সংরক্ষণের অভাবে জ্বালানি তেল খালাস করতে পারছে না বিপিসি
১৭ মে ২০২০ ০৮:৩০
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন চলায় উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা বন্ধ রয়েছে। পাশপাশি গণপরিবহনও চলাচল না করায় দেশে জ্বালানি তেলের বিক্রি গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। করোনা পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় মজুত ট্যাংক খালি হচ্ছে না। আর ডিপো খালি না থাকায় আমদানি করা জাহাজ ভর্তি তেল বন্দর থেকে খালাস করা যাচ্ছে না। এতে জ্বালানি তেল সংরক্ষণ নিয়ে একরকম বিপাকেই পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন চলাকালে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানা বন্ধ ও গণপরিবহন চলাচল না করায় দেশে জ্বালানি তেলের বিক্রি কমে গেছে। ডিজেল, ফার্নেস অয়েল এবং জেট ফুয়েল এই তিন ধরনের জ্বালানিরই চাহিদা ব্যাপক হারে কমেছে। ফলে বর্তমানে প্রতিটি তেলের ডিপোই ভর্তি।
জানা যায়, ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, জেট ফুয়েলসহ বর্তমানে জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে ৭ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিকটন। এই পরিস্থিতিতে আরও দেড় লাখ হাজার টন জ্বালানি তেলবাহী কয়েকটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া চলতি মাসে দুটি ও জুনে আরও দুটি তেলভর্তি জাহাজ আমদানি করা তেল নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
বিপিসির তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও পরিবহন খাতে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ মেট্রিকটন জ্বালানি তেল লাগে। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদাই প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন। সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজার টন ডিজেল বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া সবধরনের বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় জেট ফুয়েলের ব্যবহার নেমেছে শূন্যের কোঠায়। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন এভিয়েশন খাতে গড়ে দেড়শ’ থেকে আড়াইশ’ টন জেট ফুয়েল প্রয়োজন হয়ে থাকে। একইভাবে কমেছে অকটেন, পেট্রোল, কেরোসিন, ফার্নেসসহ অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের চাহিদা। এতে দেশে জ্বালানির মজুত এখন উপচে পড়ার মতো পরিস্থিতি।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনের চল্লিশ দিনে দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। এ কারণে মজুত করা তেল এখনও ট্যাংকেই রয়ে গেছে। ফলে নতুন করে জ্বালানি খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খোঁজা হচ্ছে।’
নীতিমালা অনুযায়ী মোট ৬০ দিন জ্বালানি মজুত রাখার স্বক্ষমতা রয়েছে বিপিসির। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই পরিস্থিতি সামলে উঠতে জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি তেলের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। সেক্ষেত্রে তেলের সংরক্ষণ ব্যবস্থা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। শুধু এবারের জন্যই নয়, সব সময়ের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’
রাতারাতি কোনোভাবেই জ্বালানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের সচিব মো. আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি মজুত করার যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তার সবগুলোই বাস্তবায়নাধীন। এসব প্রকল্প শেষ হতে কয়েক বছর সময় লেগে যাবে।’
এদিকে আরেক দফা সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে সরকার। সেই ছুটি শেষ হবে ২৮ মে; সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ৩০ মে পর্যন্ত। ছুটি বাড়ানো হলেও তৈরি পোশাক শিল্পসহ বেশকিছু কারখানা চালু থাকবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অনুমতি রয়েছে। সরকার আশা করছে, এতে করে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে। ফলে জ্বালানি তেল নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা দূর হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ জ্বালানি তেল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)