১১ দাবিতে চা শ্রমিকদের ভুখা মিছিল, ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
২০ এপ্রিল ২০২০ ০১:১৮
মৌলভীবাজার: ১২ সপ্তাহ ধরে মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকার প্রতিবাদে ‘ভুখা বিক্ষোভ মিছিল’ করেছেন চা শ্রমিকরা। এই কর্মসূচি থেকে ১১ দফা দাবি পূরণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা।
রোববার (১৯ এপ্রিল) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত কালিটি চা-বাগান থেকে কূলাউড়া অভিমুখে ‘ভুখা বিক্ষোভ মিছিল’ অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর ও রাঙ্গিছড়া চা বাগানের শ্রমিক ও নেতারা এই কর্মসূচিতে সংহতি জানান।
শ্রমিকরা প্ল্যাকার্ড ও খালি থালা-বাসন নিয়ে এই ভুখা মিছিলে অংশ নেন। কালিটি চা বাগান থেকে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা পর কুলাউড়া পৌঁছান তারা। শ্রমিকরা বলছেন, কালিটি বাগানটি ‘জোবেদা টি কোম্পানি’র নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া। বাগানের এক হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৫৩৭ জন স্থায়ী। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে তাদের মজুরি পরিশোধের কথা থাকলেও ১২ সপ্তাহ ধরে মজুরি দেওয়া হচ্ছে না তাদের। বাগানের শ্রমিক সরদার ও স্টাফদেরও ১১ মাসের বেতন আটকা পড়ে আছে।
বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার বলেন, ‘শ্রমিকেরা এমনিতেই সামান্য মজুরি (প্রতিদিন ১০২ টাকা) পান। এরপর ১২ সপ্তাহ থেকে কেউ সেই মজুরি পাচ্ছেন না। কাজ করেও মজুরি মিলছে না। ঘরে চাল-ডাল নেই। উপোষ থাকতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করছে।’
চা শ্রমিক সন্তান মোহন রবিদাশ জানান, ১১ দফা দাবিগুলোর ভেতরে শ্রমিকদের ১২ সপ্তাহের মজুরি এবং সর্দার ও স্টাফদের ১১ মাসের বেতনের কথা বলা হয়েছে। এখানে খাবার পানির একমাত্র কূপটি শুকিয়ে যাওয়ার পানির সংকট দেখা দেওয়ায় পানির সংকট দূর করা, তিন মাস ধরে বন্ধ থাকা বাগানের হাসপাতাল চালু করা, চা শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত দেওয়া, সম্প্রতি ঢাকা থেকে আসা কয়েকজনকে কোয়ারেনটাইনে নেওয়াসহ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার মতো দাবিও রয়েছে ১১ দফার মধ্যে।
চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সম্ভু চৌদুরী দাশ বলেন, বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা। শ্রমিকদের আগের মজুরিরও বেশ কিছু টাকা বকেয়া পড়ে আছে। অনেক শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচাঘরে বাস করছেন। এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অবসরে যাওয়া শ্রমিকেরা তহবিলের টাকা পাচ্ছেন না।
মজুরি বন্ধের বিষয়ে কালিটি বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দাশ সারাবাংলাকে বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে যথাসময়ে টাকা না পাওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাগানের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১১ মাসের বেতন বন্ধ আছে বলেও জানান তিনি।
কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম শফি আহমেদ সলমান সারাবাংলাকে বলেন, মালিকের সঙ্গে কথা বলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করব। তা না করতে পারলে মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।