Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির দাবিতে ১৫১ জন নাগরিকের বিবৃতি


২১ এপ্রিল ২০২০ ২১:৩২

ফাইল ছবি

ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। এই ছুটির মধ্যেই মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা কালিটি চা বাগানের শ্রমিকদের জোর করে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কালিটি চা বাগানের ৫৩০ জন চা শ্রমিকের তিন মাসের (১২ সপ্তাহ) মজুরিও বকেয়া পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ১৫১ জন নাগরিক এক বিবৃতিতে এই চা শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পরিশোধ বিষয়ে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দেশের ১৫১ জন নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে করোনা মহামারির কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। কিন্তু আমাদের দেশের চা বাগান মালিকদের অতি মুনাফার লোভ এবং খামখেয়ালিতে আর রাষ্ট্রের উদাসিন ভূমিকার কারণে কর্মরত চা শ্রমিকদের ভাগ্যে এখন সেই ছুটি জোটেনি। চা বাগান এলাকার এমন এক অবস্থায়, দেশের এক প্রান্তে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা কালিটি চা বাগানের ৫৩০ জন চা শ্রমিকের তিন মাসের (১২ সপ্তাহ) মজুরি এবং রেশন না দিয়ে বাগান চালিয়ে নেবার অপ্রচেষ্টা করে যাচ্ছিল মালিক পক্ষ। চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা। আর তা যদি ১২ সপ্তাহ বা ৩ মাস ধরে বন্ধ থাকে তাহলে কালিটি চা বাগানের শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। শত বছর ধরে চা শ্রমিকরা নামে মাত্র মজুরির বিনিময়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন। দিনকে দিন তাদের আধুনিক শ্রমদাসে পরিণত করার সমস্ত রকমের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর দায় রাষ্ট্র কোনভাবেই এড়াতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই বাগানে অনেক শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচা ঘরে বাস করেন। দীর্ঘ ২ বছর যাবত ঘর-বাড়ি মেরামত না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙা ঘরে বাস করছেন এই বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলো। অবসরে যাওয়া শ্রমিকরা তহবিলের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি থেকে সাত শতাংশ টাকা ভবিষ্যৎ তহবিলের কেটে রাখা হয়। এই টাকার সঙ্গে মালিক পক্ষ থেকে সাত শতাংশ টাকা যোগ করে শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়া কথা থাকলেও বাগান কর্তৃপক্ষ ২৬ মাস ধরে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের সেই টাকাও জমা দিচ্ছে না। এই বাগানে খাবার পানির একমাত্র উৎস কুয়া (কূপ) কিন্তু খরার কারণে কুয়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। গত তিনমাস ধরে বাগানের মানুষের একমাত্র চিকিৎসাস্থল হাসপাতালটি কোনো প্রকার সেবা দিচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কালিটি চা বাগান বা জোবেদা টি কোম্পানি লিমিটেডের মালিক কৈশোর মিয়া বাগানের এইসমস্যাগুলো সমাধান না করে গা ঢাকা দিয়েছেন। শ্রমিকদের এই অনাহার-অর্ধাহারের সময় তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কালিটি চা বাগানের শ্রমিকরা নিজেদের ঘাম পায়ে ফেলে শ্রম করে বাংলাদেশের চা শিল্পে ভূমিকা রেখেছে। মজুরি তাদের অধিকার অথচ ১২ সপ্তাহ শ্রমিকের এই মজুরি না পাওয়া শ্রম আইনের ভিত্তিতে শ্রমিকদের প্রতি অন্যায় করা। এই অন্যায় অবিচার, জুলুম, নির্যাতন অন্যায্যতার বিরুদ্ধে গত কয়েক সপ্তাহ শ্রমিক ধর্মঘর্ট করে যখন চা শ্রমিকদের ভাগ্যে প্রতিকার জোটেনি তখন এই করোনার সময়েও গত ১৯ মার্চ শ্রমিকরা কুলাউড়া উপজেলা বরাবর ভুখা মিছিল করে। গণমাধ্যমে চা শ্রমিকদের এই ভুখা মিছিলের সংবাদ আমাদের ভীষণ উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

চা শ্রমিক বিবৃতি মৌলভীবাজার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর