৫ দিনেই আক্রান্ত হাজারের বেশি, মৃত্যু ৩০ জনের
১৬ এপ্রিল ২০২০ ২০:০৩
এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এই সময়ে এসে রীতিমতো গুণোত্তর ধারায় বাড়ছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। এই সংক্রমণের হার এতটাই বেড়েছে যে এখন পর্যন্ত দেশে দেড় হাজারের বেশি করোনা সংক্রমণের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ এক হাজারেরও বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে কেবল গত ৫ দিনে। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত যে ৬০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তার অর্ধেকই মারা গেছেন এই পাঁচ দিনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিন থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৭২ জন। এর মধ্যে সবশেষ পাঁচ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৯০ জন, যা মোট আক্রান্তের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি। শতাংশের হিসাবে এই পাঁচ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা মোট আক্রান্তের ৬৯ শতাংশেরও বেশি।
করোনা: লাইভ আপডেট
এদিকে, মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ৯৬ শতাংশেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছেন এই এপ্রিল মাসে। ১৫৭২ জনের মধ্যে ১৫২১ জনই আক্রান্ত হয়েছেন এপ্রিলে। মার্চে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫১ জন।
এদিকে, এই পাঁচ দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ৮ মার্চ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন ৬০। এর মধ্যে গত পাঁচ দিনেই মারা গেছেন এর ঠিক ঠিক অর্ধেক— ৩০ জন। এই পাঁচ দিনের আগেই এপ্রিল মাসে মারা গেছেন আরও ২৫ জন। অর্থাৎ এপ্রিলে মোট কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ৫৫ জনের। মার্চে মারা গিয়েছিলেন পাঁচ জন।
টানা বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
গত পাঁচ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই পাঁচ দিনে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা। পাঁচ দিনের প্রথম দিনে ১২ এপ্রিল দেশে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ১৩৯ জন। পরদিন ১৩ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮২ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি।
১৪ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা প্রথমবারের মতো দুইশ’র ঘর ছাড়ায়। এদিন ২০৯ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানায় অধিদফতর। আগের দিনের চেয়ে যা প্রায় ১৫ শতাংশ বা ২৭ জন বেশি।
১৫ এপ্রিলে গিয়ে আগের দিনের চেয়ে ১০ জন বেশি আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়, যা ৫ শতাংশেরও কম। তবে সে স্বস্তি স্থায়ী হয়নি। আজ ১৬ এপ্রিল এ যাবৎকালে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এদিন একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনশ’র ঘর পেরিয়েছে। ৩৪১ জন শনাক্ত হওয়ার এই সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে ১২২ জন বেশি, যা ৫৫ শতাংশেরও বেশি।
আরও পড়ুন- করোনা মহামারি, ঘোষণা যেকোনো সময়
কেবল আক্রান্ত নয়, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গত ১১ এপ্রিল এই ভাইরাসে আক্রান্ত ছয় জন মারা গিয়েছিলেন, যা ছিল একদিনে মৃত্যুর হিসেবে সর্বোচ্চ। সবশেষ পাঁচ দিনের মধ্যে ১২ ও ১৫ এপ্রিল মারা গেছেন চার জন করে। ১৩ এপ্রিল মারা যান ৫ জন, ১৪ এপ্রিল সেদিন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ৭ জনের মৃত্যু ছিল করোনাভাইরাসে। আর আজ ১৬ এপ্রিল এই ভাইরাসে আক্রান্ত ১০ জন ব্যক্তি মারা গেছেন। এর আগে একদিনে এত বেশি কোভিড-১৯ রোগী মারা যাননি দেশে।
বিশ্ব প্রবণতার সঙ্গে মিলছে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ
বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায়, শুরুর মাসখানেক পর্যন্ত সংক্রমণ ছিল সীমিত পরিসরে। এরপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে তা বাড়তে শুরু করার পর আর থামানো যায়নি। ঠিক সেই একই প্রবণতা দেখা গেছে বাংলাদেশেও।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপর গোটা মার্চজুড়ে কোনো দিন দুই জন, কোনো দিন তিন জন, কোনো দিন চার জন— এভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বেশ কয়েকদিন সংক্রমণ ছিলও না। তাতে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মার্চের ২৩ দিনে আক্রান্ত ছিল ৫১ জন।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৪ বা ৫ এপ্রিলকে সেই সুনির্দিষ্ট সময় বলা যেতে পারে। এর মধ্যে ৪ এপ্রিল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯ জন। পরদিন ৫ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা হয় দ্বিগুণ— ১৮ জন। এর পরদিনও আক্রান্তের সংখ্যা হয় প্রায় দ্বিগুণ— ৩৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকার ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো শতাধিক করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। সেদিন ১১২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন।
এরপর ১০ ও ১১ এপ্রিল আগের দিনের তুলনায় শনাক্তের সংখ্যা কম থাকলেও ১২ এপ্রিলের পর থেকে প্রতিদিনিই আগের দিনের চেয়ে বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর এরই মধ্যে সারাদেশকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
সতর্কতার বিকল্প নেই
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই চিত্র কতটা উদ্বেগজনক— জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, এ পরিস্থিতিতে নিরুদ্বিগ্ন থাকার কোনো সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টরা শুরু থেকেই বলছিলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সংক্রমণ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অন্য দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও হয়তো আরও বেশি সংক্রমণ আমরা আগামী দিনগুলোতে দেখব।
এ অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, প্রত্যেককেই সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। কোনোভাবেই প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর যে গাইডলাইন দিয়েছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলতে হবে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা সারাবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। বারবার করে যেসব বিষয় মেনে চলতে বলা হচ্ছে, সেগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
আইইডিসিআর করোনা পরিস্থিতি করোনাভাইরাস করোনায় আক্রান্ত কোভিড-১৯ কোভিড-১৯ আক্রান্ত বাড়ছে করোনা রোগী স্বাস্থ্য অধিদফতর