করোনাভাইরাসের রাজনীতিকরণে ব্যস্ত সরকার: রিজভী
২৮ মে ২০২০ ১৬:১৯
ঢাকা: সরকার করোনাভাইরাসের রাজনীতিকরণে ব্যস্ত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (২৮ মে) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘ভাইরাসের রাজনীতিকরণে ব্যস্ত সরকার। তারা বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থতা ঢাকতেই মানবজীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ একাই নয়, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বিশ্বের প্রতিটি দেশই বিপর্যস্ত। তবে যেসব দেশ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবকে সাধারণ সংকট ভেবে কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেছিল তাদেরকে নজিরবিহীন পরিস্থিতি মোকবিলা করতে হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের! আমরা দেখেও কোনো কিছু শিখেছি বলে মনে হচ্ছে না।‘
তিনি বলেন, ‘গত একদশকে প্রতিটি ঘটনায় বিরোধী দল ও মতের মানুষের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে ক্ষমতাসীনরা পরিস্থিতির ওপর জবরদস্তিমূলক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এবারও মনে হয় তারা একই কায়দায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারাবিশ্ব যেখানে ‘লকডাউন’, ‘আইসোলেশন’ কিংবা ‘কোয়ারেন্টাইন’-এর মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেখানে বাংলাদেশ ‘সাধারণ ছুটি’র নামে, সাত দিন কিংবা ১০ দিন করে ছুটি বাড়িয়ে বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। আর এখন আবার অফিস আদালত খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়াবহ মহামারিতে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবী। বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশও যেন করোনার ছোঁবলে নীল হয়ে উঠেছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দেশে দেশে নেওয়া হয়েছে লকডাউন, কারফিউ-জরুরি অবস্থাসহ নানা কঠোর পদক্ষেপ। আর বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশেই ‘ছুটি’ দিয়ে কথিত লকডাউন বলে প্রচার করে আসছে।’
বিশ্বের অন্য দেশগুলো ‘ছুটি’ শব্দটি ব্যবহার করেনি দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশ ভারতও ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করেছে। মুসলিম দেশগুলো কারফিউ দিয়েছে। ‘ছুটি’ শব্দটি কেন দেওয়া হলো, তা নিয়ে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিস্ময় রয়েছে।‘
‘ছুটি’ শব্দটি প্রয়োগ করে শৈথল্য অপসারণ করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘গার্মেন্টস, দোকান পাট, হাটবাজার, ব্যাংক-বিমা, সরকারি অফিস-আদালতের ছুটি না বাড়ানোর পাশাপাশি বাস, রেল ও লঞ্চের মতো গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সরকার। অথচ প্রতিটি বোধ সম্পন্ন মানুষ আশা করেছিল যেভাবে প্রতিদিন ভয়াবহ বিপর্যয়ে ধাবিত হচ্ছে করোনা মহামারি, তাতে সরকার হয়তো কঠোর পদক্ষেপ নেবে। এখনই উপযুক্ত সময়ই ছিল কিছুদিনের জন্য হার্ড-লকডাউন কার্যকর করে ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টেস্টের আওতায় এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।’
‘কিন্তু সরকার সেই পথে না গিয়ে হাঁটছে মৃত্যুর মিছিল বাড়ানোর পথে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অধিক সংখ্যক টেস্ট এবং কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আনার পর শিথিল করছে আর এদেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ভীতিকর মাত্রায় প্রতিটি মানুষ যখন আতংকিত-উৎকণ্ঠিত তখন ছুটি নামের তথাকথিত লকডাউন তুলে নেওয়ার পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার কি প্রমাণ করতে চায় ‘করোনার থেকে তারা শক্তিশালী’?— প্রশ্ন রিজভীর।
তিনি বলেন, ‘৩১ মে থেকে ছুটি প্রত্যাহার করে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুগহ্বরের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেরা নিরাপদ দুরত্বে থেকে নিজেদের বেশ শক্তিশালী মনে করা যায়। সরকারের মন্ত্রী-নেতারা হঠকারী ও অবিবেচক সিদ্ধান্ত দিতেই পারঙ্গম। ছুটি প্রত্যাহারের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। এটা সরকারের সবচাইতে বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’
তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময় হয়তো আফসোস করারও সুযোগ থাকবে না। টাকার জন্যই জীবন, মানুষের জীবনের দরকার নেই—এটাই সরকারের নীতি। মানুষকে বিপদে ফেলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা বার্তার প্রতিও সরকারের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। এই ছুটি প্রত্যাহারের জন্য করোনা ভাইরাসে প্রাণহানীর সকল দায় সরকারকেই নিতে হবে।’