Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন


১৯ মে ২০২০ ১৮:০৫

ঢাকা: আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। সে তুলনায় নতুন এডিপির আকার বাড়ছে ১২ হাজার ২২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, শতকরা হারে তা ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর এর বাইরে ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৯ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এসময় গণভবন প্রান্তে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত ছিলেন।

পরে বৈঠক শেষে এনইসি সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. নূরুল আমিন।

ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, এই প্রথমবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এনইসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে এভাবেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েই কাজ চালাতে হবে।

নতুন এডিপি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩ কেটি টাকা। তুলনামূলক বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। এছাড়া কৃষি খাতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল)  সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ব্যয় হয়েছে ৯৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৯৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা। ফলে শতাংশ হিসাবে বাস্তবায়ন কমলেও গত বছরের তুলনায় বেশি টাকা খরচ হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এম এ মান্না বলেন, চলতি অর্থবছরের হিসাব কোনো কিছুর সঙ্গেই মিলবে না। কারণ এ অর্থবছর করোনার কারণে অনেকটা সময় কাজ করা যাচ্ছে না। তবে আগামী অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ থাকবে।

খাতভিত্তিক বরাদ্দ

আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ বৃদ্ধি পাওয়া খাতগুলোর মধ্যে পরিবহন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ১৮৩  কোটি ৪৩ লাখ টাকা; স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনংসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা; কৃষি খাতে আট হাজার ৩৮২ কোটি ১২ লাখ টাকা; শিল্প খাতে তিন হাজার ৭৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা; বিদ্যুৎ খাতে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা; যোগাযোগ খাতে দুই হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা; শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ২৩ হাজার ৩৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা; গণসংযোগ খাতে ২৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা; সমাজকল্যাণ, মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন খাতে ৯৩০ কোটি টাকা; বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা; শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে ৫৭৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা; জনপ্রশাসন খাতে চার হাজার ৮৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা; পানিসম্পদ খাতে পাঁচ হাজার ৫২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা; ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ৫১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা; পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ৫৫৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে বরাদ্দ রয়েছে এক হাজার ৮৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে মন্ত্রণালয়সহ সরকারি দফতরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ— ৩১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, যা মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে, ২৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়া পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৭ হাজার ৩৮৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৪৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১০ হাজার ৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৯ হাজার ৮৬৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৪০৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, সেতু বিভাগ সাত হাজার ৯৭২ কোটি টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ছয় হাজার ২৬৯ কোটি  ৪২ লাখ টাকা। অন্যদিকে এডিপিতে সর্বনিম্ন বরাদ্দ পেয়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়, যার পরিমাণ ৮৩ লাখ টাকা।

মেগা ৭ প্রকল্পে বরাদ্দ

পদ্মাসেতু প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পে চার হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, রূপপুর পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে তিন হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে ৩৫০ কোটি টাকা ও মাতারবাড়ী আল্ট্রাসুপার  ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে তিন হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছাকাছি ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা।

এডিপিতে যত প্রকল্প

আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৬৭৭টি। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প আছে ৮৯টি। এছাড়া বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩৪৭টি। বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৯৬টি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপোর (পিপিপি) প্রকল্প রয়েছে ৬১টি। সম্ভাব্য সমাপ্য প্রকল্প ৩৮২টি। মেয়াদোতীর্ণ ৩৪৩টি প্রকল্পও রয়েছে এডিপিতে।

২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি এডিপি এডিপি অনেুমোদন এনইসি বৈঠক জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর