কুয়েতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সাধারণ ক্ষমা পাওয়া শ্রমিকরা
৫ মে ২০২০ ০৮:৩৪
ঢাকা: কারও কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে, কেউ কাজ পরিবর্তন করেছেন— এমন নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক অবৈধ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট দেশের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পেলেও বড় অংশই অবৈধ রয়ে গেছেন। এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বেশ কিছু দেশ ওইসব শ্রমিকদের সাধারণ ক্ষমা করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরইমধ্যে কুয়েতে অবৈধ থেকে সাধারণ ক্ষমা পাওয়া কয়েক হাজার শ্রমিক রয়েছেন।
এমন কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। কিন্তু সেই ক্যাম্পে তারা মানবেতন জীবনযাপন করছেন। রোজার দিনগুলোতেও ইফতার ও সেহরিতে তারা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না।
কুয়েতের আব্দালিয়া ক্যাম্পে থাকা শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, যেসব শ্রমিক সাধারণ ক্ষমা পেয়ে দেশে ফিরে আসবে তাদের কোন জরিমানা বা শাস্তি হবে না, উল্টো তাদের বিনামূল্যে টিকিট দেওয়া হবে— এমন প্রতিশ্রুতিতে তারা আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু এখন তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে ভোগান্তিতে পড়েছেন। আব্দালিয়া ক্যাম্পে দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছে। এখানে তাদের খাবার সংকট হচ্ছে। কেউ তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন না। কবে দেশে ফিরতে পারবেন তাও কেউ বলতে পারছে না। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চান তারা।
মাঙ্গাফ ক্যাম্পের শরিফুল ইসলাম জানান, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের দুরবস্থার কথা ভিডিও রেকর্ড করে জানিয়েছেন। দিন দিন তাদের দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। মাঙ্গাফ ক্যাম্পে প্রায় দেড় হাজারের বেশি বাংলাদেশি আছেন। তাদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তারা।
জানা যায়, গত এপ্রিল মাসে অবৈধ অভিবাসীদের কুয়েত ছাড়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে কুয়েত সরকার। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এর ফলে অবৈধ অভিবাসীরা জরিমানা ছাড়াই কুয়েত ছাড়তে পারবেন। পাশাপাশি কুয়েত সরকারের খরচে আকামা ছাড়া প্রবাসীদের তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হবে।
কুয়েত সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কুয়েত ছাড়তে অবৈধদের আহ্বান জানায় কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস। অবৈধদের অবগতির জন্য কুয়েত দূতাবাসের পক্ষ থেকে দূতাবাসের ফেইসবুক পেইজে ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ পোস্ট করা হয়। আগ্রহীদের এপ্রিল ১২ থেকে ১৫-এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কুয়েত সরকারের নির্দিষ্ট অফিসে নাম নিবন্ধনের জন্য যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়। এর আওতায় সাড়ে চার হাজার বাংলাদেশি নাম নিবন্ধন করেন বলে জানা গেছে।
কুয়েতের ক্যাম্পে থাকা আরও এক বাংলাদেশির মৃত্যু
এদিকে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কুয়েতে ১ লাখ ৬০ হাজার অবৈধ অভিবাসী রয়েছে। এদের মধ্যে এবার ২০২০ এর সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছেন ২৫ হাজার অবৈধ অভিবাসী। অর্থাৎ এখনও ১ লাখ ৩৫ হাজার অবৈধ অভিবাসী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশি কত সে তথ্য জানা যায়নি।
জানা যায়, কুয়েতে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছিলেন ৮ হাজার বাংলাদেশি। এবার ২০২০ সালের সাধারণ ক্ষমায় এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি সাধারণ ক্ষমার আবেদন করেছেন। রাজধানী কুয়েত সিটির বাইরে চারটি ক্যাম্পে তাদের রাখা হয়েছে। ক্যাম্পগুলো হলো, আব্দালিয়া, সেবদি, মাঙ্গাফ ও কসর।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘কুয়েত প্রবাসীরা আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। সাধারণ ক্ষমার বিয়ষটি আমরা অবগত। তবে করোনার এই সংকটকালীন সময়ে যেহেতু ফ্লাইট চলাচল বন্ধ কাজেই হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সবার জন্যই কঠিন। তবে সাধারণ ক্ষমতায় নিবন্ধিতদের মধ্যে ১২৬ জন গত ২৭ এবং ১২১ জন গত ২৮ এপ্রিল আল জাজিরা এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। বাকিদের বিষয়েও সরকার ও দূতাবাস অবগত বলেই আমরা মনে করছি। দূতাবাস এই প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের আশ্বস্ত করতে পারে।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আটকে পড়া শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।