Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ড্রাগন সোয়েটারে ১০ মাসের বেতন পাওনা কর্মচারীদের


১ মে ২০২০ ০১:০৯

ঢাকা: রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত ড্রাগন সোয়েটারে কর্মচারীদের (কর্পোরেট স্টাফ) ১০ মাসের বকেয়া পাওনা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর কখনও বাকি অর্ধেক বেতন চাওয়া যাবেনা এমন শর্তে সম্প্রতি অর্ধেক বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় মালিকপক্ষ। তবে কর্মচারীরা তা মেনে নেয়নি। এদিকে, বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য তারা পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে চিঠি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শ্রমিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাটিতে বেতনের সমস্যা দীর্ঘদিনের। ন্যায্য পাওনার বিষয়ে কথা বলা হলেই শ্রমিকদের নানা অজুহাতে চাকুরিচ্যুত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।  শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে ওই কারখানাটি তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এছাড়া কারখানাটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন আগের চেয়ে কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এসব নিয়ে গেল ডিসেম্বরে সারাবাংলা ডটনেটে ‘আইন মানে না ড্রাগন সোয়েটার, পাওনা চাইলে চাকরি যায় শ্রমিকের‘ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়।

বিজ্ঞাপন

আরো পড়ুন: আইন মানে না ড্রাগন সোয়েটার, পাওনা চাইলে চাকরি যায় শ্রমিকের

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, কারখানাটিতে তখন শ্রমিকদের বেতন ৩ থেকে ৮ মাসের বকেয়া ছিল। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের অনেকেই এখন বকেয়া বেতন পেয়ে গেছেন। তবে করেনার সময়ে ছুটিতে থাকা শ্রমিকরা এখনও বেতন পাননি। অন্যান্য শাখার স্টাফদেরও বেতন দেওয়া হয়েছে। কারখানাটিতে এখন কর্পোরেট শাখার স্টাফদের ১০ মাসের বকেয়া পাওনা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মার্চেন্ডাইজার ও এক্সিকিউটিভ সারাবাংলাকে জানান, কারখানাটিতে তাদের ১০ মাসের বকেয়া পাওনা রয়েছে। মালিকপক্ষ বেতন দিতে না টালবাহানা করছে। প্রথমে অর্ধেক বেতন দিতে চেয়ছিল, যদি আর কখনও বাকি অর্ধেক বেতন না চাওয়া হয়। যে ৫ মাসের বেতন দেওয়া হবে তাও কয়েক কিস্ততে দেবে বলে জানানো হয়। শ্রমিকরা তা মেনে না নিলে এক মার্চেন্ডাইজারকে বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে ডেকে নেওয়া হয়। মালিক তাকে রুমে ডেকে নিয়ে ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ৮০ ভাগ বেতন দেয়। এটি শুনে অন্যান্য কর্মচারীরা মালিকের সঙ্গে সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে দেখা করেনি। কারখানাটির কর্পোরেট শাখার স্টাফরা আরও জানিয়েছেন, করোনার সময়েও তারা তাদের পরিবারের নূন্যতম চাহিদা পূরণ করতে পারেননি। অনেকের ঘরে ঠিকমতো ছিল না খাবারও। কেউবা সুদের টাকায় কিনেছেন খাবার।

গত ২৩ এপ্রিল বিজিএমএইএ সভাপতির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কারখানাটির কর্মচারীরা। ‘ড্রাগন সোয়েটার বাংলাদেশ লি. এর কর্পোরেট স্টাফদের ১০ মাসের বকেয়া বেতন প্রসঙ্গে’ শীর্ষক ওই চিঠিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের মাসিক বেতন অনিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত ৭০ শতাংশ বেতন পাই ৫ নভেম্বরে। এরপর দীর্ঘসময় আর কোন বেতন পাইনি। কারণ হিসেবে মালিকপক্ষ লাভ না হওয়া ও ব্যাংকের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে সময় ক্ষেপন করেন।

সবশেষ মালিকপক্ষ আমাদের মার্চ/২০২০ মাসে সমুদয় বকেয়া বেতন পরিশোধ করবেন বলে নিশ্চয়তা দেন। কিন্তু মার্চ মাস গেলেও আমাদের বেতন দেওয়ার কথা উনারা ভুল করেও বলেন না। আর আমাদের মানবেতর জীবন যাপনের কথা বলতে গেলেই বিভিন্ন গালি গালাজ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং চাকরি থেকে বহিষ্কারের ভীতি দেখায়। ইতোমধ্যে করোনার কারণে ২৬ মার্চ থেকে ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা পড়ে যাই মহাবিপদে। বাড়িওয়ালা থেকে অন্যান্য পাওনাদার পাওনা পরিশোদের জন্য আমাদেরকে তাগাদা দিতে থাকে। লকডাউনের কারণে পরিবারের জন্য যৎসামান্য খাবার কেনার টাকাও আমাদের হাতে ছিল না।

এমন অবস্থায় অনেক অনুনয় বিনয়ের পর ৬ এপ্রিল আমাদেরকে জুন/২০১৯ সালের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করে। যা দিয়ে আমাদের প্রয়োজনের কিছুই মেটানো সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত আমরা মে/২০১৯’র ৩০ শতাংশ, জুন/২০২০ এর ৫০ শতাংশ, ২০১৯ সালের জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের বেতন পাওনা আছি। এই পাওনার জন্য গত ১৯ এপ্রিল আমরা ড্রাগন গ্রুপের চেয়ারম্যানের স্বরণাপন্ন হলে উনি আমাদেরকে দেখে অত্যন্ত রাগান্বিত হন এবং আসার কারণ জানতে চান। আমরা পাওনা বেতনের কথা জানালে উনি গালাগালি দিয়ে একটি প্রস্তাব দেন। তা হল- আমরা যেন আলাদা আলাদভাবে লিখিত অঙ্গীকার নামা দিই মার্চ পর্যন্ত আমাদের যত টাকা পাওনা তার অর্ধেক নিতে রাজি। ভবিষ্যতে বাকি অর্ধেক টাকা আর কখনও দাবি করতে পারবো না। তারপরও যে অর্ধেক টাকা দিবেন সেই টাকা কবে পরিশোধ করবেন তার ব্যাপারে কিছু বলেননি। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে একটি সুরাহা পেতে। ওই চিঠিতে ২৫ জন স্টাফের নাম উল্লেখ রয়েছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক সারাবাংলাকে জানান, কারখানাটিতে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। স্টাফদের বেতন বকেয়া রয়েছে। আর কারখানাটি পূঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি।

কারখানাটির মালিক তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। ওসি কুদ্দুস নামেও তিনি পরিচিত। তার নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামরুস সোবহানকেও একাধিকবার কল করে পাওয়া যায়নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি এর প্রতিউত্তর করেননি। আর গেল ডিসেম্বরে সারাবাংলা ডটনেটে ‘আইন মানে না ড্রাগন সোয়েটার, পাওনা চাইলে চাকরি যায় শ্রমিকের‘ শীর্ষক প্রতিবেদনে শ্রমিকদের সব অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

শ্রমিকদের অধিকারের বিষয় নিয়ে কারখানাটিতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। এই সংগঠনের বাড্ডা, রামপুরা ও খিলগাঁও আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারখানাটিতে কর্পোরেট লেভেলের কর্মীদের ১০ মাসের বকেয়া বেতন রয়েছে। পাওনা আদায়ে তারা বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মালিক দুই এক মাসের আংশিক বেতন শোধ করেছে। এখন প্রস্তাব দিয়েছে বকেয়া বেতনের অর্ধেক নিতে এবং বাকি অর্ধেক আর দাবি করা যাবে না এমন মুচলেকা দিতে। কারখানা মালিক এই মহামারির সময় মূলত সুযোগ নিচ্ছে। কর্মীরা ঋণ করে, সুদের টাকা দিয়ে ঘর সংসার চালাচ্ছে। তারা এখন আর চলতে পারছেনা। মালিক এই সুযোগটিই নিচ্ছে। আর এই মালিকের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরও কুলিয়ে উঠতে পারছেনা।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের রমনা-তেজগাঁও জোনের ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমি এই এলাকার দায়িত্ব পেয়েছি। আসার পরেই দেখতে পেয়েছি ড্রাগন সোয়েটারে বেতন নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। মালিকের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। পরে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দিয়েছে। এখন শুনতে পাচ্ছি কর্পোরেট লেভেলের কর্মীদেরও বেতন বাকি আছে। যোগাযোগের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা এই বেতনও দিয়ে দেবে, যা প্রক্রিয়ায় আছে। আর ঠিকসময়ে বেতন না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আমাদের একটি মামলা রয়েছে।’

শ্রমিকদের নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গেল ডিসেম্বরে ওই মামলাটি করেছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর।

ড্রাগন সোয়েটার বকেয়া পাওনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর