ঝিনাইদহে আম্পান, পশ্চিমবঙ্গে ১২ জনের মৃত্যু
২১ মে ২০২০ ০২:৩০
বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা এলাকার পর এবার ঝিনাইদহ এলাকায় অবস্থান করছেন ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগের চেয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। তারপরও এর কেন্দ্র থেকে ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে এখনো বাতাসের গতিবেগ ১৬০ কিলোমিটার, যা ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ অংশটি এই কেন্দ্রের মধ্যে না থাকায় এখানে গতিবেশ ঘণ্টায় একশ কিলোমিটারের আশপাশে রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বেগ কিছুটা কমছেও। তবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
তবে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও দীঘার পর আম্পান তাণ্ডব চালিয়েছে কলকাতাসহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলির মতো জেলাগুলোতেও। ভারতের আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, উপকূলের সাগরদ্বীপ ও দীঘায় আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬০ কিলোমিটার থাকলেও কলকাতা পৌঁছাতে পৌঁছাতে তা ১৩৩ কিলোমিটারে নেমে আসে। তাতেও লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাই। এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন- ‘দুর্বল’ আম্পানের শক্তি দেখছে খুলনা-সাতক্ষীরা
বুধবার (২০ মে) দিবাগত রাত ১২টায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর থেকে ৩৭ নম্বর বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা ও সংলগ্ন এলাকা থেকে আরও উত্তরে অগ্রসর হয়ে রাত ১২টা নাগাদ এটি ঝিনাইদহ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আম্পানের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। সাগরও উত্তাল থাকবে।
আম্পান আপডেট
বুলেটিনে আগের মতোই মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং এর আশপাশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইরকমভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর এবং আশপাশের জেলাগুলোকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং এদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর এলাকার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আরও পড়ুন- আম্পান: মূল ঝড়টি বেরিয়ে যাবে বাংলাদেশ ঘেঁষে!
ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আম্পান ঘূর্ণিঝড়টি বেশ বড় একটি ঝড়। এর কেন্দ্রের ব্যাসেই এক থেকে দেড়শ কিলোমিটার। আর ঝড়টি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার ব্যাসের। ফলে ঝড়ের মূল অংশ পশ্চিমবঙ্গে আঘাত করলেও বাংলাদেশ অংশে যে অংশটি ঢুকে পড়েছে, তার প্রভাব কম নয়।
আবহাওয়া অফিস ও আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ঝিনাইদহের পর মাগুরা, রাজবাড়ী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ হয়ে জামালপুরের দিকে বেরিয়ে যেতে পারে। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে এটি দ্রুত আরও দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। সেক্ষেত্রে ভোর বা সকাল নাগাদ রাজশাহী ও এর আশপাশের এলাকায় আম্পানের প্রভাবে নিম্নচাপ দেখা দিতে পারে।
আম্পান: লাইভ আপডেট
এদিকে, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ১০ থেকে ১২ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজেই বলছেন, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা, নামখানা, বাসন্তি, কুলতলী এবং কলকাতা শহরের কাছে বারুইপুর ও সোনারপুর এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে আম্পান। সুন্দরবন ও সাগরদ্বীপেও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে।
মমতা বলেন, কত বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ ভেঙেছে, তার কোনো হিসাব নেই। আম্পানের কারণে গোটা ধ্বংসের চিত্র বুঝতে ১০ থেকে ১২ দিন লেগে যাবে।
আরও পড়ুন-
আম্পানের প্রভাব: ভোলায় গাছচাপায় বৃদ্ধের মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় আম্পান: ১৯ জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের ছুটি বাতিল
বলেশ্বরের ভাঙনে হুমকিতে বেড়িবাঁধ, আম্পানের প্রভাবে বেড়েছে জোয়ার
সাইক্লোন সেল্টারে লোকজনকে আনতে গিয়ে নৌকাডুবি, টিম লিডার নিখোঁজ