ব্যবসা টেকাতে হোটেল-রিসোর্ট খুলতে চান মালিকরা
২৭ মে ২০২০ ০৯:২৫
ঢাকা: প্রতিবছরই ঈদে সারাদেশে হোটেল-রিসোর্টের রমরমা ব্যবসা চলে। এ সময় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে থাকে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। চলে ধুন্দমার বেচাকেনা। আগে থেকেই বুকিং হয়ে যায় হোটেল রুম। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন! পৃথিবীজুড়ে চলা করোনা মহামারির প্রভাবে হোটেলগুলো বন্ধ, পর্যটন কেন্দ্রে নেই মানুষের আনাগোনা, নেই কোনো বেচাকেনা। এতে বেকার হয়ে পড়ছেন লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারি। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সীমিত পরিসরে হলেও হোটেল-রিসোর্টগুলো খুলতে চান মালিকরা।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের হিসেবে, শুধু রমজান ও ঈদ মৌসুমে দেশের হোটেল ট্যুরিজম খাত ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছে। আর ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) বলছে, অ্যাভিয়েশন খাত ছাড়া শুধু হোটেল-রিসোর্টসহ পর্যটনের বিভিন্ন ব্যবসায় এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
কক্সবাজারের সায়মন বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান রুহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীঘদিন বন্দিদশার পর অনেকেই ঈদের পরে দেশের ভেতরে হলেও কোথায় বেড়াতে যেতে চাচ্ছেন। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য স্বংস্থার গাইড লাইন মেনে হোটেল খুলে দিলে আমরা ব্যবসাটা টিকিয়ে রাখতে পারব। অন্যথায় হোটেল কর্মচারিদের বেতন চালিয়ে নেওয়া যাবে না।’
তাদের মালিকানাধীন সৈকত লাগোয়া সায়মন বিচ রিসোর্ট ছাড়াও চট্টগ্রামে একটি হোটেল ও ঢাকায় তিনটি সিনেপ্লেক্স রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি নির্দেশ আসার আগে থেকেই তিনি এগুলো বন্ধ রেখেছিলেন।
ঢাকায় বিভিন্ন হোটেল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে রয়েছেন শাখাওয়াত হোসেন। তিনি ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী (সিইও)। তাদের ওয়েস্টিন হোটেলের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের ৬২৫ জন স্টাফ। সবার পূর্ণ বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যারা বেশি বেতন পান তারা এখন নিজেদের বেতন অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে চলছেন।’
ইউনিক গ্রুপ সিইও শাখাওয়াত জানান, তাদের ৯৯ ভাগ হোটেল অতিথি বিদেশি। গেল দুইমাসে কোন বিদেশি পর্যটক আসেননি। সর্বশেষ তিন থেকে চারজন তাদের হোটেলে ছিলেন যারা লকডাউনের কারণে আটকে ছিলেন। তারাও চলে যাবেন।
তিনি আরও জানান, বাকি হোটেলগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন আটকে আছে। গুলশানে নতুন চালু হওয়া আরেকটি হোটেল লকডডাউন অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে তারকা হোটেলগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা) পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চলতি বছরের মে পর্যন্ত তিন মাসে ৫০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির ধারণা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) জাবেদ আহমেদ জানান, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসা হবে না। তার মানে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অবস্থার মধ্যেই চলতে হবে। তাই এ বছরটা পর্যটন শিল্প ও এ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানকে কোনোরকম টিকে থাকবে হবে। ব্যবসা হবে ২০২১ সালে। এজন্য সরকারের এ সংশ্লিষ্ট সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে তারা একাধিক বৈঠক করে সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাবনা দিচ্ছেন। যাতে সফট লোন বা দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সহযোগিতা তারা পান।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজে পর্যটন শিল্প রয়েছে। এমনকি যেসব পর্যটন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকের যোগাযোগ কম তারাও যাতে প্রণোদনা পান সেটিও পর্যটন বোর্ড বিবেচনা করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালাটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দেব বলেন, কোভিডের প্রভাবে সারাবিশ্বে সবচেয় বেশি প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পে। ২০০০ সালে সার্স ভাইরাসে পর্যটনে যে ক্ষতি হয়েছিল এবার করোনাতে তারও ১০ গুণ বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।