সাগর উত্তাল, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজ সরানোর উদ্যোগ
১৮ মে ২০২০ ১৯:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ক্ষতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরে নিজস্ব সংকেত অ্যালার্ট-থ্রি জারি করা হয়েছে। জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে বন্দর সীমানা থেকে বের করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এদিকে জেলা প্রশাসন উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে বাঁচাতে ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার স্কুল প্রস্তুত রেখেছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ২৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ভারতের উড়িষ্যা উপকূল থেকে বাংলাদেশ উপকূল পর্যন্ত সমুদ্রের আচরণ ক্রমাগত আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি সঞ্চয় করতে করতে আরও কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে। এটি আরও প্রবল হয়ে দেশের খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলের দিকে আসতে পারে। এ কারণে দেশের মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপত সংকেত ও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১৮ মে) সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় সাগর খুব উত্তাল দেখা গেছে। প্রচণ্ড ঢেউ আঁছড়ে পড়ছিল সাগর সৈকতে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস চলছিল। এছাড়া বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে আছে পণ্যবোঝাই আরও ৬৭টি জাহাজ। সেগুলো থেকে লাইটারেজ জাহাজে পণ্যখালাস অব্যাহত আছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিপদসংকেত ৬ নম্বর জারির পর আমরা আমাদের যে নিজস্ব অ্যালার্ট-থ্রি আছে সেটি অনুসরণ করতে বলেছি। জেটিতে ১৭টি জাহাজ ছিল। পণ্যখালাস শেষে দুটি চলে গেছে। এখন আছে ১৫টি জাহাজ। বর্হিনোঙ্গরে আছে ৬৭টি জাহাজ। মাদার ভ্যাসেলগুলোকে আমরা বের করে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেব। কাল (মঙ্গলবার) সকালের জোয়ারের সময়ই সেগুলো যেন বর্তমান অবস্থান থেকে সরে গভীর সাগরে চলে যায়, সেই নির্দেশনা দেওয়া হবে। অভ্যন্তরীণ লাইটারেজ জাহাজগুলোকে কর্ণফুলী নদীতে শাহ আমানত সেতু এলাকায় অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।’
এছাড়া বন্দরের জেটিতে যেসব যন্ত্রপাতি এবং ইয়ার্ডে কনটেইনার আছে সেগুলোকে সুরক্ষিত রাখার কাজ শুরু হয়েছে বলেও জাফর আলম জানিয়েছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় সোমবার বিকেলে জরুরি বৈঠক করেছে চট্টগ্রাম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপকূলীয় এলাকার মানুষের প্রাণ রক্ষায় ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র, ২ হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ হাজার ২৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে করোনা মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব মেনে অবস্থান নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জনের ব্যবস্থাপনায় ২৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং দেড় লাখ খাওয়ার স্যালাইন মজুদ আছে। এছাড়া ১৪ হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবকও প্রস্তুত আছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, নগদ টাকা, চাল, শুকনো খাবার, টিনের বান্ডিল, তাবুসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী মজুদ আছে। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে সতর্ক করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সাগরের কাছাকাছি ১০টি ওয়ার্ডে ১০টি মেডিকেল টিম, করপোরেশনের ১০টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। নগরীতেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। ফোন নম্বর: ০৩১-৬১১৫৪৫ এবং মোবাইল নম্বর: ০১৭০০৭১৬৬৯১। এছাড়া সকল উপজেলায়ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে।