Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাজীপুরে দায়িত্বশীলদের দায়হীন বসা নিয়ে খোঁচা প্রধানমন্ত্রীর


২০ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৪০

ঢাকা: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে দায়িত্বশীলদের বসা নিয়ে খোঁচা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে না ভিডিও কনফারেন্সে রুমে বসায় প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা যে রকম ঠাসাঠাসি করে বসেছেন, তাতে তো আদৌ…।’

সোমবার (২০ এপ্রিল) ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময় স্বাস্থ্য বিধি অনুসারে সামাজিক দূরত্ব পরিহার করে কাছাকাছি দুরত্বে বসতে দেখা গেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে। আজ ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বিভিন্ন সময় চার দফায় ৪৩টি জেলায় জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ভিডিও কনফারেন্সে কাছাকাছি বসা দেখে প্রধানমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘এত ঘন হয়ে বসে তো..।’ প্রধানমন্ত্রী ওই সময় আর কিছু না বলে গাজীপুর জেলা প্রশাসককে বক্তব্য শেষ করার নির্দেশ দেন।

পরে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি তার নিজের চেয়ার ছেয়ে জেলা প্রশাসকের পাশে এসে কথা বলেন। এসময় তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর অনেকটা গা ঘেঁষে দাঁড়ান। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধির বক্তব্য শুরুতে দূরত্ব বজায় রেখে না বসায় প্রধানমন্ত্রী আবারও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা যে রকম ঠাসাঠাসি করে বসেছেন, তাতে তো আদৌ…।’

ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুর থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গাজীপুর জেলার নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার বলেন, ‘যে কারখানাগুলো খোলা রয়েছে তারা কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। চাকরি টিকিয়ে রাখতে মেয়েরা একহাতে কোলের বাচ্চা নিয়ে আরেক হাতে ব্যাগ নিয়ে আসছে। আমরা অনেক উদার মালিক দেখেছি। যারা মার্চ মাসেই দুই মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছেন। আবার এখনও অনেক মালিক রয়েছেন যারা বেতন দেবেন বলে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে আসছেন। কিন্তু বেতন দিতে পারছেন না। এটা লকডাউন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেক বড় অন্তরায়। আমাদের এটা নিয়ে ভাবতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমদিকে গাজীপুরের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করে আমরা অনেক ভালো রেখেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বার গার্মেন্ট খুলে দেওয়ার প পর শ্রমিকরা আসতে শুরু করলো তখন নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় ২৫ জন করোনা শনাক্ত হলো। আমাদের জেলাটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। আবার যদি শ্রমিকরা এভাবে আসা-যাওয়া করেন তাহলে বেগ পেতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে যারা ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন তাদের নিরাপদ রাখতে সুনির্দিষ্টভাবে আপনার দিক নির্দেশনা প্রয়োজন। আর গাজীপুরে অনেক ভাসমান মানুষ রয়েছেন। তাদের ঘরে রাখতে হলে অবশ্যই ত্রাণ সঠিকভাবে বিতরণ করতে হবে।’

গার্মেন্ট কারখানার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছে অভিযোগ তুলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ীরা কিন্তু সুযোগ নিচ্ছেন। পিপিই বানানোর কথা বলে শ্রমিকদের ডেকে এনে অন্য পণ্য বানাচ্ছেন। তারা শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে। কত প্রয়োজন হয় তাদের? বঙ্গবন্ধু যেমনটা বলেছিলেন আমার কৃষক আমার শ্রমিক তো চোর নয়। তারা তো কিছু চায় না। একমুঠো ভাতই তাদের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যাদের আছে যারা শিক্ষিত…. তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক কিন্তু এখনও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।’

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্মেন্ট শিল্প চালুর ব্যাপারে বলেন, ‘এটা সত্য যে কিছু কিছু শিল্প আছে যাদের পণ্য রফতানি হবে। এজন্য আমাদের লক্ষ্য আছে কিছু কিছু খোলা রাখা। আর কিছু কিছু চালু করতেই হবে। বিশেষ করে আমাদের ওষুধ শিল্প, অ্যাপ্রোন থেকে শুরু করে, হেড ক্যাপ, সু-ক্যাপ এগুলো যারা তৈরি করছে তাদের জন্য খোলা রাখতেই হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্দেশে বলেন, ‘যেসব মালিকেরা কারখানা খুলতে চান, তারা স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে কীভাবে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেবেন তা আলোচনা করে ঠিক করতে পারেন। কারখানার মধ্যে কোনও ফাঁকা জায়গা থাকে সেখানে যদি তাদের থাকার ব্যবস্থা করা যায়। যেখানে তারা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা যেখানে আছে তারাও সেখানে সেই ব্যবস্থা করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গার্মেন্ট শ্রমিকদের কত পার্সেন্ট আসতে চায় তা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তাদের আনতে হলে আনার ও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় থাকতে পারে। তাহলে তারা এটা চালু করতে পারবে। এই জিনিসটা আপনাদের দেখা উচিত এবং সেভাবে আলোচনা করা উচিত। এটিও ঠিক সামনে রোজা সবাইকে একেবারে বন্ধ করে রাখতে পারব না। আস্তে আস্তে কিছু কিছু জায়গায় উন্মুক্ত করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গাজীপুরে এ রোগের প্রাদুর্ভাবটা খুব বেশি দেখা দিচ্ছে। আপনাদের চিন্তা করতে হবে ২৪ বা ২৫ তারিখে চালু করা ঠিক হবে কি না? এটা বুঝে নিয়েই শিল্প খোলার কথা বা সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে। তবে বলবো না যে একদম বন্ধ থাকুক সীমিত আকারে সেই পরিমাণ শ্রমিক আসতে হবে। তারা সেভাবে চালু করতে পারবে। মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এটা ঠিক করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এরপরে আমরা বসব। নেতাদের (গার্মেন্ট মালিক) সঙ্গে আমি এ বিষয়ে বসবো কথা বলব।’

করোনা ভাইরাস সংকট চলাকালীন হঠাৎ করে শ্রমিক আনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘গতবার হঠাৎ সুপারভাইজারদের দিয়ে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে এলো। পরের দিনই বলেছিল চলে যাও- এটা ঠিক হয়নি। এই আসা-যাওয়ায় শ্রমিকরা যে কষ্টটা পেয়েছে। যোগাযোগের সব বন্ধ, মাইলের পর মাইল হেঁটে হেঁটে এই মেয়েরা পৌঁছাইছে। এভাবে যেন আর তাদের বিড়ম্বনায় না পড়তে হয়।’

তার আগে জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুর একটি শিল্প সমৃদ্ধ জেলা। বর্তমানের জেলায় ৩৫টি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিসহ মানুষের খাবার, মুরগি ও মৎস্য খাবার, পোল্ট্রি হ্যাচারি এবং ১৮টি পিপিই প্রস্তুতকারীসহ ১২০ প্রতিষ্ঠানের বিশেষ উপায় চালু আছে। বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে, আগামী ২৬ এপ্রিল রফতানিমুখী অনেক গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলবে বলে জানিয়েছেন। শ্রমিকদের আসার জন্য পর্যাপ্ত বাস চেয়েছেন তিনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমাদের ১২০টি প্রতিষ্ঠানের চালু রাখতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। সেখানে যদি আরও প্রতিষ্ঠান চালু হয় তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা আমাদের জন্য দুরূহ হবে। স্বাস্থ্যবিধি কী হবে এটা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকতে হবে।’

এছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে অবস্থিত ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা সংক্রামণের কথা তুলে ধরে বলেন বলেন, ‘আমার মায়ের নামে গাজীপুরে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে। আমি জানতে পেরেছি সেখানকার ৩০ জন ডাক্তার নার্স করোনায় আক্রান্ত। তারা বোধ হয় হাসপাতালটা বন্ধ করতে চাচ্ছেন। আমি অবশ্য তাদের প্রস্তাব দিয়েছি যদি প্রয়োজন হয়ে ওখানে করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি। তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি আছে। আমরা ওই হাসপাতালটা ব্যবহার করতে পারি। ৫০০ বেডের হাসপাতালে আড়াাইশো বেড চালুর ব্যবস্থা সেখানে আছে। এটা চালু করার সুযোগ রয়েছে। হাসপাতালাটা মালয়েশিয়ানরা চালাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে দেখা যেতে পারে। জেলা প্রশাসন এটা নিয়ে আলোচনা করতে পারে।’

করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর