Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়েও থাকছে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি


২ মে ২০২০ ২২:২২

ঢাকা: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর পর নিজের ও মায়ের নমুনা পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) যান পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার বাসিন্দা সোহেল ইসলাম (ছদ্মনাম)। দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানে নমুনা পরীক্ষা করানোর কথা। কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন সেখানে প্রতিদিন ৩ শ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরে অন্য জায়গায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করালেও সোহেল ইসলামের প্রশ্ন, যদি আমার মধ্যে কোনোভাবে সংক্রমণ থাকতো আর আমি বিএসএমএমইউ’র লাইনে গিয়ে দাঁড়াতাম তবে রোগ ছড়ানো দায় কারা নিতো?

বিজ্ঞাপন

তার আগে গত ২৭ এপ্রিল সোহেলের বাবা মারা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই। মৃত্যুর আগে নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্যে বেশ কয়েকবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমইউ) যাওয়ার কথা থাকলেও যাওয়া হয়নি। সেখানে বিশাল লাইন আর লাইনে থাকা মানুষের মধ্যে কারও মধ্যে সংক্রমণ আছে কি না তাও বোঝার উপায় নেই। তাছাড়া লাইনে দাঁড়িয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হয় না সামাজিক দূরত্ব। তাই আর নমুনা পরীক্ষা করানো হয়নি জীবিত অবস্থায়। মৃত্যুর পরে নমুনা পরীক্ষা করে তার শরীরে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পাওয়া যায়। বাবাকে দাফন করানোর পরে সোহেল ইসলাম নিজের ও মায়ের নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য যান।

বিজ্ঞাপন

একটু ভিন্ন প্রেক্ষপট অবশ্য সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে আসা রাজীব চৌধুরীর (ছদ্মনাম)। ভোর বেলায় এসেই লাইন ধরেছেন বিএসএমএমইউতে নমুনা পরীক্ষার জন্য। বিশাল লাইন দেখে হতাশ কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে নিজের সিরিয়ালও পেছানো যাবে না। আর তাই ঝুঁকি নিয়েই দাঁড়িয়ে আছেন নমুনা জমা দেওয়ার লাইনে। এখন অপেক্ষা কখন নমুনা সংগ্রহ করবে।

রাজীব চৌধুরীর সারাবাংলাকে বলেন, কী করবো? পরীক্ষা তো করাতেই হবে। এখানে অনেকেই আসছেন ঝুঁকি নিয়ে কিন্তু সেই ভয়ে যদি নমুনা জমা দিতে নাও আসি তবে আরেক বিপদ। বাসায় তো আর থাকতে পারছি না। এখন বাকিটা এখানে সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছে।

প্রায় প্রতিদিনই এমন চিত্র দেখা যায় রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বিএসএমএমইউ’র নমুনা সংগ্রহের সামনে অপেক্ষমান মানুষদের লাইনে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও (ঢামেক) অবস্থা প্রায় একই রকম।

রাজধানীর এই দুই বড় হাসপাতালে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ছুটে আসছেন নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য। কারণ একমাত্র সশরীরে এখানেই নমুনা পরীক্ষা করানো যায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। তাছাড়া দ্রুত পরীক্ষার ফলাফলও পাওয়া যায়। কুর্মিটোলা হাসপাতাল, মহানগর হাসপাতালসহ রাজধানীর বেশ কিছু স্থানে নমুনা সংগ্রহ বুথ থাকার কথা বলা হলেও তা এখনো স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়নি। আর তাই নমুনা পরীক্ষা কোথায় করানো হবে তা জানে না অধিকাংশ জনগণ।

আর তাই বিএসএমএমইউ, ঢামেক ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই বেশি চাপ পড়ছে নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য।

কিন্তু নমুনা পরীক্ষা করাতে এসে মানা হচ্ছে না কোনো সামাজিক দূরত্বের বিধিমালা। এমন অবস্থায় বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের হাসপাতালের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধিমালা মেনে নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য। কিন্তু হাসপাতালের গেইটের বাইরে যে অপেক্ষমান লাইন থাকে তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি মানছে না অনেকে। ধাক্কাধাক্কি করছে, লাইন মানছে না এমন অনেক কিছুই হচ্ছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। হাসপাতালের পক্ষ থেকে কিছুক্ষণ পরপর গিয়ে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। তাও এমন অবস্থা। এক পর্যায়ে তারাও হতাশ হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, আমরা এখানে ৩ শ’টি নমুনা সংগ্রহ করতে পারি। এর বেশি আসলে নমুনা পরীক্ষা এখনো সম্ভব না এখানে। এখনো যদি ঢাকার সবাই আমার এখানে চলে আসে তবে আমি কী করতে পারি?

তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সবসময়েই বলা হচ্ছে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলার কথা। আমাদের পক্ষ থেকেও আমরা বলছি সেটা মেনে চলতে। এইক্ষেত্রে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা স্বাস্থ্য বিধি যদি না মানা হয় তবে যারা লাইনে বিশৃঙ্খলা করছেন তারা নিজেদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিজেরাই বাড়িয়ে ফেলছেন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বলে আসছি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি সবাইকে। সেটা না মেনে যদি এভাবে ভিড় করে নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য তবে তাতে সংক্রমণের ঝুঁকিতো বেড়ে যায়।’

নমুনা পরীক্ষা করাতে এসে সামাজিক দূরত্ব না মানার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বাড়াতেই হবে। এর বিকল্প নেই। কিন্তু এই নমুনা পরীক্ষার জন্য দরকার সুর্নিদিষ্ট পরিকল্পনা। যেভাবে আমরা সবাইকে দেখছি নমুনা পরীক্ষা করাতে সেটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়। কারণ সেখানে কেউ তো আর পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার আগে জানে না কে পজেটিভ আর কে নেগেটিভ। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এগিয়ে আসতে হবে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে। প্রয়োজনের প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলতে পারে। জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে। নতুবা এই সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। আর নমুনা পরীক্ষা করাতে এসে যদি কেউ সংক্রমিত হয় তবে তা হবে দুঃখজনক।

করোনা ভাইরাস পরীক্ষা মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর