Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরলো রিয়াজউদ্দিন বাজার, বিন্যাস ‘করোনা প্রতিরোধী’ মডেলে


২৪ এপ্রিল ২০২০ ২০:০৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব মানতে চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার ‘রিয়াজউদ্দিন বাজার’ সরানো হয়েছে। আপাতত বাজারটি বসছে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিশাল চত্বরে। চারুশিল্পী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে এই নতুন বাজারকে সাজিয়েছে নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বলছে, ‘করোনা প্রতিরোধী’ মডেলে সাজানো হয়েছে বাজারটি।

বিজ্ঞাপন

সরু সড়ক, ঘিঞ্জি দোকানপাট, স্থানে স্থানে ময়লার স্তূপ আর দিনরাত হাজারো মানুষের ভিড়— এই ছিল রিয়াজউদ্দিন বাজারের চিত্র। কিন্তু নতুন বাজারের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। সুবিশাল চত্বরটিকে সাজানো হয়েছে কাঠের তৈরি নানা প্রতিকৃতি দিয়ে, এতে লেখা আছে সচেতনতামূলক নানা নির্দেশনা। প্রশস্ত ওয়াক ওয়ে, ঢোকা আর বের হওয়ার পথও সম্পূর্ণ আলাদা। দোকানের সামনে ক্রেতা দাঁড়ানোর স্থানগুলো সাদা রঙের চারকোণা ঘর এঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এই বাজারের উদ্বোধন করেন। এসময় সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকও ছিলেন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের পরিকল্পনায় একদল প্রবীণ-নবীন চারুশিল্পী গত একসপ্তাহ ধরে বাজারটিকে বৈচিত্র্যময় রূপে সাজানোর কাজ করেছেন। ওসি মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমিশনার স্যারের নির্দেশে নগরীর সবচেয়ে বড় বাজারটি সরানোর কাজটি আমরা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছি। আমরা এটাকে করোনা প্রতিরোধবান্ধব মডেল বাজার বলছি। সেজন্য আমরা অনেকের সহযোগিতা নিয়েছি। চারুশিল্পীরা বাজারটিকে নান্দনিকভাবে সাজিয়েছেন, যেন ক্রেতারা আকৃষ্ট হন। কাঁচাবাজারের চিরাচরিত যে পরিবেশ, সেটা এখানে নেই। কোতোয়ালি থানার প্রতিটি সদস্য বাজারটি চালু করতে ভূমিকা রেখেছেন। আমরা চাই, এই বাজার একটা মডেল হোক। সারাদেশ যেন এই বাজারের মতো অস্থায়ী বাজার তৈরি করে।’

দ্য অ্যাড কমিউনিকেশনের স্বত্বাধিকারী চারুশিল্পী দীপক দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে চারুকলার চার জন ছাত্র ছিল। আমরা প্রথমে কাঁচাবাজারের ডিজাইন করেছি। ১৯৫টির মতো দোকান বসানো হয়েছে। ৮ ফুট বাই ৮ ফুট মাপের প্রতিটি দোকানের মধ্যে ৪ ফুট করে গ্যাপ আছে। দোকানের সামনে ক্রেতা দাঁড়ানোর জন্য একক জোন করেছি, একটির সঙ্গে আরেকটির দূরত্ব ৩ ফুট। একসঙ্গে কমপক্ষে ৬০০ ক্রেতা যেন বাজারে অবস্থান করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাঠের প্রতিকৃতি বানানো হয়েছে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য। সিএমপি যেহেতু এটাকে মডেল বাজার বলছে, তাই কিছু বিউটিফিকেশনও আমরা করেছি।’

ওসি মহসীন জানান, নতুন বাজারে কাঠের কাঠামো ও ত্রিপল দিয়ে ১০০টির মতো দোকান করা হয়েছে। সেগুলো তৈরি করে দিয়েছে সাহাবউদ্দিন ডেকোরেটার্স। প্রতিটি দোকান তৈরিতে শ্রম দিয়েছেন থানার সদস্যরাও।

আরও পড়ুন- করোনার অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছে: জননিরাপত্তা সচিব

বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, শুরুর দিনেই জমজমাট হয়ে উঠেছে বাজার। বাজারে শাকসবজি, তরিতরকারি, ফলমূল, মাছ, মাংসের দোকান আছে। দোকানের প্রত্যেক সারির প্রবেশমুখে মূল্যতালিকা টাঙানো আছে। রিয়াজউদ্দিন বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ দোকানি নতুন বাজারে এসেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বাজারের ঠিক মাঝখানে কাঠ দিয়ে করোনাভাইরাসের প্রতীকী প্রতিকৃতি বানানো হয়েছে। এতে লেখা আছে, ‘আমাদের দূরত্বে, গুরুত্ব হারাবে করোনা।’ বাজার প্রবেশের সময় প্রত্যেককে নির্দিষ্ট ‍দূরত্ব মেনে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করতে হচ্ছে। মুখে মাস্ক না থাকলে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ঢোকার ‍সময় প্রত্যেকের তাপমাত্রা নেওয়া হচ্ছে। হাত ধোয়ারও ব্যবস্থা আছে।

ওসি মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে। বেশকিছু বিধিনিষেধ আমরা দিয়েছি। ওজনে কম দেওয়া যাবে না। দাম বাড়তি নেওয়া যাবে না। হাঁচি-কাশি, জ্বর আছে— এমন কাউকে বাজারে ঢুকতে দেওয়া হবে না। নগদ টাকা লেনদেনকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। যতদিন করোনার প্রকোপ থাকবে, ততদিন এই বাজার থাকবে। ততদিন আমরা এসব নিয়ম অনুসরণ করে যাব।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ‘দেশে করোনার প্রকোপ বাড়ছে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। জনসমাগম ঠেকাতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। সেই জায়গায় সিএমপি স্বাস্থ্যসুরক্ষার সব বিধি অনুসরণ করে একটি নতুন বাজার চালু করেছে, একটি বড় বাজারকে স্থানান্তর করে এখানে এনেছে, এটা অবশ্যই প্রশংসার। করোনা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে আমরা এখনো ভালো আছি। বাজার স্থানান্তরের এই উদ্যোগের মতো জনসমাগম ঠেকানোর সব উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে। তাহলেই আমরা এই ভালো থাকাটা ধরে রাখতে পারব।’

সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে সিএমপি অনেক প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ নিয়েছে। সারাদেশে সিএমপিই একমাত্র ইউনিট, যারা চট্টগ্রাম শহরের সব মসজিদ থেকে একযোগে করোনা সতর্কতামূলক বার্তা প্রচার করেছে। আমরা ঘরে থাকা মানুষদের বাজার পৌঁছে দিয়েছি। খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। ডাক্তার-রোগীদের বাসা থেকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। আজ (শুক্রবার) বড় কাঁচাবাজারটা আমরা স্থানান্তর করেছি। এরই মধ্যে নগরীর ২০টি বাজার আমরা সরিয়ে নিয়েছি। সেগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মেনে কেনাকাটা চলছে।’

রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে নতুন বাজারে আসা সবজি বিক্রেতা খলিল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই বাজারে আমাদের কোনো দোকান ভাড়া দিতে হচ্ছে না। এটা লাভ হয়েছে। শুরুর দিনেই অনেক কাস্টমার এসেছে। আস্তে আস্তে প্রচার হলে আরও জমবে। আমাদের দোকান ভাড়া দিতে হবে না, বাড়তি খরচ নেই। আমরা বাড়তি দামও নেব না।’

নগরীর নন্দনকানন এলাকা থেকে বাজারে যাওয়া সুজিৎ দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রতি শুক্রবার রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে শাকসবজি, মাছ কিনি। আজ (শুক্রবার) সকালে শুনি, সেখানে আড়ত ছাড়া দোকানগুলো তুলে দেওয়া হয়েছে। রেলস্টেশনে বাজার বসেছে শুনে এখানে এসেছি। এত সুন্দর করে বাজারটাকে সাজানো হয়েছে, ভালো লাগছে। সবসময় যেন বাজার এমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, সেটা দেখতে হবে। দাম যেন বাড়তি নেওয়া না হয়, সেটাও দেখতে হবে।’

করোনা প্রতিরোধী মডেল করোনাভাইরাস কোতোয়ালি থানা কোতোয়ালি থানা পুলিশ টপ নিউজ দ্য অ্যাড কমিউনিকেশন রিয়াজউদ্দিন বাজার রেলস্টেশনের গাড়ি পার্কিং চত্বর সামাজিক দূরত্ব

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর