Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় করোনা রোগীরা


১৬ মে ২০২০ ১৫:৩৬

ঢাকা: ‘২৪ দিন হল আমার বাবা করোনায় আক্রান্ত। কিন্তু বাবার করোনা আক্রান্তের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকলে সেটি থাকার কথা আমাদের। কারণ আমরা একই বাসায় থাকি। যদিও বাবাকে রিপোর্ট আসার পর থেকে আলাদা রুমে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা যেখানে আতঙ্কিত নই, সেখানে প্রতিবেশীদের আতঙ্ক দেখে মনে হচ্ছে আমার বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে বড় অপরাধ করে ফেলেছে। তাই আমাদেরকে সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে!’

বিজ্ঞাপন

বলছিলেন রাজধানীর পল্লবীর বাসিন্দা ফারিন লামিয়া। তার ষাটোর্ধ্ব বাবার ২৪ দিন আগে করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট পান তিনি। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে তাদেরকে নিয়ে এলাকায় এক ধরনের হীনম্মন্যতার সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের মাধ্যমে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চালানো হয় তাদেরকে।

ফারিন লামিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাবা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আমাদের বাসায় কাউকে আসতেও দিচ্ছে না। যেতেও দিচ্ছে না। তাহলে আমরা পরিবারে আরও চারজন থাকি তাদের খাওয়া দাওয়া, বাবার চিকিৎসার ঔষুধপত্র এসব কে আনবে। যারা আনবে তাদেরকেও ঢুকতে দিচ্ছিল না। আবার ময়লাওয়ালারা আসছিল না। এভাবে ১০-১২ দিন ধরে ময়লাও নেয়নি বাসার। পরে আত্মীয়-স্বজনদের হেল্প নিয়ে বিষয়টির সমাধান করতে হয়েছে। এখনও মানুষজন আমাদেরকে প্যানিক মনে করে।’

একই কথা বললেন বাসাবোর অপর এক বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের একজন সহকর্মীর করোনা পজেটিভ ছিল। তাই তখন থেকেই আমি বাসায় কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করে থাকতেছিলাম। কিন্তু যেদিন আইইডিসিআর থেকে আমার করোনা পজেটিভ আসে সেদিনই এলাকাবাসী আমার রুমের দরজায় তালা মেরে দিয়েছে। এতে আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যে অন্য বাসায় কোয়ারেনটাইনে থাকবে সে সুযোগ ছিল না। ফলে একদিকে আমি সমস্যায় পড়েছি খাওয়া-দাওয়ার, অন্যদিকে আমার পরিবারের সদস্যরা পড়েছেন করোনার ঝুঁকিতে। কারণ তাদেরকেও বাসার বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। পরে থানা পুলিশের সহায়তায় বিষয়টির সমাধান করা হয়।’

শুধু লামিয়া কিংবা নাজমুল নয়। প্রতিদিন এমনি নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় করোনা আক্রান্ত রোগীরা। এতে রোগীদের প্রতি সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত না করে উল্টো তাদেরকে আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলছে বলে মনে করেন সম্প্রতি করোনায় সুস্থ হওয়া একজন গণমাধ্যম কর্মী আশিকুর রহমান রাজু।

বিজ্ঞাপন

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার কুর্মিটোলা হাসপাতালে পুরোপুরি চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি। কিন্তু বাড়ির আশপাশের লোকজন যখনি জেনেছে আমার করোনা হয়েছে, তারপর থেকে শুরু করেছে নানা প্যানিক। আমাদের বাড়ি থেকে কাউকে বের হতে দিচ্ছে না। কাউকে আসতেও দিচ্ছে না। অথচ আমি পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু সামাজিকভাবে হেয় করা এখনও বন্ধ হয়নি।’

এ বিষয়ে ডিএমপির একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার ইলিয়াছ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন কোথাও না কোথাও করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে সমস্যা খবর পাই। যখন যেখানে এ ধরনের খবর পাই, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমরা গিয়ে দেখি সমস্যা বড় কিছু নয়। মূলত মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণাই বড় সমস্যা। এটির পরিবর্তন দরকার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ অধ্যাপক সালাউদ্দিন বিপ্লব সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্তরা যদি সামাজিক হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার মত নিরাপত্তাহীনতায় থাকে, তবে তারা করোনা থেকে সুস্থ হলেও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকবে। কারণ সামাজিকভাবে হেয় হলে করোনা থেকে সুস্থ হলেও আক্রান্তরা নানা দুচিন্তায় ভুগবে। এমনকি আত্মহত্যার মতো মানসিক হীনম্মন্যতায়ও ভুগতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে এটি থেকে প্রতিকারের জন্য একটাই উপায়। আর সেটি হলো এ রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা। কারণ, অধিকাংশই মনে করে এ রোগ মানেই নিশ্চিত মৃত্যু এবং রোগীর সংস্পর্শে গেলেই আক্রান্ত হবে। কিন্তু তাদেরকে জানাতে হবে যে এ রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। মাত্র ১৪ দিনেই সুস্থ হওয়া যায় এবং সুরক্ষিত থাকলে এ রোগ সংক্রামিত হবে না। তবেই সামাজিকভাবে হেয় করার ঘটনা ঘটবে না।’

সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে আমাদের আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী সেকেন্ড লাইনে থেকে যেটুকু করণীয় সেটি শতভাগ করছে। যে কারণে এরইমধ্যে ১ হাজারের অধিক করোনা আক্রান্ত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবু তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার দায়িত্ব নয়। এখানে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস রয়েছে সামাজিকভাবে একে অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে। কিন্তু যেটুকু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সম্ভব সেটুকু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযতভাবে পালন নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

করোনা রোগী প্রতিবেশী রাজধানী সামাজিক নিরাপত্তা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর