Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় আক্রান্ত বাড়ছেই, তবু অব্যাহত সেবার অঙ্গীকার পুলিশের


৩০ এপ্রিল ২০২০ ২২:১৯

ঢাকা: সারাদেশে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এই ভাইরাস মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে যারা কাজ করছেন, তাদের অন্যতম পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। দিন দিন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আক্রান্তের হারও বাড়ছে। এই ভাইরাসে প্রথম কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্তের পর ১৯ দিনে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২০ জনে। এরই মধ্যে তিন পুলিশ সদস্য প্রাণও হারিয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতেও সাহস হারাচ্ছে না পুলিশ। বরং সহকর্মীদের মৃত্যুর শোককে শক্তিতে পরিণত করার দৃপ্ত শপথ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি থাকলেও তারা দেশের এই সংকটের সময় সেবা দিতে পিছুপা হবেন না।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। কোনো পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। এরপর ২১ এপ্রিল সরকারি এই বাহিনীতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছায়। তবে এরপর সংক্রমণের গতি আরও বেড়ে যায়। ২৩ এপ্রিল এই সংখ্যা ছিল দুই শতাধিক। ২৬ এপ্রিল ৩৯৩ জন ও ২৯ এপ্রিলের হিসাবে এই সংখ্যা ছিল ৪২০ জন। আর এই ৪২০ জনের প্রায় ৬০ ভাগ, ২৪০ জনই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্য।

এদিকে, গত ২৮ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম কোনো পুলিশ সদস্য হিসেবে মারা যান ডিএমপি’র ওয়ারী থানায় কনস্টেবল জসিম উদ্দিন। ২৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ট্রাফিক কনস্টেবল আশেক মাহমুদ। আর ৩০ এপ্রিল ভোরে ঢাকা আরামবাগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মিরপুর পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (পিওএম) সহকারী এএসআই হিসেবে কর্মরত আব্দুল খালেক।

করোনায় আক্রান্ত আর আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর এই হিসাবের বাইরেও আরও এক হাজার ২৬ জন পুলিশ সদস্য আছেন কোয়ারেনটাইনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হওয়ায় আগামীতে পুলিশ সদস্যদের আরও বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পিপিই, মাস্ক ও হ্য্যন্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহ করা হয়েছে। পালা করে ডিউটি করানোসহ নেওয়া হয়েছে নানা কৌশল। আর আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য হাসপাতালও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে এসব হাসপাতালে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে।

করোনায় আক্রান্ত হওয়া ডিএমপির পুলিশ সদস্যদের স্বজন ও ইউনিট প্রধানরা বলছেন, লকডাউন এলাকায় লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ, করোনা আক্রান্ত অলিগলিতে টহল ডিউটি, সড়কে জীবাণুনাশক ছিটানো, ত্রাণ বিতরণ, ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা, রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছানোসহ করোনা আক্রান্ত রোগীর দাফনে অংশ নিতে গিয়েই পুলিশ সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া শুরুতেই এসব সদস্যের কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জামও দেওয়া হয়নি। ফলে আক্রান্ত এলাকায় ডিউটি করতে গিয়ে তাদের কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর ব্যারাকের বাকিরা আক্রান্ত হয়েছেন কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যম।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী উপমহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানা সারাবাংলাকে বলেন, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। পু‌লিশ সদস্যদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে।

সোহেল রানা আরও বলেন, দেশ ও মানু‌ষের প্রতি ক‌মিট‌মে‌ন্ট থেকেই পুলিশ সদস্যরা ক‌রোনায় আক্রা‌ন্তের ঝুঁকির ম‌ধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন, কাজ করে যাবেন। মৃত্যুভয়কে জয় করেই কাজ করতে হয় আমাদের। জনগ‌ণের সুরক্ষার যে দায়িত্ব আমাদের ওপর আছে, তা নিশ্চিত করতেই পুলিশ নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করছে।

এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ কনস্টেবল জসিম উদ্দিনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে পুলিশ সদর দফতর থেকেও বলা হয়, করোনাযুদ্ধে কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ পুলিশ।

জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় চলমান এই সময়ে যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ পিছুপা হবে না। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের নিজেদের সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করবেন।’

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ ও র‌্যাবকে কঠোর হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আইজিপি। এই দুর্যোগের সময় কেউ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এর প্রমাণও মিলছে হাতেনাতে। কয়েকদিন আগে দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করায় থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রোজা শেষে ঈদকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, ছিনতাই যেন বেড়ে না যায়, ত্রাণ বা জাকাত-ফিতরা দেওয়ার নামে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি। তিনি নিয়মিত মাঠ পর্যায়ের পুলিশের ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছেন।

করোনাভাইরাস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি করোনায় মৃত্যু বাংলাদেশ পুলিশ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর