৬৩ জেলায় ছড়িয়েছে করোনা সংক্রমণ, দেখে নিন কোথায় কতজন
৬ মে ২০২০ ১২:২৬
ঢাকা: দেশে এ পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৯২৯ জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে আরও ৬২টি, অর্থাৎ মোট ৬৩টি জেলায় ছড়িয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে এখনো কোনো সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে দেওয়া সবশেষ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ৫ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
আইইডিসিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের কোভিড-১৯ পজিটিভের মধ্যে ঢাকা শহরেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ২২৬ জন। এর বাইরে ঢাকার অন্য উপজেলাগুলোতেও আক্রান্ত আছেন আরও ১৩১ জন। অর্থাৎ কেবল ঢাকা জেলাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৫৭ জন। যা বাংলাদেশের মোট কোভিড-১৯ সংক্রমণের ৫৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ঢাকা জেলায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১০১ জন।
ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জে। কোভিড-১৯-এর হটস্পট ঘোষণা করা এই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৫৫ জন। এই জেলায় ৪০ জন মারা গেছেন এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে গাজীপুর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫৯ জন। এই জেলায় এখনো কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি।
এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জে ২০২ জনের মধ্যে কোভিড ১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এই জেলায় একজন কোভিড ১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। নরসিংদীতে ১৬৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। এই জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এক জন। মুন্সীগঞ্জে এখন পর্যন্ত ১৬১ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চারজন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। গোপালগঞ্জে ৪৪ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। এই জেলায় এখন পর্যন্ত কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয় মারা যাননি। মাদারীপুরে ৪৮ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুইজন মারা গেছেন এখন পর্যন্ত। শরীয়তপুরে ৪৪ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। টাঙ্গাইলে ৩০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে যার মধ্যে তিনজন মারা গেছেন এখন পর্যন্ত। মানিকগঞ্জে ২৪ জনের মধ্যে কোভিদ-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি এই জেলায়। রাজবাড়িতে ২২ জন ও ফরিদপুরে ১৫ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত পাওয়া গেছে। তবে এই দুই জেলায় এখন পর্যন্ত কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ২৪.৬৬ শতাংশ ঢাকা বিভাগের।
চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১০৫ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই জেলায় এখন পর্যন্ত দুজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলায় ১১২ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। এই জেলায় এখন পর্যন্ত চারজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত দুজন মারা গেছেন এই জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে। লক্ষ্মীপুরে ৪৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং এই জেলায় এখন পর্যন্ত একজন মারা গেছেন করোনা সংক্রমিত হয়ে। কক্সবাজারে ৩৯জন ও চাঁদপুরে ২৭ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেলেও এই দুই জেলায় এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে। নোয়াখালী জেলায় ৯ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এই জেলায় এখন পর্যন্ত একজনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ফেনী জেলায় ছয় জন, বান্দরবান জেলায় চার জন ও খাগড়াছড়ি জেলায় দুইজনের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাসের উপস্থিতি।
চট্টগ্রাম বিভাগে মোট আক্রান্ত ৪১৭ যা বাংলাদেশে মোট সংক্রমণের ৪.৬৭ শতাংশ।
সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে হবিগঞ্জে ৬৯ জন ও সুনামগঞ্জে ৩৫ জনের মধ্যে কোভিড ১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি এই দুই জেলায়। তবে সিলেটে ২৪ জন ও মৌলভীবাজারে ২১ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ দুই জেলায় যথাক্রমে দুজন ও তিনজন মারা গেছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে।
সিলেট বিভাগে মোট আক্রান্ত ১৪৯ জন যা বাংলাদেশে মোট সংক্রমণের ১.৬৭ শতাংশ।
রংপুর বিভাগের মধ্যে রংপুর জেলায় ৭৫ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। এই জেলায় এখন পর্যন্ত একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দিনাজপুর জেলায় ২১ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এই জেলায় এখন পর্যন্ত একজন মারা গেছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে। এছাড়া এই বিভাগের গাইবান্ধায় ২৪ জন, নীলফামারীতে ২৫ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৯ জন, কুড়িগ্রামে ২২ জন, পঞ্চগড়ে আটজন, লালমনিরহাটে চার জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
রংপুর বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৯৮ যা বাংলাদেশে মোট সংক্রমণের ২.২২ শতাংশ।
খুলনা বিভাগের মেহেরপুরে তিনজনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। এছাড়া এই বিভাগের যশোর জেলায় ৭৪ জন, ঝিনাইদহে ২৭ জন, কুষ্টিয়া জেলায় ১৬ জন, খুলনা জেলায় ১৭ জন, নড়াইল জেলায় ১৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১০ জন, বাগেরহাটে দুইজন, মাগুরায় ৭ জন, সাতক্ষীরায় তিন জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
খুলনা বিভাগে মোট আক্রান্ত ১৭২ জন যা বাংলাদেশে মোট সংক্রমণের ১.৯৩ শতাংশ।
ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলায় ১৪৫ জন ও জামালপুর জেলায় ৬৬ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এই দুইজেলায় তিনজন করে এখন পর্যন্ত ছয়জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া নেত্রকোনায় ৫২ জন ও শেরপুরে ২৬ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
ময়মনসিংহ বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩২১ জন। মোট আক্রান্তের ৩.৬০ শতাংশ এই বিভাগের।
বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় ৩৩ জন ও পটুয়াখালীতে ২৮ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এই দুইজেলাতে একজন করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এছাড়া বরিশাল জেলায় ৪১ জন,পিরোজপুর জেলায় ৯ জন, ঝালকাঠি জেলায় ১০ জন ও ভোলা জেলায় পাঁচজনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
বরিশাল বিভাগে মোট আক্রান্ত ১২৬ জন যা বাংলাদেশে মোট সংক্রমণের ১.৩১ শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগে এখন পর্যন্ত ১২৪ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জয়পুরহাটে ৩৪ জন, পাবনায় ১৫ জন ও রাজশাহী জেলায় ২৫ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে জয়পুরহাটে একজন, পাবনায় একজন ও রাজশাহীতে দুইজন মারা গেছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে। এছাড়া বগুড়ায় ১৮ জন, নওগাঁ জেলায় ১৭ জন, নাটোরে ১০ জন, সিরাজগঞ্জ জেলায় চার জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুইজনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
রাজশাহী বিভাগে মোট ১২৫ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের ১.৪০ শতাংশ এই বিভাগের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫ মে দুপুর পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।