সালের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি সারাদেশের সব মানুষকে গণনা করা সময় নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় শুমারির গণণা কাজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে দেশব্যাপী খানা তালিকা প্রণয়ণ বা লিস্টিং কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল। শুমারিতে অংশ নেওয়া সারাদেশের গণণাকারীদের পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, প্রথমবারের মতো বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদেরও গণণার আওতায় নিয়ে আসার কথা ছিল এ বছর। করোনার কারণে সে কার্যক্রমও স্থগিত রয়েছে। এ অবস্থায় শুমারি ঘিরে পুরো কার্যক্রমই থমকে গেছে। এ অচলাবস্থা কাটাতে কত সময় লাগবে, তাই এখন ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনশুমারি ও গৃহগণণা প্রকল্পের পরিচালক জাহিদুল হক সরদার সারাবাংলাকে জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে একনেক সভায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। শুমারির জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুমারি বাস্তবায়ন পদ্ধতি অবহিতকরণ এবং খানা তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রমে ব্যবহৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের মতামত নেওয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

জাহিদুল হক বলেন, মার্চ ও এপ্রিল মাসের যেসব নির্ধারিত কার্যক্রম ছিল, সেগুলো বাধা পেয়েছে করোনায়। এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে কিছুটা সমস্যা হবে। তবে মূল শুমারি কার্যক্রম পেছাবে কি না, সেটি এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। সেটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।

পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্র জানায়, পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী আদমশুমারিকে জনশুমারি হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দেশে সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ সালে  পরিচালিত হয়েছিল। ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি জিরো আওয়ারকে শুমারির রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে দেশব্যাপী শুমারির মূল গণনা কার্যক্রম ২ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী পরিচালিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এছাড়া শুমারি চলাকালীন ২ থেকে ৮ জানুয়ারি শুমারি সপ্তাহ পালন ও শুমারি শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার একটি সার-সংক্ষেপও অনুমোদিত হয়েছে। খানা তালিকা  প্রণয়ণের জন্য প্রথমবারের মতো এ শুমারিতে মূল শুমারির আগে লিস্টিং অপারেশন পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর জন্য প্রতিটি খানার জন্য একটি ইউনিকোড  হাউজহোল্ড আইডি দেওয়ার কথা।

এবারের শুমারিতে প্রথমবারের মতো তথ্য সংগ্রহের জন্য মাল্টিমোড বা একাধিক ধরনের পদ্ধতির প্রয়োগ করার কথা রয়েছে। এসব পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে মোবাইল অ্যাপ, ওয়েব অ্যাপ, পিক অ্যান্ড ড্রপ, পেপার বেজড, কল সেন্টার ইত্যাদি। এর মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো সীমিত আকারে ই-সেন্সাসও পরিচালনা করা হবে। এ শুমারিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিক ও বিদেশে অবস্থানরত ভ্রমণরত বাংলাদেশি নাগরিকদেরও গণনা করা হবে বলে পরিকল্পনায় রয়েছে।

করোনাভাইরাস জনশুমারি ধাক্কা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর