অনুমোদন পাচ্ছে প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্প, বাড়ছে টাকার অঙ্ক
৩০ এপ্রিল ২০২০ ০১:২৫
ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন পেতে যাচ্ছে প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব। অনুমোদন পেলে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের জন্য প্রাথমিকের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী পাবে উপবৃত্তি। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির টাকার পরিমাণও বাড়ছে। সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী বছরের জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা পাবে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। ফলে এ বছরের জানুয়ারি থেকে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে মার্চের মাঝামাঝি থেকেই বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকও। ফলে উপবৃত্তি প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন নিয়েও শঙ্কা দেখা দেয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গুরুত্ব বিবেচনায় এ পরিস্থিতিতে সংশোধিত প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বিশেষ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। যেকোনো সময় সেটি অনুমোদন পাবে প্রধানমন্ত্রীর। আর অনুমোদন পেলেই শিক্ষার্থীরা গত তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) উপবৃত্তির টাকা পাবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে। প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে সব শ্রেণিতে উপবৃত্তির টাকার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আগে এক শিক্ষার্থীর পরিবারকে মাসে ১০০ টাকা দেওয়া হলেও নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী দেওয়া হবে ১৫০ টাকা। একইভাবে দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ২০০ টাকার বদলে ৩০০ টাকা, তিন শিক্ষার্থীর পরিবারকে ২৫০ টাকার জায়গায় ৪০০ টাকা এবং চার শিক্ষার্থীর পরিবারকে মাসে তিনশ টাকার জায়গায় উপবৃত্তি দেওয়া হবে ৫০০ টাকা করে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অতি দ্রুত প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। প্রকল্পে উপবৃত্তির অর্থ বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদি সেটি অনুমোদন পায়, তাহলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। এই মুহূর্তে এটি বলার সময় আসেনি।
সূত্র জানায়,গত ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই অর্থপ্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। অবশেষে দ্রুত প্রকল্প সংশোধন করার উদ্যোগ নেয় প্রথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাসের কারণে চলমান সাধারণ ছুটির মধ্যে এই প্রকল্পটি শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোর জন্য সহায়ক হয়ে উঠবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সে কারণেই প্রকল্পটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে, ১৯৯৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে ২০০৮ সালে ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’ গ্রহণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩০ জুন শেষ হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ পর্যায় প্রথমে এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এর সঙ্গে আরও ১০ লাখ শিক্ষার্থী যুক্ত করা হয়। প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলে আরও দুই বছর সময় বাড়ানো হয়েছিল। সবশেষ সংশোধনীতে আরও দেড় বছর বাড়ানো হলো এর মেয়াদ।
এদিকে, প্রাথমিকে উপবৃত্তির প্রকল্পটি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য সহায়ক হবে বলে মনে করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের অভিভাবকরাও। কুড়িগ্রাম জেলা সদরের করিমের খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাগদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজারহাট উপজেলার পান্থাবাড়ী বালাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত বেশকিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক সারাবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে তাদের কাজকর্ম বন্ধ থাকায় উপার্জনহীন সময় কাটাতে হচ্ছে। ফলে চরম দারিদ্র্যের মুখে রয়েছেন তাার। এ অবস্থায় তিন মাসের উপবৃত্তির টাকা পাওয়া গেলে টাকার পরিমাণ কম হলেও তা তাদের জন্য বড় সহায় হবে।
উপবৃত্তি উপবৃত্তি প্রকল্প উপবৃত্তির টাকা উপবৃত্তির প্রকল্পে সংশোধন প্রাথমিকে উপবৃত্তি