Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় অবশেষে বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু


৩ মে ২০২০ ২২:৫৩

ঢাকা: কারাগারগুলোতে যেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়, সে কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন। এই সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পাশপাশি মাসখানেক আগে চূড়ান্ত হয়, করোনা মোকাবিলায় লঘু শাস্তি পাওয়া অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত ফাইল বিভিন্ন দফতরে ঘোরার পর অবশেষে বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

রোববার (৩ মে) দুপুরে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, কারাগারগু‌লো‌তে ব‌ন্দি‌দের মু‌ক্তির প্রক্রিয়া শুরু হ‌য়েছে। গতকাল শ‌নিবার (২ মে) প্রথম ধা‌পে ঢাকাসহ দে‌শের বি‌ভিন্ন কারাগার থে‌কে ১৭০ জনকে মু‌ক্তি ‌দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও ৩৮৫ জনকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

একই দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সারাদেশের লঘুদণ্ডে দণ্ডিত মুক্তির তালিকাভুক্ত দুই হাজার ৮৮৪ কয়েদির মধ্যে প্রথম দিনে সারাদেশে মোট ১৭০ জন মুক্তি পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ছয় জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। দ্বিতীয় দিনেও মুক্তি পাচ্ছেন ৩৮৫ জন।

কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ (রোববার) সন্ধ্যায় ৩৮৫ কয়েদির মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তবে প্রক্রিয়াগত জটিলতা থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। সোমবার (৪ মে) সকালেই তারা ছাড়া পাবেন কারাগার থেকে।

বন্দিদের মুক্তির জন্য তালিকা তৈরির পর একমাসেরও বেশি সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, উদ্যোগ নেওয়ার পর সারাদেশে তালিকা তৈরি হয়েছে। সেই তালিকা জমা হয়ে যাচাই-বাছাই হয়েছে। এরপর তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে মতামত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে তারপর চূড়ান্ত হয়েছে। এরপরই বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার কাজটি শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আবরার হোসেন আরও বলেন, তালিকাভুক্ত বন্দিদের মুক্তি দিতে কোনো জটিলতা নেই। ধাপে ধাপে সবাই মুক্ত হয়ে যাবেন। লঘু সাজাপ্রাপ্ত এসব কয়েদিরাও কথা দিয়েছেন, তারা আর কোনোদিন অপরাধে জড়িয়ে পড়বেন না।

কারাগারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, শুরুতে প্রায় তিন হাজার দুইশ’র মতো সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে মুক্তি দিতে তালিকা করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে কমিয়ে দুই ৮৮৪ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। বাকি বন্দিদের কার্যক্রম সন্তোষজনক না হওয়ায় তাদের বন্দির প্রক্রিয়াটি স্থগিত করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে দুই হাজার ৮৮৪ জন বন্দির সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এরপর সেই তালিকা কারা অধিদফতরে আসার পর বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। তিন শ্রেণিতে এসব বন্দির নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে প্রথমেই আসে তাদের নাম যাদের সাজা ছয় মাস থেকে একবছর। দুই বছরের সাজা হয়েছিল, একবছর বা তার বেশি সময় সাজা খাটা শেষ— তারা আসেন দ্বিতীয় ধাপে। আর শেষ শ্রেণি হিসেবে নাম আসে তাদের, যাদের সাজা খাটার সময় ২০ বছর হয়ে গেছে। অর্থাৎ এসব কয়েদি বের হয়ে গেলে আর কোনো আদালত বা বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না।

কারা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশের ৬৮টি কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা প্রায় ৩৫ হাজার। কিন্তু এসব কারাগারে অবস্থানরত বন্দির সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এসব বন্দিদের একটি অংশকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শুরুতে সে সংখ্যাটি ৫০ হাজার পর্যন্তও চিন্তা করা হয়েছিল! কিন্তু বাস্তবে সে সংখ্যা নেমে এসেছে তিন হাজারেরও নিচে।

মাত্র তিন হাজারের মতো বন্দি এই প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেলে তা সংক্রমণের ঝুঁকি কতটা কমাবে— জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা সারাবাংলাকে বলেন, অনেক কমসংখ্যক বন্দি কমানো হলেও অনেকটা স্বস্তি আসবে। কারণ একেবারে তিন হাজার বন্দি কমানোটাও অনেক বড় ব্যাপার। কারাগারগুলো কিছুটা হলেও ফাঁকা হবে। এতে বাকি যারা থাকবেন, তারাও কিছুটা খোলামেলা পরিবেশে থাকতে পারবেন। দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারবেন বন্দিরা।

করোনাভাইরাস কারাবন্দি কোভিড-১৯ টপ নিউজ বন্দিদের মুক্তি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর