Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে প্রথমবারের মতো একদিনে ২০০৬ টেস্ট করলো এনআইএলএমআরসি


২৪ মে ২০২০ ১২:৫১

ঢাকা: দেশে প্রথম বারের মতো আরটি পিসিআর ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হলো। নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তকরণের জন্যে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক এই নমুনা পরীক্ষা করা হয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল মেডিসিনে (এনআইএলএমআরসি)। দেশে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরে বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক টেস্ট করেছে তাদের ল্যাবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৩ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল মেডিসিনে (এনআইএলএমআরসি) দুই হাজার ছয়টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

প্রতিষ্ঠানটির সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফা আকরাম বর্ণা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠানটিতে আমিই একমাত্র ভাইরোলজিস্ট ছিলাম। আমার সঙ্গে আরেকজনকে নিয়ে শুরু আমাদের পথচলা। পথচলা শব্দটা আসলে বললাম কারণ আসলে আমরা কেউ জানি না এই পরিস্থিতি আমাদের কতদিন কাজ করে যেতে হবে। দেশের জন্য কিছু করতে হবে এই তাগিদেই আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেই পথচলার শুরুর দিকে আমরা দুইজনেই কাজ করে যাই। তখনও আমাদের কোনো শিফটিং ছিল না। পরবর্তীতে যখন নমুনা পাঠানোর পরিমান বেড়ে যায় তখন আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগের পরে এখানে তিন জন ভাইরোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। আমাদের পরিচালক স্যার তখন এই প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি, ক্লিনিকাল প্যাথলজি সহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদেরও আমাদের সঙ্গে যুক্ত করতে বললেন। বর্তমানে আমরা একটা টিমওয়ার্কের মাধ্যমে শিফটিং করে কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি দিনের নমুনা দিনেই পরীক্ষা করে ফেলার জন্য। আর এ জন্য আসলে আমি ধন্যবাদ দেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের সকলের আন্তরিকতার প্রতি। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি সম্ভব হয় তখন আমরা রাতের শিফটেও কাজ করে যাই। বর্তমানে আমাদের এখানে তিনটা পিসিআর মেশিন চালু আছে। নতুন আরেকটি মেশিনে খুব দ্রুত কাজ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’

বিজ্ঞাপন

ডা. বর্ণা বলেন, ‘প্রথমদিকে আমাদের এখানে গাজীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জের পাশাপাশি শের-এ-বাংলা নগরে অবস্থিত বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নমুনা আসতো। বর্তমানে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট থেকে আমাদের এখানে নমুনা আসছে প্রতিদিনই। সেসব জায়গায় একটা করে পিসিআর মেশিন থাকায় নমুনা জমে থাকার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। আর তাই আমাদের কাছে সেইসব নমুনাগুলো চলে আসে। আর এভাবে প্রায় প্রতিদিনই এক থেকে দেড় হাজার নমুনা চলে আসে। ‘

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামসুজ্জামান তুষার সারাবাংলাকে বলেন, ‘একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষা এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সবার আন্তরিকতার কারণে। এখানে যারা কাজ করছেন তারা আসলে সবাই দেশের জন্য কিছু করার তাগাদাটা সবসময়েই অনুভব করে। এটা এমন না যে শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করেই শেষ। দেশের জন্য বাড়তি কিছু দেওয়ার যে মনোভাব ও সদিচ্ছা তাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের টিমওয়ার্ককে সুসংহত করেছে। আমাদের যে জনবল আছে তা নিয়ে আমরা সুসংগঠিত ভাবে কাজ করে যেতে পারছি।’

‘এই প্রতিষ্ঠানের কার্যপরিধির মধ্যে একটি হলো, দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ের ল্যাবরেটরি মেডিসিন সম্পর্কিত জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। সেই ক্ষমতা আছে এই প্রতিষ্ঠানের। মূলত এ জন্যেই এই প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ আসার আগে এখানে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৫ জনের অধিক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অধিভুক্ত হয়। আমার এখানে তারা প্রশিক্ষণ নিতে থাকে। এর মধ্যেই চলে আসে কোভিড-১৯। ৩১ মার্চ আমরা নমুনা পরীক্ষা করার অনুমতি পাই। ২ এপ্রিল থেকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নমুনা পরীক্ষা করা শুরু করি’ বলেন ডা. এ কে এম শামসুজ্জামান তুষার।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে পুরো সিলেট বিভাগের নমুনাগুলো আসে। রাজশাহী বিভাগের চারটা জেলার নমুনা আসে নিয়মিত। যখন অন্যান্য জেলার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না তখন সেগুলোও আমাদের কাছে আসে। আর ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারি হাসপাতাল থেকে নমুনা আসে। একই সঙ্গে ব্র্যাক ও জেকেজি হেলথকেয়ারের বুথের নমুনাগুলো আসে। বর্তমানে তিনটা মেশিনে আমরা কাজ করছি। আর সেখানেই আমরা আজকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম হলাম। ভবিষ্যতে আমাদের যে নতুন মেশিনটা আছে সেটার কাজ শুরু হলে এই সংখ্যা আমরা আরও বাড়াতে পারব। এইক্ষেত্রে আমরা অটোমেশনের কথা ভাবছি। সেক্ষেত্রে আরও কিছু সময় কমে আসতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকেও আমাদের সাহায্য করা হচ্ছে। নতুন মেশিনটার সক্ষমতাও বেশি। যদি সবকিছু ঠিকঠাকমতো থাকে তবে সেই মেশিনে আমরা একসঙ্গে ৩৬০টা নমুনা পরীক্ষা করতে পারবো একসঙ্গে। সেই ক্ষেত্রে আমরা আরও এক থেকে দেড় হাজার নমুনা বেশি পরীক্ষা করতে পারব।’

অধ্যাপক তুষার বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যে কিট তা আমাদের প্রতিষ্ঠানের বাজেটেই কেনা ছিল। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকেও সাহায্য করা হয়। কারণ আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আসলে সবসময়ে কিট কেনা সম্ভব নাও হতে পারে। বর্তমানে কিট নিয়ে কোনো সংকট নাই এখন পর্যন্ত। তবে পরীক্ষার হার যেভাবে বাড়ছে তাতে এই কিট সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকা জরুরি। সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সমস্যা হবে বলে মনে করি না।’

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে যাত্রা শুরুর পরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কীভাবে দেশের জন্য কাজ করে যেতে পারি সেটা নিয়েই আমরা কাজ শুরু করি। তখন আমাদের পিসিআর মেশিন সেটাপের কাজও চলছিল। আমি নিজে একজন মাইক্রোবায়োলজীর অধ্যাপক। আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ছিলাম আমি। এ ছাড়াও আইইডিসিআর’এ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পদেও দায়িত্ব পালন করেছি। তাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আমি কাজ শুরু করেছিলাম। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে আমাদেরও নমুনা পরীক্ষা করতে হবে এটা আমি জানতাম। আর তাই আমার পিসিআর ল্যাবও যেনো চালু থাকে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এই প্রস্তুতি যখন চলছিল তখন আমি মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করি যে আমরা প্রস্তুত নমুনা পরীক্ষার জন্য। আমাকে মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয়। সেখানেও আমি জানিয়ে আসি আমাদের প্রস্তুতির বিষয়ে। সেই হিসেবে মন্ত্রণালয় আমাকে ৩১ মার্চ অনুমোদন দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেখানে ল্যাব স্থাপন করেছি সেই স্থান তো পিডব্লিউডি নির্মাণ করে দিবে। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে তাদেরও অনেক কাজ এখানে অসম্পূর্ণ ছিল। যেগুলো খুব দ্রুততার সঙ্গে আমরা লোকাল ফান্ড দিয়ে সম্পন্ন করাই। আমাদের ভিআরএফ এসি পিডব্লিউডি চালু করে দিতে পারে নাই। ইলেক্টনিক লাইনের কাজও তারা শেষ করতে পারে নাই। এগুলো আমি উদ্যোগ নিয়ে কাজ শেষ করাই। সেক্ষেত্রে পাঁচটা স্প্লিট এসি যোগাড় করি পাঁচটা। ওয়েল্ডিংয়ের কাজও জরুরি ভিত্তিতে করাই। ল্যাবের জন্য একটা ইউআরসি রুম করতে হয় যাতে বাইরের বাতাস ভেতরে আসতে না পারে- এমন অনেক টুকটাক কাজ বাকি ছিল। সেগুলো নিজে উদ্যোগ নিয়ে শেষ করাই। এই সময়ে আমি আমাদের যে জনবল আছে তাদের বুস্ট আপ করছিলাম। তাদের প্রশিক্ষণের মাঝেই বলতাম যে কোনো সময়ে আমাদের ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার কাজ শুরু হতে পারে বলে। তারাও প্রস্তুত ছিল।’

ডা. পলাশ বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে আমাদের এখানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাই সবার জন্য। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে অনলাইনেও প্রশিক্ষণ করিয়েছি। আগে থেকেই আমাদের এখানে ভাইরোলজিস্ট ছিল। মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি আমরা সেরে নিয়েছিলাম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে আমাদের ল্যাব ভিজিট করা হয়। তারা গিয়ে মহাপরিচালক মহোদয়কে জানিয়েছে। সকল ফরমালিটি শেষ করে আমাদের দেশের অন্যান্য ল্যাবের সঙ্গে ৩১ মার্চ অনুমোদন দেওয়া হয় নমুনা পরীক্ষার জন্য।’

ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে আমাদের এখানে আরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি বলেও জানান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামসুজ্জামান তুষার।

প্রতিষ্ঠানটিতে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৫৪১ টি নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। যা দেশের অন্যান্য সকল ল্যাবের চাইতে বেশি। আইইডিসিআরে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২২,১৩৪ টি ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২০ হাজার ৯৮০ টি। এছাড়াও আইসিডিডিআরবিতে ১২ হাজার ৪৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এখন পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের কার্যক্রম চালু করতে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সব ডায়াগনস্টিক ও ল্যাবরেটরির গুণগত মান নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য এখানে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ থাকবে। এছাড়া নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে দেশে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সেবামূল্য নির্ধারিত থাকলেও, বেসরকারি পর্যায়ে তেমনটি ছিল না। ফলে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ও ল্যাবরেটরিগুলো তাদের ইচ্ছামতো সেবামূল্য নিয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যায়। তাছাড়া প্রায়ই দেখা যায়, অনেক প্রতিষ্ঠান অধিক সেবামূল্য নিয়েও মানহীন যন্ত্রপাতি ও রিএজেন্ট দিয়ে পরীক্ষা করে থাকে। এতে পরীক্ষার ফল সঠিক না হওয়ায় রোগীদের বিপাকে পড়তে হয়। এমনকি একজন রোগীর একই পরীক্ষার ফল একেক ল্যাবে একেক রকম পাওয়া যায়। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ল্যাবগুলোর মান যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই সামগ্রিক দিক চিন্তা করেই এ ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এছাড়াও ল্যাবরেটরি মেডিসিনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকারীর ভূমিকা পালন করার জন্যেও এই প্রতিষ্টানটি জাতীয়ভাবে রেফারেন্স ল্যাবরেটরি হিসেবে স্থাপন করা হয়।

এনআইএলএমআরসি করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর