‘ব্যবসায়ীদের স্বার্থে’ কিট নেয়নি অধিদফতর, অভিযোগ গণস্বাস্থ্যের
২৬ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৫২
ঢাকা: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। বরং তাদের আচরণের মধ্যে ‘ঘুষ’ লেনদেনের ইঙ্গিত লক্ষ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। তাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য অধিদফতর সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীর স্বার্থে কাজ করছে।
রোববার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের গেরিলা কমান্ডার মেজর এ টি এম হায়দার বীর বিক্রম মিলনায়তনে আয়োজিত জরুরি প্রেস কনফারেন্সে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এর আগে, পূর্বনির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিন গবেষক অধ্যাপক ড.বিজন কুমার শীল, ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও ড. ফিরোজ আহমেদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে যান কিট হস্তান্তর করার জন্য। কিন্তু সেই কিট তিনি গ্রহণ করেননি। বরং গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ড. ফিরোজ আহমদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি— এমনটিই অভিযোগ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকদের।
সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে এত বড় একটি জাতীয় দুর্যোগ! কিন্তু কিছু সরকারি আমলা সেই দুর্যোগটিই বুঝতে পারছেন না। তারা জনগণের স্বার্থের চেয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।’
‘আমরা গতকাল কিট হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিলাম অনুমোদনের জন্য। আমরা কখনো বলিনি যে অনুমোদন পেয়ে গেছি। এটা অনুমোদন করার দায়িত্ব হলো ওষুধ প্রশাসনের। দুর্ভাগ্যবশত ওষুধ প্রশাসন এমন লোকের দ্বারা নিযন্ত্রণ হচ্ছে, যারা না ফার্মাসিস্ট, না ফার্মা পলিটিস, না ক্লিনিক্যাল। যার ফলে হয় কী, এই জিনিসটার গুরুত্ব তারা উপলব্ধি করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দ্বারা তারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন,’— বলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এটা (কিট) অনুমোদন হয়নি বলে তারা (ওষুধ প্রশাসন) আসেনি। আমরা আজ তাদের কাছে গিয়েছিলাম। আমাদের তিন জন বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল, ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও ড. ফিরোজ আহমেদ সেখানে গিয়েছিল। সেখানে আমাদের দুই জনকে ঢুকতে দিয়েছে। আরেকজনকে দেয়নি। অথচ বাইরে থেকে লোক এনে ভেতরে বসিয়ে রেখেছেন।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘তারা আমাদেরকে কনট্যাক্ট আফটার রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিআরও) করিয়ে আনতে বলে। কিন্তু কোথা থেকে সিআরও করিয়ে আনব, সে ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু বলে না। আমাদের অ্যাপয়েনমেন্ট দিয়ে ওই যে তিন জনকে এনে বসিয়ে রেখেছে, তারা হলেন ব্যবসায়ী। তাদের প্রতিষ্ঠান (আইসিডিডিআর,বি) থেকে সিআরও করিয়ে আনতে বলে।’
‘কিন্তু আইসিডিডিআরবি তো লকডাউন? তার চেয়ে এত বড় প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) দেন, বা আর্মি প্যাথোলজি ল্যাবরেটরিকে দেন, অথবা আইডিআই— যারা ফাংশনাল আছে, তাদের দেন। তা না— ওখানে পয়সা দিতে হবে। কত লাগে খরচ? সেটা জানি না! উনারা বাজেট দেবেন। আপনাদের বুঝতে হবে, তারা (স্বাস্থ্য অধিদফতর) কীভাবে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করছে,’— বলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি আরও বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি’র তো তাও একটা ল্যাবরেটরি আছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকায় যেসব সিআরও আছে, সেগুলোর নাম বললেই বুঝতে পারবেন তারা (স্বাস্থ্য অধিদফতর) কাদের সঙ্গে রেখেছে। তাদেরই সঙ্গে রেখেছেন, যেন লেনদেনে সুবিধা হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বেক্সিকো কনসালট্যানসি ফার্ম, ইভিনেন্স কনসালটেনসি ফার্ম। এদের ল্যাবরেটরি নেই। একটা অফিস আছে। একজন লোক বসিয়ে রেখেছে। সে টাকা-পয়সা লেনদেন করে। তারপর ভাগ-বাটোয়ারা করে।’
আপনাদের কাছে কি তারা ঘুষ দাবি করেছে?— এমন প্রশ্নের জবাবে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সে সাহস তাদের নেই। সরাসরি তারা আমাদের কাছে ঘুষ চায়নি। তবে তারা চরমভাবে অসহযোগিতা করেছে। এখানে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই তারা দেখছে। লেনদেন তো আর সরাসরি হয় না। সবকিছু তো আপনারা বুঝতে পারেন। তবে আমাদের পরিষ্কার কথা, কিট যদি নাও আনতে পারি, তাহলেও কাউকে এক পয়সা ঘুষ দেবো না।’
আরও পড়ুন-
‘গণস্বাস্থ্যের কিটে শতভাগ নির্ভুল টেস্ট, সময় লাগবে ৫ মিনিট’
সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কিট হস্তান্তর করল গণস্বাস্থ্য
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদফতর